পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমি জানি না, আমার মেয়েকে কোথায় কী অবস্থায় রাখা হয়েছে, তার সাথে আমাকে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয় না। আমি জানতে পেরেছি আশ্রমে কিছু নোংরা ব্যাপার ঘটে।
আমরা যখন আমাদের মেয়ের সাথে দেখা করলাম , সে বলল যে সে ভালো আছে এবং আশ্রমেই থাকতে চায়। কিন্তু তাকে দুর্বল ও ভীত দেখাচ্ছিল। আমার ধারণা, ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে এ কথা বলানো হয়েছিল। আপনি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দিন।’
আইনজীবী শলভ গুপ্তের টেবিলে এ ধরনের চিঠি স্তূপীকৃত হয়ে আছে। স্বঘোষিত ধর্মগুরু বীরেন্দর দেব দীক্ষিতের দিল্লী ও রাজস্থানের আশ্রমে অভিযান চালানোর সময় থেকে দিল্লী পুলিশ ও দীক্ষিতের কাছে এ রকম রাশি রাশি চিঠি এসে জমা হয়েছে। সোস্যাল এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের এনজিও ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর করে। গুপ্ত ঐ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিত¦ করেন। গুপ্ত ও ধর্মগুরুর বহু ভক্তের সাথে কথা বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া গত চার দশক ধরে দীক্ষিতের গড়ে তোলা নোংরা সা¤্রাজ্যের ভিতরের কথা প্রকাশ করেছে।
ভক্ত সংগ্রহ
৭৫ বছর বয়সী বাবার লালসার শিকার সবাই ব্রাহ্ম কুমারির অনুসারি। এ গোষ্ঠির সাথে দীক্ষিতের প্রথম দিকে সম্পর্ক থাকলেও পরে আর ছিল না। দীক্ষিত ‘মাতা’ ও ‘ভাই’দের একটি বিরাট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন যারা প্রতিবেশি রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি সৎসঙ্গ বা গীতা পথ পালন করত। দালালরা অনুসারীদের ধীরে ধীরে অনুসারীদের মধ্যে এ ধারণা ছড়িয়ে দিত যে ব্রাহ্ম কুমারির প্রতিষ্ঠাতা লেখরাজ কৃপালনি দীক্ষিতের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছেন। তারপর ভক্তদের সাত দিনের এক ধ্যানশিক্ষা শিবিরে যেতে হত। সেখানে তারা দীক্ষিতের উপদেশ শুনত। ভক্তদের অনেকের মনেই এ বিশ^াস সৃষ্টি হত যে তিনিই প্রকৃত ভগবান। পুলিশের এক সহকারী উপ পরিদর্শক ও দীক্ষিতের সাবেক অনুসারী কে গার্গ বলেন, আমরা তাকেই ভগবান হিসেবে ভাবতাম।
গোরখপুর বাসিনী বিনীতা বলেন, তার ভক্তদের একগুচ্ছ নিয়ম মেনে চলতে হত- স্ত্রীর সাথে যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকা, সাধারণ খাদ্য খাওয়া এবং সামাজিক অনুষ্ঠান ও লোকজন থেকে দূরে থাকা। গার্গ বলেন, এক সময় তারা এমন একাত্ম হয়ে পড়েন যে সানন্দে তাদের টাকা, সম্পদ ও তাদের কন্যাদেরও তার কাছে সমর্পণ করতেন।
বাবা চাওয়ার পর তিনি তার ১৬ বছরের মেয়েকে আশ্রমে পাঠান। আমরা ভেবেছিলাম যে একটি মেয়ের জন্য ধর্মসাধনায় নিবেদিত হওয়ার চেয়ে বড় আর কি হতে পারে? তিনি বলেন, ২০০৩ সালে উত্তর প্রদেশের এক ছোট শহর কামপিলে এক আশ্রমে তার মেয়েকে নেয়া হয়। ২০০৪-৫ এর পর তাকে আর দেখতে পাইনি যদিও ধ্যানের জন্য প্রতি সপ্তাহেই আশ্রমে যেতাম। শুধু ফোনে দু’বার তার সাথে কথা বলতে পারতাম। নিজের পুলিশ প্রশিক্ষণ সত্তে¡ও গার্গ এর মধ্যে খারাপটা বুঝতে পারেননি। তার মেয়ে আজো নিখোঁজ, পুলিশ একটি এফআইআর নিয়েছে।
দীক্ষিতের কর্মকান্ড ছিল সাধারণ, কিন্ত মানুষের এখনো তা মনে আছে। ভক্তদের বলা হত যে তিনি ভগবান। ২০২০ সালে বিশে^ ধ্বংস হবে। যদি তারা বাঁচতে চায় তাদের দানের রূপে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দীক্ষি ত তাকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগকারিণী বান্দা-র সবিতা বলেন, তার আশ্রমে সেবাদার (দাসী) হিসেবে থাকার সময় তিনি দশ বিঘা জমি বিক্রি করে তাকে দশ লাখ রুপি দেন। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে নিজের মেয়েকেও দীক্ষিতের আশ্রমে সমর্পণ করেন। ২০১৫ সালে আরো ভক্ত সংগ্রহের কথা বলে তিনি মেয়েকে নিয়ে আশ্রম থেকে পালিয়ে আসেন। দুঃস্বপ্ন তাড়িত সবিতা বলেন, আমরা ভগবানের সন্ধানে গিয়েছিলাম, দেখ লাম এক শয়তানকে।
ধর্ম সাধনার ছদ্মাবরণে দীক্ষিত মেয়েদের প্রলুব্ধ করতেন, এমনকি ১৪ বছরের কিশোরীকেও। পথমেই তিনি যা করতেন তা হল আশ্রমে আসার পর তদের অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দিতেন যাতে পরিবার তার সাথে সহজে যোগাযোগ করতে না পারে। দিল্লী আশথমে পুলিশ কয়েকবার হানা দেয়। সেখানে খাঁচা সদৃশ কিছু রুম, সিসিটিভি এবং কিছু এলাকা ছিল যেখানে আশথমের লোকদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। বাবা-মা’রা মেয়ের সাথে দেখা করতে গেলে কয়েকঘন্টা অপেক্ষার পর একটি বড় হলরুমে বহু লোকের মাঝে কথা বলতে হত। তেলেঙ্গানা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত একটি পরিবার আরো বেশিবার তাদের মেয়ের সাথে দেখা করতে পারত্। তবে দু’ বছরে মাত্র দু’ থেকে তিনবার অনুমতি পেয়েছিলে তারা। তারা বলেন, ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রহস্যজনক ভাবে তাদের মেয়ে নিখোঁজ হয়। সেখানে সে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিল। আশ্রমের এ নিয়মের উপর প্রথম ধাক্কা আসে যখন ২০১৭ সালের নভেম্বরে রাজস্থানের ঝুনঝুনু থেকে আসা একটি পরিবার তাদের মেয়ের সাথে দেখা দেখা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ফাউন্ডেশন তাদের পুলিশের আশ্রয় নিতে সাহায্য করে। ১৯ ডিসেম্বর আরেকটি পুলিশি হানায় দেখা যায় যে রোহিনি আশ্রমের মধ্যে ৫০ জন মেয়েকে আটক রাখা হয়েছে।
রানীদের সাথে কৃষ্ণ খেলা
বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের সেবাদার ডিউটি দেয়া হত এবং তারাই বাইরের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করত। তালাবদ্ধ ঘরে থাকা ‘বেহিন’ ও ‘মাতা’দের কাছে তারা যেতে পারত না। সবিতা যার মেয়ে ছিল বেহিনদের একজন- তিনি বলেন, মেয়েদর টিভি সেটে প্রচারিত দীক্ষিতের ধর্মোপদেশ শোনার জন্য রাত ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে উঠতে হত। তাদের দীক্ষিতের ছবির দিকে তাকিয় ২ ঘন্টা ধ্যানে বসে করতে হত। তারপর তারা ম্লান করে ৪টা নাগাদ তৈরি হত। তাদের দিন কাটত মুরলি (ধর্মকথা) শুনে। মুরলি নামটি নেয়া হয়েছে ব্রাহ্ম কুমারি থেকে যারা বিশ^াস করে যে শিব তাদের প্রতিষ্ঠাতা লেখরাজ কৃপালনিকে মৌখিক ভাবে ঐশ^রিক জ্ঞান দিয়েছেন। দীক্ষিত জ্ঞানকে হুমকির সাথে মিশ্রিত করে বলেন, যে মেয়েদের বাবা-মা আশ্রম ত্যাগ করবে তারা অভিশাপ গ্রস্ত হবে। দীক্ষিত যখন আশ্রমে আসতেন তখন ৮-১০ জনকে রাতে ‘গুপ্ত প্রসাদ’-এর জন্য মনোনীত করা হত। গার্গ ও সবিতা বলেন, ‘গুপ্ত প্রসাদ’ হচ্ছে যৌনক্রিয়ার সাংকেতিক শব্দ।
সবিতা বলেন, যারা গুপ্ত প্রসাদ পেত তাদের রানি বলা হত , দীক্ষিত ছিলেন তাদের কৃষ্ণ। মাতারা আমাদের বলেছে যে কৃষ্ণের মত তারও ১৬ হাজার ১০৮ জন রানি ছিল। তিনি বলেন, সব আশ্রমে মেয়েদের ঋতুচক্রের রেজিস্টার ছিল।
আশ্রমে রাখা কাগজপত্রের মধ্যে আশ্রমে থাকা মেয়েদের স্বাক্ষরিত তাদের আত্মীয়- স্বজনের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দেখা যায়। এমনকি কেউ কেউ যৌন নিপীড়নেরও অভিযোগ করেছে। আইনজীবী শলভ গুপ্ত বলেন, এগুলো ছাড়াও শুধু পুরুষদের নাম সম্বলিত একটি রেজিস্টার জব্দ করা হয়েছে। এটা তাদের আশ্রমে আসার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
ধর্মগুরু উপসর্গ
এখন পর্যন্ত দীক্ষিতের ফাঁদে পড়া যে সব মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে তা উদ্বেগজনক্ কিন্তু ধর্মগুরু প্রথ্া নতুন নয়। আশ্রম, গুরমিত সিং রামরহিম ও রামপাল সকলেরই বিপুল সংখ্যক অনুসারী ছিল। সমাজতাত্তি¡ক শিব বিশ^নাথন এর জন্য ধর্মগুরুদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আগে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করত। কিন্তু এখন ধর্মের প্রাধান্য ফিরে এসেছে। গুরুকে ্এখন সর্বময় ক্ষমতাশালী হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং ঐক্যের উপাদান হয়ে উঠছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।