Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা অপরিবর্তিত

আরপিও সংশোধনে ইসির কাজ শুরু

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের কাজে হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন পর্যন্ত আরপিওর খসড়া সংশোধনীতে ৩৪টি ধারায় কমবেশি সংশোধন করা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। তবে এবারো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে জানা গেছে।
গত রোববার আইন সংস্কার কমিটির এক সভায় আরপিওর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের কাজে হাত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন পর্যন্ত আরপিওর খসড়া সংশোধনীতে ৩৪টি ধারায় কমবেশি সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এবারো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে এ কমিটি আরেকটি সভা করে এটি চূড়ান্ত করবে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, সীমানা নির্ধারণে বিদ্যমান আইনকেই অনুসরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। কারণ নতুন আইন সংসদে পাস হয়েও হালনাগাদ ভোটার তালিকা হাতে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রস্তাবিত নতুন আইনে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যাকেও বিবেচনায় নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০১৮-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের আয়োজন করতে হলে নতুন আইনে সকল সীমানা পুনর্বিন্যাসের সুযোগ নেই তবে ৫০টি আসনের সীমানা সংশোধন করা হচ্ছে। তাই বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে ছিটমহল এলাকাগুলোসহ প্রশাসনিক পরিবর্তনগুলোও সমন্বয় করে ইসি থেকে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
ইসির সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১১টি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের দাবি জানালেও ২৫টি দল কোনো না কোনো পদ্ধতিতে ভোটের মাঠে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিল। সুশীলসমাজের প্রতিনিধিসহ অন্য অংশীজনের অনেকেই সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দিলেও তারা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার কথা বলেননি। ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সব ক’টি সংসদ নির্বাচনের আগেই সেনা মোতায়েন করা হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এবারও বিএনপির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, কোনোভাবেই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া যাবে না বলে আসছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে এই আইনের সংশোধনী চান সরকারি চাকরিজীবীরা। এ জন্য বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা (উপধারা-ঝ ও এইচ) বিলোপে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আবেদন করেছেন তারা। আমলাদের অনুরোধে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। আরপিও সংশোধন-সংক্রান্ত কমিটির আহŸায়ক ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ইনকিলাবকে বলেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু আগাম ভোটিং ও নির্বাচনী তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা- এ দু’টি বিষয়ে নতুন কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আরপিওর খসড়া সংশোধনীতে ৩৪টি ধারায় কমবেশি সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এবারো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। সরকারি চাকরিজীবীদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি। কাজী রকীবউদ্দিন আহমদ কমিশনের সময়ে এই ইস্যুটি উত্থাপন হয়েছিল। কিন্তু তারা সেটি সংশোধন করেননি। এবার আইন সংস্কার কমিটিতে লিখিত প্রস্তাব এলে এবং আলোচনা হলে এটি অন্য আইনের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি এবং ভোটকক্ষ থেকে বের হওয়া ও ফিরে আসার পর নির্দিষ্ট ফরমে স্বাক্ষর করার বিধান প্রবর্তন রাখা নির্বাচন কাজে নিয়োজিত ১০ লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আগাম ভোটগ্রহণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা ইভিএম এ ভোটগ্রহণ নির্বাচনে কাজে নিয়োজিতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলির ক্ষমতা অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজ করার লক্ষ্যে ১ শতাংশ ভোটারের পরিবর্তে ১০০০ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেয়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাজা বাড়িয়ে সর্বনিম্ন এক বছরের পরিবর্তে তিন বছর এবং সর্বোচ্চ ৫ বছরের পরিবর্তে ৭ বছর করার বিধান যোগ করা নির্বাচনী অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে জানিয়ে দেয়া জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা, নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে খোঁজ নিতে তৃতীয় চোখ নিয়োগ রাখার বিধান যুক্তেরও প্রস্তাব করা হচ্ছে। রোডম্যাপে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটিকে ডিসেম্বরের মধ্যে আইন সংস্কারের প্রাসঙ্গিক খসড়া তৈরি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী কাজ করতে না পারলেও আইন পাসের জন্য এখনও পর্যাপ্ত সময় রয়েছে বলে মনে করছে কমিটি। এদিকে আরপিও সংশোধনে ইসিকে মতামত দিয়েছেন ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এর আগে সংশোধনের জন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামত চেয়ে গত বছর ২৮ মে চিঠি পাঠায় ইসি। আইনটি যুগোপযোগী করতে কোনো অনুচ্ছেদ সংশোধন-সংযোজন-বিয়োজন করা প্রয়োজন কি না যাচাই করে মত দেয়ার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়। ইসি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে প্রথমে কমিশন সভায় উত্থাপন করা হবে। পরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ এবং গণমাধ্যমের সাথে সংলাপে বসবে ইসি। এর পরই আরপিও সংস্কারের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হবে। মাঠ কর্মকর্তাদের পাঠানো মতগুলোয় বলা হয়, আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির কর্মকর্তাদের সীমিত পরিসরে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান, প্রার্থীদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ণয়ে পুনরায় ‘না’ ভোটের বিধান বহাল, নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার এবং ভিডিপির পাশাপাশি সেনাবাহিনী বহাল, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের বিধান সংক্রান্ত ধারা বাতিল এবং সংসদ নির্বাচনে ডিসিদের বদলে ইসির অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি ছেড়ে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করতে আইনের ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করেননি একজন কর্মকর্তাও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ