Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প-অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে

ভোলার গ্যাস

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে দেশের দক্ষিন-দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার শিল্প এবং বানিজ্য সহ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যপক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযূক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ফলে যমুনা সেতু অতিক্রম করে কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা হয়ে বাগেরহাট পর্যন্ত অগ্রসরমান জাতীয় গ্যাস গ্রীড লাইনে ভোলার গ্যাস সংযূক্ত করার দীর্ঘদিনের গনদাবী পুরনের উজ্জল সম্ভবনও দেখা দিয়েছে। এতেকরে ভোলার পাশাপাশি বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও খুলনার সরকারী-বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে। ফলে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বায় তিন-চতুর্থাংশ হ্রাসসহ তা জাতীয় গ্রীডে সরবরাহও সম্ভব হবে। মোংলা ইপিজেড আরো কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। গ্যাস সরবারহ শুরু হলে বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যমান ওষুধ, সিমেন্ট ও সুতাকলগুলোর উৎপাদন ব্যয়ও যথেষ্ঠ হ্রাস পাবে।
বর্তমানে ভোলার গ্যাসের সাহায্যে সেখানে পিডিবি’র ২২৫ মেগাওয়াটের একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন ছাড়াও ৩৫ মেগাওয়াটের একটি রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন চলমান রয়েছে। বরিশালে পিডিবি’র ডিজেল চালিত ২০ মেগাওয়াটের ২টি গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশনের প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ টাকা। এ ছাড়াও সামিট পাওয়ারের ১২০ মেগাওয়াটের ১টি পাওয়ার স্টেশন রয়েছে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জে ১০৫ মেগাওয়াটের একটি ডিজেল পাওয়ার স্টেশন এবং খুলনায় ৫ শতাধীক মেগাওয়াটের সরকারী-বেসরকারী একাধীক পাওয়ার স্টেশনও ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত। গ্যাস সংযোগ পেলে এসব পাওয়ার স্টেশনে উৎপাদন ব্যায় তিন-চত’র্থাংশ হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীগন।
বরিশাল-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট-মোংলা-খুলনা হয়ে জাতীয় গ্রীডে ভোলার গ্যাস সরবারহ শুরু হলে ‘মোংলা ইপিজেড’এ নতুন প্রান সঞ্চারের পাশাপাশি ঝিমিয়ে পড়া খুলনা শিল্পাঞ্চলকেও নতুনভাবে উজ্জিবীত করতে পারে। বরিশাল শিল্প ও বনিক সমিতির সভাপতি সাঈদুর রহমান রিন্টু ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযূক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবকে স্বাগত জানিয়ে যতদ্রুত সম্ভব পরিপূর্ণ সমিক্ষা পরিচালনাসহ প্রকল্প প্রনয়ন এবং তা বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোলায় আবিস্কৃত ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপটিতে যে প্রায় ৬শ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রাথমিক ‘মজুদ ধারনা নিশ্চিত’ হওয়া গেছে, তার আনুমানিক মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশী। বাপেক্স কর্মকর্তাদের মতে, ভোলায় আবিস্কৃত ‘শাহবাজপুর’ ‘শাহবাজপুর ইস্ট-১’ ও ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপগুলো মিলিয়ে মোট গ্যাসের মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৫০০ বিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশী। যার মূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করতে পারে।
কিন্তু ভোলার গ্যাসের পরিপূর্ণ ব্যাবহার সম্পর্কে কোন সুষ্ঠু নীতিমালা প্রনয়নসহ কর্মপরিকল্পনা গ্রহন না করায় বিগত ২২ বছর জাতীয় অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখেনি। দীর্ঘ দিন ধরেই দক্ষিনাঞ্চলের সাধারন মানুষ এ বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক গ্যাস দক্ষিনাঞ্চলসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর দাবী করে আসলেও এক অদৃশ্য শক্তির নেতিবাচক মনোভাবে তা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ভোলায় আরো বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে এ গ্যাসের কার্যকরি ব্যাবহার নিশ্চিত করনের কথাও বলেছেন।
উরেøখ্য, ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে বাপেক্স-এর প্রকৌশলীগন ভোলার শাহবাজপুরে প্রথমবারের মত পরিক্ষামূলক কুপ খনন করে গ্যাসের সন্ধান লাভ করেন। সে থেকে শাহবাজপুর ও এর আশপাশে মোট ৪টি কুপ খনন করে প্রতিটিতেই গ্যাসের বিপুল মজুদ পাওয়া গেছে। এক নম্বর পরিক্ষামূলক কুপ খননের আগে ভোলার ২৬৬ লাইন কিলোমিটার এলাকায় দ্বি-মাত্রিক এবং ২০১৬ সালে দ্বীপ জেলার ৬ শ’ লাইন কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা করে বাপেক্স। এসব জরিপের ধারাবাহিকতায়ই গত বছর টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামে ‘শাহবাজপুর ইষ্ট-১’নামে ৫ নম্বর কুপ খননের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরের প্রথম সদর উপজেলার ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপ খনন শুরু হয়। গত শণিবার কুপটির ৩ হাজার ৩৪৮ মিটার গভীরে গ্যাসের বিশাল মজুদের সন্ধান মেলার পরে পরিক্ষামূলকভাবে তা সাময়িক উত্তোলন নিশ্চিত করা হয়।
২০০৯-এর ১১মে সর্বপ্রথম ভোলার শাহবাজপুর কুপ থেকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। দুটি উৎপাদন কুপ থেকে দৈনিক গড়ে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলমান রয়েছে। দুটি কুপে প্রতিদিন উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোলার শাহবাজপুর কুপ থেকে মাত্র ৩৫ বিএসএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে।
গত অক্টোবরে ভোলার মুলাইপত্তনে ‘শাহবাজপুর-ইষ্ট ১’ কুপে ৭শ বিলিয়ন বা ৭০ হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাস আবিস্কারের ফলে ভোলায় গ্যাস মজুদ আরো সমৃদ্ধ হয়। গত অক্টোবরে মুলাইপত্তনে আবিস্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তরে সদর উপজেলার ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপে গত শণিবার নতুন করে গ্যাসের সন্ধান মেলায় খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে ভোলা বিশেষ অবস্থান লাভ করে। খনিজ বিশেষজ্ঞর মতে ভোলা অনেকটা গ্যাসের ওপর ভাসছে। তবে তা মাটির নিচে না রেখে ভোলার এ গ্যাস বানিজ্যিক ব্যাবহারেরও তাগিদ দিয়েছেন তারা ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ