পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ভোটের বছরে বাজারে কালোটাকার ছড়াছড়ি বাড়তে পারে মন্তব্য করে ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল রোববার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর এ সতর্কবার্তা দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (ঋণ ও আমানতের অনুপাত) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে ওই অনুপাত সাধারণ মাত্রার চেয়ে উচুতে আছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এটা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার তাদের বিশেষভাবে জোর দিতে হবে, কারণ আপনারা সবাই জানেন এ বছর নির্বাচনের বছর। এ বছর টাকা পয়সার ছড়াছড়ি বেশি হবে, কালো টাকা হয়ত যথেষ্ট আসবে বাজারে, এ বছর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে যারা কেবল বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ করেন, তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সকলেই আমাদের প্রশ্ন করে থাকেন, যেমন বলেন যে ব্যাংকিং অবস্থা দুর্বল, তারা ভুলে যান, আমরা কী অবস্থা থেকে ব্যাংকিং শুরু করেছি।
মুহিতের ভাষায়, দেশের ব্যাংক খাত আস্তে আস্তে প্রসার পাচ্ছে। এ খাতের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। ব্যাংক খাত যদি দুর্বল হত, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও সম্ভব হত না।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আগামী বছরই রূপালী ব্যাংক শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাবে বলে তারা আশা করছেন। তারা এমন জায়গায় যেতে চান, যেখানে দেশে রূপালী ব্যাংকের সেবাই হবে সবার সেরা। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির আবেদন করে আতাউর রহমান বলেন, ৩০০ কোটি টাকা পেইডআপ ক্যাপিটাল দিয়ে এ ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ৯০০ কোটি টাকা ক্যাপিটাল দিলে রূপালী ব্যাংক আর পেছনে থাকবে না।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেব বিশেষ আবেদন করেছেন। এর জন্য প্রতিবছর বাজেট থেকে প্রচুর পয়সা দেই। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন বাজেটের টাকা, মানুষের টাকা ব্যাংক খাতে দেওয়া-এটা ঠিক নয়। আমি বলব এটা ঠিক, কারণ ব্যাংক খাতে কোনো একটা ব্যাংকের বিপর্যয় আমরা হতে দিতে পারি না। আগামী বাজেটেই রূপালী ব্যাংকের জন্য সুখবর আসতে পারে বলে আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সহায়তার জন্য ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুহিত বলেন, বাংলাদেশে শিল্পখাতের ৭৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সরকার চায়, ব্যাংক খাতে ওই ধরনের শিল্প উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দেওয়া হোক। তাদের হাত ধরে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাদের উন্নয়ন হলে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে; এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বেশ কর্মসংস্থান হবে।
আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ২০১৬ সালে ব্যাংকের লোকসানী শাখার সংখ্যা ছিল ১৪৪ টি, ২০১৭ সালে তা কমে এসেছে ৩০টিতে এবং ব্যাংকের লোকসান ছিল ৮৭ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে লোকসান কাটিয়ে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৩৭ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের তরুন কর্মকর্তারাই ব্যাংকের শক্তির বড় উৎস এবং অর্থমন্ত্রীকে দেখে এই তরুন কর্মকর্তারা অনুপ্রানিত হবে। রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র রূপালী ব্যাংকেরই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে এবং প্রতিটি শাখাতেই রয়েছে অনলাইন সুবিধা। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ডিপোজিট বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং বিনিয়োগ বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। আতাউর রহমান প্রধান বলেন, এ বছরের শপথ হলো শীর্ষে যাব প্রফিট বাড়াবো, শীর্ষে যাব কোয়ালিটিফুল এসএমই ঋণ বিতরন করব। কর্পোরেট ফাইন্যান্সের আওতায় প্রাণ গ্রুপ ও আবুল খায়ের গ্রুপকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সাল ছিল আমাদের ঘুরে দাড়ানোর বছর, সত্যিকার অর্থেই ব্যাংক ঘুরে দাড়িয়েছে এবং ২০১৮ সাল হবে আমাদের শীর্ষে যাবার বছর।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেন, আর্থিক খাতের কোথাও কোন সমস্যা নাই। ব্যাংকের ডিপোজিট বাড়ছে ,লোন বাড়ছে, প্রফিট বাড়ছে অর্থাৎ সবকিছুই সুষম গতিতে চলছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান ব্যবস্থাপকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। সরকারী ব্যাংকের দুর্বল দিকের চেয়ে সবল দিক অনেক বেশি। বর্তমানে আলোচিত বিষয় এডি রেশিও অথচ সরকারী ব্যাংকের এডি রেশিও অনেক কম। সরকারী ব্যাংকে প্রচুর ডিপোজিট রয়েছে যা সরকারের প্রতি জনগনের আস্থারই প্রতিলফন।
রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে রূপালী ব্যাংকের অবস্থা ভাল। ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের অতীতের সাফল্যগুলোকে মনে রাখতে হবে। কারনে আমরা ব্যর্থতা থেকে সাফলতার দিকে যেতে পারি। তিনি রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেট কমিয়ে আনারও আহবান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও রূপালী ব্যাংকের অবজারভার এস এম রবিউল হাসান বলেন, ৫৭ টি ব্যাংকের দশ হাজার শাখা নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনেক অনেক ভাল আছে। সরকারী ব্যাংকগুলো দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সরকারী বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়ে বলেন, নন-পারফরমিং লোন কমিয়ে আনতে হবে এবং সেবা মান আরও ভাল করার পরামর্শ দেন। রূপালী ব্যাংকের ঘুরে দাড়ানো শ্লোগানে ব্যাংক সফল হয়েছে এজন্য তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জনান। সকল ইনডিকেটরে রূপালী ব্যাংক সফল হয়েছে বলেও তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। ব্যবস্থাপকদের উৎসাহিত করতে ১০ সেরা ব্যবস্থাপককে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।
ব্যাংকের বার্ষিক এই সম্মেলনে পরিচালনা পরিষদের সদস্য অরিজিৎ চৌধুরী, দীনা আহসান, মহিউদ্দিন ফারুকী, ড. মো. হাসিবুর রশীদ, আবু সুফিয়ান, ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, একেএম দেলোয়ার হোসেন, ড. সুশীল রঞ্জন হাওলাদার, মো. আব্দুল বাছেত খান, ডিএমডি হাসনে আলম, মোরশেদ আলম খন্দকার, কামরুজ্জামান চৌধুরী, জিএম কাইসুল হক, অরুন কান্তি পাল, আলতাফ হোসেন, মাঈন উদ্দিন, বিষ্ণু চন্দ্র সাহা, জাকিয়া সুলতানা, সাইদা খাতুনসহ সকল জিএম, ডিজিএম এবং ৫৬৩টি শাখার ব্যবস্থাপকগণ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।