Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংবিধান অনুযায়ী এ বছর নির্বাচন

সরকারের চার বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন ব্যহত না হয় এ বিষয়ে সচেতন হয়ে দেশবাসীকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে সকল বাধা দূর করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমরা উন্নয়নের যে মহাসড়কে যাত্রা শুরু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ১২ জুন সরকারের চতুর্থ বর্ষ পূর্তি দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোন কোন মহল আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে পারে। দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণ অশান্তি চান না। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করবেন-এটা আর এদেশের জনগণ মেনে নেবেন না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এই কমিশন ইতোমধ্যে দুইটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ে কিছু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। আমি আশা করি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল দল আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। কাজেই লক্ষ্য তাদেরকেই ঠিক করতে হবে- তারা কী চান। আপনারা কি দেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়া দেখতে চান, না বাংলাদেশ আবার পিছনের দিকে চলুক তাই দেখতে চান। একবার ভাবুন তো মাত্র ১০ বছর আগে দেশের অবস্থানটা কোথায় ছিল? আপনারা কি চান না আপনার সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হোক? আপনারা কি চান না প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে যাক। আপনারা কি চান না প্রতিটি গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হোক। মানুষ দু’বেলা পেট পুরে খেতে পাক। শান্তিতে জীবনযাপন করুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আমরা আর দরিদ্র হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঁচতে চাই। এসব যদি আপনাদের চাওয়া হয়, তাহলে আমরা সব সময়ই আপনাদের পাশে আছি। কারণ, আমরাই লক্ষ্য স্থির করেছি যে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করব। শুধু লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু আমরা বসে নেই। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়ন করে সেগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই না; তবে অতীতকে ভুলেও যাব না। অতীতের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে, ভুল-ত্রæটি শুধরে নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব। আমরা উন্নয়নের যে মহাসড়কে যাত্রা শুরু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে সকল বাধা দূর করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৪ সালে আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আজকের এই দিনে আমি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। চতুর্থ বছরপূর্তিতে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হাজির হয়েছি। আমার উপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি আপনাদের মর্যাদা রক্ষা করার। কতটুকু সফল বা ব্যর্থ হয়েছি সে বিচার আপনারাই করবেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশ স্বাধীন করেছেন একটি আদর্শ ও চেতনা ধারণ করে। বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষার হাত থেকে মুক্ত করে একটি সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিলেন। ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করাই আমার একমাত্র ব্রত। ‘বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়’- জাতির পিতার এই উক্তি সর্বদা আমার হৃদয়ে অনুরণিত হয়। তাই সর্বদা আমার একটাই প্রচেষ্টা- কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে অর্থবহ করব, স্বচ্ছল ও সুন্দর করে গড়ে তুলব।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরে একদিকে যেমন দলকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করি, অপরদিকে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা চালাই। চারণের বেশে সমগ্র বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছি। আপনাদের জীবনমান উন্নয়নে কী কী কাজ করতে হবে তারও পরিকল্পনা তৈরি করি। তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে যখন আপনাদের কাছে গিয়েছি, পেয়েছি অপার ¯েœহ, ভালবাসা, পেয়েছি আত্মবিশ্বাস। অনেক চড়াইউৎরাই পেরিয়ে, বন্ধুর পথ অতিক্রম করে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পাই।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ’৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পেল। বাংলাদেশের মানুষ সরকারি সেবা পেল। আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ ব্যাপক উন্নতির পথে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। অপার সম্ভাবনা দৃশ্যমান হতে থাকল। বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, প্রতিবন্ধীদের সেবাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন জনজীবনে আস্থা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে গভীর চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হল না। এরপর দেশবাসী দেখেছেন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন; অর্থ লুটপাট, হাওয়া ভবনের দৌরাত্ম্য। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুইজন সংসদ সদস্যসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও হত্যা, জমি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজী, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি। ৬৩ জেলায় একসঙ্গে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের র‌্যালিতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতাকর্মী হত্যা, ব্রিটিশ হাই কমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা, দেশব্যাপী নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার- সমগ্র দেশ যেন জলন্ত অগ্নিকুÐে পরিণত হয়েছিল। দেশবাসী প্রতিনিয়ত সে যন্ত্রণায় দাহ হচ্ছিলেন। এমনি পরিস্থিতিতে জারি করা হল জরুরি অবস্থা। ৭ বছর দুঃসহ যাতনা ভোগ করার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশবাসী আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিলেন। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি জনগণের সার্বিক উন্নয়নের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে নির্মম সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালিয়েছিল। নির্বাচনের দিন ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করে প্রিসাইডিং অফিসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। ২০১৩ থেকে ২০১৫ - এই তিন বছরে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় ৫০০ নিরীহ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি, ২৯টি রেলগাড়ি ও ৯টি লঞ্চ পোড়ানো হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬টি ভূমি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। মসজিদে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় পবিত্র কোরআন শরীফ। তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি রাস্তার গাছ এবং নিরীহ গবাদিপশু।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত ২১ বছর এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ বছর- এই ২৮ বছর বাংলাদেশের জনগণ বঞ্চিত থেকেছে। যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারা নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল। জনগণের কল্যাণে তারা কোন ভূমিকা রাখেনি। বরং আমরা জনকল্যাণে যেসব কাজ হাতে নিয়েছিলাম তারা তা বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আশু করণীয়, মধ্য-মেয়াদি ও দীর্ঘ-মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, গ্রহণ করেছি দশ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিৎ পরিকল্পনা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আরও বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৪ দশমিক আট-পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক চার-আট বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়। ২০১৭ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২০০৫-০৬ বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সরকার প্রধান আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। ৯ বছর একটানা জনসেবার সুযোগ পেয়েছি বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্বেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ এর সুফল ভোগ করছেন। তিনি বলেন, আমরা দিন বদলের সনদ ঘোষণা দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনাদের জীবনমান সহজ করা এবং উন্নত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আপনারা আজ সেসব সেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সীম ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন করে ব্যান্ডওয়াইথ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে জনগণ ২০০ ধরনের সেবা পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৯ বছরে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৫৮টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। ৩৬৫টি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপন করেছি। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। স্বাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সরকারের ৯ বছরে বিদ্যুত খাতের প্রভূত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ৯ বছরে ১১৯টি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের মাধ্যমে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে আমাদের অবস্থান ৪র্থ। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭২ বছর।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের রায়ও কার্যকর হয়েছে। বিডিআর হত্যার বিচার হয়েছে। আমরা সফলতার সঙ্গে জঙ্গীবাদ দমন করেছি। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারিদের বেতনভাতা ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কেউ বেকার এবং দরিদ্র থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য আমরা বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। পদ্মা সেতুর কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকায় মেট্টোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। সমগ্র বাংলাদেশকে রেল সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এবং রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া গ্রিডবিহীন এলাকায় ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। সৌর বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের কাজ শুরু হয়েছে। গ্যাসের সমস্যা দূর করতে এলএনজি আমদানি শুরু হচ্ছে। রান্নার জন্য দেশে এলপিজি গ্যাস উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে ২ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ জন কৃষকের মধ্যে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ৯৮ লাখ কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা পাচ্ছেন। প্রাইমারি থেকে মাস্টারস ডিগ্রি ও পিএইচডি পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে। ১ কোটি ৩০ লাখ প্রাইমারি শিক্ষার্থীর মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। শিক্ষা খাতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। যে বাংলাদেশকে একসময় করুণার চোখে দেখত, সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানোয় করুণার পাত্র মনে করত; আজ সে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বসভায় সম্মানিত। তিনি বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান পাওয়ায় বাংলাদেশ সম্মানিত হয়েছে বিশ্বসভায়।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-জাতির পিতার এই আপ্তবাক্য আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল প্রতিপাদ্য। এই নীতি অনুসরণ করে আজ প্রতিবেশি দেশগুলিসহ সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অত্যাচার এবং নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তাদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে রিলিফ বিতরণ করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।



 

Show all comments
  • F M Amirul Islam ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৪৪ এএম says : 1
    we are waiting to see that election
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Ullah ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:১৬ পিএম says : 0
    জয় বাংলা
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
    আমরা আছি আপনার সাথে
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:২৮ পিএম says : 0
    শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Md Toslim Ullah ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩০ পিএম says : 0
    দুর্গম পথের এক দুঃসাহসী যাত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Farhad Reza ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৪ পিএম says : 0
    আমরা জনগন চাই আপনিই দেশ চালান তবে সেটা আমাদের ম্যান্ডট নিয়| ৫ জানুয়ারির পূনরাবৃত্তি করে আপনি আরেক দফা গদিতে আসীন হতে পারবেন কিন্তু তখন আপনার ও আপনার ঐতিহ্যবাহি দলের ইতিহাস টা আলাদাভাবে লিখতে হবে|
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Ahmed ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    আপনি খমতা ছেরে নিরপেহ্ম বক্তির অদিনে নির্বাচন হতে দিন, আপনি শান্তি পান আমরা জনগনকেও শান্তিতে থাকতে দিন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sarwar Hossain ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৭ পিএম says : 0
    জনগন কী চায় আর কী চাইনা তা নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন দিলেই বুঝবেন
    Total Reply(0) Reply
  • Khalilur Rahman ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৮ পিএম says : 0
    দেশ সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ভবিষ্যতে ও এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মানিক হায়দার ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৩৯ পিএম says : 0
    বার বার ঘুঘু ধান খেয়ে যেতে পারে না! তেমনি কেউ সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা নির্বাচন করে যেতে পারে না! পারলেও সেটা সময়ে দেখা যাবে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ