পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২৩ মাস অতিরিক্ত সময় চেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান : নদী শাসন পিছিয়ে আছে ৩০ শতাংশ এবং শেষ করতে অতিরিক্ত ১৮ মাস সময় লাগবে : লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫.৬১ শতাংশ পিছিয়ে মূল সেতুর কাজ
পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালের জুনে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত আরও ২৩ মাস সময় চেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী। বর্তমানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মূল সেতুর কাজ পিছিয়ে আছে ২৫ শতাংশের বেশি। সর্বশেষ অগ্রগতি না বেড়ে উল্টো কমে গেছে। সব মিলে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না পদ্মা সেতুর কাজ। এদিকে, গত চার অর্থবছরের মতো এবারও প্রকল্পটির উন্নয়ন বরাদ্দ সম্পূর্ণ ব্যয় হচ্ছে না। এজন্য উন্নয়ন বরাদ্দ ৮২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। শিগগিরই তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর এডিপিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে উন্নয়ন বরাদ্দ রয়েছে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এতে করে পুরো বছরে বিশাল এ বরাদ্দের বড় অংশই অব্যবহƒত থেকে যাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ কমিয়ে ৪ হাজার ৭০৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিসাবে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ কমছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরও বরাদ্দ কমানো হয় ১ হাজার ৩৫২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শুরুতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৭ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ব্যয় না হওয়ায় অর্থবছর শেষে তা কমিয়ে তিন হাজার ৫৯২ কোটি টাকা করা হয়। একইভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আট হাজার ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও পরে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। তবে তা কমিয়ে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা করা হয়। জানতে চাইলে সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। তবে প্রকল্পের কাজে এখনও পুরোপুরি গতি আসেনি। দুটি পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এর ওপর বসানো হয়েছে একটি স্প্যান। গত চার অর্থবছরের মতো এবারও প্রকল্পটির উন্নয়ন বরাদ্দ সম্পূর্ণ ব্যয় হচ্ছে না। এজন্যই উন্নয়ন বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রেন্ডাল অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস সম্প্রতি সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির নদী শাসন প্যাকেজের চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। বর্তমানে এ অংশের বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে প্রায় ৩০ শতাংশ। নদী শাসন শেষ করতে অতিরিক্ত ১৮ মাস সময় চেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ দশমিক ৬১ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে মূল সেতুর কাজ। তবে এটি বাস্তবিক অগ্রগতির হার নয়। আর্থিক অগ্রগতির ভিত্তিতে এটি হিসাব করা হয়েছে। যদিও অক্টোবরে অগ্রগতি এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কমিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ। কারণ সেপ্টেম্বর শেষে মূল সেতুর অগ্রগতি দেখানো হয়েছিল ৪৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অক্টোবর পর্যন্ত নদী শাসন কাজের বাস্তবায়নের হার ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। যদিও এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে নদী শাসনের কাজ। তবে এটিও বাস্তবিক অগ্রগতির হার নয়। আর্থিক অগ্রগতির ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে। তবে নদী শাসন প্যাকেজের প্রতিটি অংশের কাজে বিলম্ব রয়েছে। যদিও এর কোনো কারণ বা সমাধানের কোনো পথ উল্লেখ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর মূল সেতু নির্মাণে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে গেল বছরের ১৪ নভেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করা হয়। পরে তা পর্যালোচনাপূর্বক ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) জমা দেয় ব্যবস্থাপনা পরামর্শক।
এতে দেখা যায়, মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে ২৩ মাস অতিরিক্ত সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২০ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে করে প্রস্তাবটি ফেরত দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির কাজ দ্রæত এগিয়ে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ গত ডিসেম্বরে সাড়ে তিন হাজার কিলোজুল ক্ষমতার একটি হ্যামার যুক্ত করেছে। তবে সেতুটির ১৪টি পিলারের নকশা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
অন্যদিকে, প্রকল্পটির নদী শাসনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। তবে প্যাকেজের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন কাজটি শেষ করতে আরও ১৮ মাস সময় অতিরিক্ত দাবি করে। গেল বছরের ১০ অক্টোবরে এ প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়। এতে ২০২০ সালের জুনে প্যাকেজটির কাজ শেষ হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এ প্রস্তাবটিও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে এখন সে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। বরং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেক সেতু দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে এখন কাজ চলছে।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, গত নভেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর ২৪০টি পাইলের মধ্যে মাত্র ২০টির ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৪০টি পিলারের মধ্যে চারটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। যদিও ১৪ পিলারের নকশা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এগুলোর নকশায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। পিলারগুলো হলোÑমাওয়ার কাছে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ এবং জাজিরার কাছে ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিলার।
পিলারগুলোর জন্য পানির জিরো ডিগ্রি থেকে ১১০ থেকে ১২০ মিটার গভীর পাইল করতে হবে। তবে পাইলিং করতে গিয়ে মাটির ৪০০ ফুট গভীরে কাদার স্তর ধরা পড়ে। এতে ওই স্থানে পাইলিং শেষ হলে তা সেতুর ভারবহন করতে পারবে না। লোড টেস্টে পাইল কাদার ভেতরে দেবে যেতে পারে। তাই এখন পাইলগুলোর দৈর্ঘ্য কমিয়ে ও সংখ্যা বাড়িয়ে নকশা করা হচ্ছে। তবে এ কাজ এখনও শেষ হয়নি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় মূল সেতু নির্মাণের চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নদী শাসনের চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জুন পর্যন্ত দুই প্যাকেজের আওতায় ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৪৫৭ কোটি ৬০ লাখ ও দুই হাজার ৬৩৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। যদিও জমি অধিগ্রহণ খাতে এ ব্যয় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন করতে দেরি হওয়ায় সেতুটির ব্যয় আরও বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।