পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বাবাজারে দীর্ঘদিন ধরে তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে বিপাকে পড়েছে সউদী আরব। একদা তেল বিক্রি থেকে পাওয়া বিশাল রাজস্ব আয়ে বর্তমানে প্রচন্ড খরা চলছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণ ও অর্থনৈতিক সংস্কারের নানা উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। তার অংশ হিসেবে সউদী পর্যটন শিল্প বিকাশে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে জন্য দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে সমৃদ্ধ স্থানগুলোতে পর্যটক পরিদর্শনের সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ফলে সউদী আরবে পর্যটন শিল্প বিকাশের প্রথম পর্যায় সূচিত হয়েছে। সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘হোয়াইট অয়েল’ নামে। জানা গেছে, সউদী আরব শিগগিরই পর্যটন ভিসা প্রদান শুরু করবে। তবে লিঙ্গ পার্থক্যের জন্য সমালোচিত ও কঠোর পোশাক নীতির জন্য রক্ষণশীল এ দেশটি বিশ্ব পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। তবে হজ্জ্ব এবং মক্কা ও মদিনার পবিত্র স্থানসমূহ পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর বহু লক্ষ মুসলমান সউদী আরবে আগমন করেন। এখন ঐতিহাসিক সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে সউদী আরব বিভিন্ন স্থান উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ^ পর্যটন মানচিত্রে নিজের স্থান করে নিতে চাইছে।
এ রকম একটি স্থান হচ্ছে আল ওয়াহবাহ জ্বালামুখ। এটি একটি সল্ট প্যান বা লবণ খাদ। স্থানীয় পর্যটন উদ্যোগ না থাকায় খোদ সউদীরাও এ স্থান সম্পর্কে জানে না। শীতকালের এক উষ্ণ সপ্তাহান্তে বেসরকারী ট্যুর অপারেটর আমর খলিফা প্রথমবারের মত একদল সউদী পর্যটককে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। তারা জ¦ালামুখের তলদেশ ঘুরে দেখতে আগ্রহী। এ হাইকাররা পর্যটকদের ব্যবহৃত লাঠিহাতে বোল্ডার ছড়ানো পিচ্ছিল পথ ধরে তলদেশের দিকে নামছিল। জেদ্দা ভিত্তিক এক কর্পোরেট ব্যাংকার মোহাম্মদ বাহরুন বলেন, আমি আল ওয়াহবাহ সম্পর্কে আমার বন্ধুদের বলেছিলাম। তারা এ জায়গা সম্পর্কে জানত না।
স্বল্পজ্ঞাত এ জ¦ালামুখটি জেদ্দা থেকে গাড়িপথে চার ঘন্টার দূরতে¦ অবস্থিত। এটি আগ্নেয় বিস্ফোরণজাত একটি খাদ। স্থানীয় লোককাহিনী অনুযায়ী এর সৃষ্টিকাহিনী এ রকমঃ দু’টি পর্বত পরস্পরকে পাগলের মত ভালোবাসত। এক পর্যায়ে একটি পর্বত নিজ অবস্থান থেকে উন্মুল হয়ে অপর পর্বতের সাথে মিশে যায়। উন্মুলিত স্থানটিতে সৃষ্টি হয় গোলাকার খাদ।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কর্তৃপক্ষ এ স্থানটিতে যাওয়ার উপযোগী সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি জ¦ালামুখের কিনারার চারপাশে মার্কার স্থাপন ও পিকনিক শেল্টার তৈরি করেছে। খলিফা বলেন, প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সহজে পৌঁছা ও অবস্থান সুবিধার ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, তিনি যখন এ সপ্তাহান্তে গিয়েছিলেন তখন সেখানে একটি মাত্র ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড ছিল।
প্রভাবশালী সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তেল রাজস্ব বাবদ আয়-উত্তর যুগে তার দেশকে আরবের বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ভিশন ২০৩০-এর নীলনকশা প্রণয়ন করেছেন। পর্যটন তার অন্যতম ক্ষেত্র।
আগস্ট মাসে সউদী আরব লোহিত সাগরের ৫০টি দ্বীপ ও অন্য কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানকে বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য বহু শত কোটি ডলারের প্রকল্প ঘোষণা করে।
সউদী কর্তৃপক্ষ বহু প্রাচীন মাদাইন সালেহ ঐতিহাসিক স্থানটিও উন্নয়নের কথা ঘোষণা করেছে। এটি ছিল আদ ও সামুদ জাতির বাসস্থান। এখানে বেলেপাথরে তৈরি অসংখ্য বাসগৃহ রয়েছে। এ সভ্যতার লোকেরা জর্দানে পেট্রা নগরী নির্মাণ করেছিল।
সউদী আরব পর্যটন খাতকে আগামীতে অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত হিসেবে প্রদর্শন করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক পর্যটক আগমন সংখ্যা দ্বিগুণ করে তা ৩ কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে ।
পর্যটন দপ্তরের প্রধান শাহজাদা সুলতান বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ গতমাসে এএফপিকে বলেন, যে সব দেশ তাদের নাগরিকদের সউদী আরবে ভ্রমণের অনুমতি দেবে সেসব দেশের সকল নাগরিককে ২০১৮ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে তাদের সকল নাগরিককে ইলেকট্রনিক ভিসা প্রদানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
শাহজাদা সুলতান তার দেশের বিস্ময়কর নৈসর্গিক দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, সউদী আরব এক বিরাট রতœখনি। আমরা শুধু তেল ব্যবসায়ী নই।
সউদী আরব তার সম্পর্কে মানুষের ধারণায় পবির্তন আনার লক্ষ্যে তার সর্বাপেক্ষা কঠোর কিছু নিয়ম-কানুন শিথিল করেছে। তার মধ্যে রয়েছে সিনেমার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, নারী ও পুরুষ মিশ্রিত খেলাধুলা এবং জুন মাস থেকে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া।
কিন্তু সউদী আরবে মদের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর ফলে অনেক পর্যটকের জন্য দেশটি অনাকর্ষণীয় হবে।
বিদেশী পর্যটকদের জন্য একান্ত অবকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে যা রিয়াদের বিদেশী কর্মীদের বাসস্থান কম্পাউন্ডের মত হবে। সেখানে সউদী কঠোর আইনকানুন শিথিল।
তবে শাহজাদা সুলতান বলেন, সউদী আরব মদের অনুমতি দেবে না, আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও আমাদের স্থানীয় মূল্যবোধ ত্যাগ করব না।
যুক্তরাষ্ট্রের রাইস বিশ^বিদ্যালয়ের বেকার ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি-তে ফেলো ক্রিশ্চিয়ান উলরিখসেন বলেন, বিপুল সংখ্যক অমুসলিমদের কাছে উন্মুক্তকরণের সংবেদনশীলতার প্রেক্ষিতে আমার কথা হচ্ছে প্রথম নজির হিসেবে কর্তৃপক্ষের উচিত স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যটকদের উৎসাহিত করা ও পর্যটক অবকাঠামো গড়ে তোলা। তারপর সতর্কতার সাথে বৃহত্তর বিশে^র কাছে নিজেকে বিপণন শুরু করতে হবে।
কিন্তু ব্রিটেন ভিত্তিক স্টেপস ট্রাভেলসের মত বিশ^ ভ্রমণ সংস্থাগুলো প্যাকেজ ট্যুর ঘোষণার পরিকল্পনা করছে। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাস্টিন ওয়াটারিজ এএফপিকে বলেন, সউদী পর্যটনের ব্যাপকভিত্তিক সম্ভাবনা আছে।
খালেদ বাতারফি নামে জেদ্দার এক লেখক বলেন, সউদী আরবের জন্য পর্যটন এক নতুন ধারণা। সউদী গেজেট সংবাদপত্রে তিনি বলেন, আমাদের গোত্রীয় ঐতিহ্যে নিজস্ব অতিথি ছাড়া অন্যদের সেবা করা অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদান প্রয়োজন।
আল ওয়াহবাহ-তে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
হাইকিং গ্রুপটি জ¦ালামুখ থেকে যখন উঠে এল তখন গাইড খলিফা তার কিনারায় ক্যাম্প স্থাপনে জন্য তার এসইউভির বুট খুলে তাঁবু, ফোল্ডিং চেয়ার, জ¦ালানি কাঠ ও গোশতের প্যাকেটগুলো বের করলেন।
সেখানে হাইকিং গ্রুপটির শীতল রাত কাটানোর প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে তিনি বললেন, সউদীরা যখন ক্যাম্পিংয়ে যায় তখন পুরো বাড়িটাই সাথে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এর পরিবর্তন প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।