Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেশী ঘুমাবেন না

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অনেকে এমনি এমনি বেশি বেশি ঘুমোন। সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার পর দুপুরে দু’ঘন্টা ঘুম, রাত দশটার মধ্যে আবার শষ্যায় গমন। ঘুম বিলাশিরা ভোজন বিলাসীও হন। ফলে খুব তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যান। আর মোটা হলে তো আর রোগের শেষ থাকে না! লেপটিন এবং আ্যাড্রিনালিন নামক হরমোন হঠাৎ বাড়া বা কমা দেখা যায় ঘুমবিলাশিদের মধ্যে। এর সঙ্গে সর্ম্পক আছে মেদ বৃদ্ধি। লেপটিন হরমোনটি আমাদের দেহে কম সংশ্লেষ হলে খিদে বেড়ে যেতে পারে, কারন হাঙ্গার সেন্টারটিকে নিউরো পেপাটাইজ ওয়াই লেপটিন। খিদে বেড়ে যাওয়া মানেই বেশি খাওয়া, নিটফল মোটা হওয়া। আবার বেশি ঘুমালে আমাদের দেহে ইনসুলিন হরমোনের গ্রাহক কোষ বা রিসেপটরে গুন্ডগোল দেখা দেয়, ফলে ইনসুলিনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, ইনসুলিন তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এর ফলে রক্তে গøুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে টাইপ-টু বা ইনসুলিন ডিপেনডেন্ট ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এছাড়া, ঘুমবিলাসীদের রক্তে ইনসুলিন-বিরোধী নানা হরমোন যেমন-গ্রোথ হরমোন, অ্যাড্রিনালিন, স্টেরয়েড, গøুকাগন ইত্যাদি বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে। 

বেশি ঘুমানো মানেই বেশি করে মোটা হওয়া, তার থেকে ডায়াবেটিস ছাড়াও উচ্চ-রক্তচাপ, রক্তে ট্রাইগিøসাইরাইড-কোলেস্টেরল বেড়ে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডিমেনশিয়া বা চিত্তভ্রংশ রোগ এবং অ্যালঝাইমার্স বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ। বেশি ঘুমানোর ফলে ডিমেনশিয়া হতে পারে। সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে প্রতি চার সেকেন্ডে একজন করে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। স্মৃতি, বুদ্ধি, ঘুম সবটারই নিয়ন্ত্রক হল মস্তিস্কের বিশেষ বিশেষ অঞ্চল। আমাদের কারোটি বা খুলির খোপে সযতেœ রক্ষিত থাকে মস্তিস্ক, যার ওজন প্রায় দেড় কেজির মতো। এতে থাকে প্রায় দশ শত কোটি কোষ। মস্তিস্কের মূল ভাগ তিনটি। অগ্রমস্তিস্ক ও পশ্চাদমস্তিস্ক। অগ্রমস্তিস্ক, মধ্যমস্তিস্ক ও পশ্চাদমস্তিস্ক। অগ্রমস্তিস্কে থাকে সেরিব্রাম এবং থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাস। এই সেরিব্রামের বিভিন্ন অংশের সাহায্যেই আমরা দেখি, শুনি, কথা বলি ও অন্যান্য কাজ করি। মস্তিস্ক থেকে সারা দেহে কোনও সংবাদ বা অনুভূতি পৌঁছয় ¯œায়ু বা নার্ভের মাধ্যমে। আবার দেহের নানা অংশের গ্রহণ ¯œায়ুকোষ বা রিসেপটর নানা অনুভূতিকে গ্রহণ করে মস্তিস্কে পাঠিয়ে দেয়।
দুটি ¯œায়ুর সংযোগস্থলে একটু ফাঁক থাকে। এখানে ক্ষরিত হয় নানা ধরনের রাসায়নিক, যাদের বলে ¯œায়ুপ্রেরক বা নিউরোট্রান্সমিটার, যাদের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক উত্তেজনা পূর্ববর্তী ¯œায়ুপ্রান্ত থেকে পরবর্তী ¯œায়ুতে সঞ্চারিত হয়, তার থেকে পরের ¯œায়ুতে। এভাবেই অলিম্পিকের রিলে রেসের মতো দৌড়াতে থাকে ¯œায়ু অনুভূতি এক নার্ভ থেকে আরেক নার্ভে। আর এই দৌড়ে ব্যাটন হল নানা ¯œায়ুপ্রেরক। প্রায় পঞ্চাশটি ¯œায়ুপ্রেরক এ পর্যন্ত আবিস্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার কোনওটি ¯œায়ু উত্তেজক, কোনওটি বা নিস্তেজক।
মস্তিস্ক নিস্তেজক একটি ¯œায়ুপ্রেরক হল সেরোটোনিন, যা আমাদের ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে। বেশি ঘুমিয়েদের মস্তিস্কে সেরোটোনিন বেশি ক্ষরিত হয়। ডিমেনশিয়ায় বেশ কয়েকটি ¯œায়ুপ্রেরক রাসায়নিকের ক্ষরণ ভীষণভাবে কমে যায়, যার মধ্যে প্রধান হল অ্যাসিটাইল কোলিন এবং কোলিন অ্যাসিটাইল ট্রান্সফারেজ। মস্তিস্কের করটেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস অংশে এই ক্ষরণ বেশি কমে। এ ছাড়া গøুটামেট, সোমাটোস্ট্যাটিন, কোলিসিস্টোকাইনিন এবং সাবস্ট্যান্স পি-এর মতো ¯œায়ুপ্রেরকের ক্ষরণও কমে যায়। নিটফল ভুলে যাওয়ার রোগ বা ডিমেনশিয়া।
তবে উপায় খোঁজার আগে সুস্থ মানুষের কোন বয়সে কতটা ঘুম জেনে নিন। সদ্যোজাত শিশু দিনে কুড়ি-বাইশ ঘন্টা ঘুমায়, এক বছর বয়সিরা ১৪ থেকে ১৮ ঘন্টা, দশ বছর বয়সিরা ১০ ঘন্টা, এগারো থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সিরা কমবেশি ৮ ঘন্টা। এরপর থেকে মস্তিস্কে মেলাটনিনসহ নানা হরমোনের ক্ষরণ কমতে থাকার ফলে ঘুমের সময় কমতে থাকে । তখন ৬-৭ ঘন্টা ঘুমলেই চলে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ৪-৫ ঘন্টা ঘুমিয়েই দিব্যি সুস্থ থাকেন। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার, কায়িক পরিশ্রম, যোগ ব্যায়াম, ভালো বই পড়া, গান শোনা অতি ঘুম থেকে আপনাকে দূরে রাখবে।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

Show all comments
  • jashim hanif ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ৮:৩৮ এএম says : 0
    অতিরিক্ত ঘুম মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে!!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন