পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : ফিটনেস নেই তবুও রাজপথে আছে। চলার যোগ্য নয় তারপরেও চলছে। রাজধানীতে চলাচলরত এরকম লক্কর-ঝক্কর মার্কা যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা কতো তার সঠিক হিসাব বিআরটিএ-তে নাই। তবে গেল বছর ফিটনেসের হিসাব করলে এর সংখ্যা ৮০ হাজারের কম নয়। এক বছর আগে হাইকোর্ট যখন ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল তখন রাজধানীতে এ সংখ্যা ছিল দেড় লাখ। হাইকোর্টের নির্দেশের পর ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। মাসখানেক সেই অভিযানে গতি থাকলেও পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে। অভিযান শুরু হলে লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি চলাচল আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। সে ধাক্কা সামলিয়ে এখন সেগুলো আবার রাজপথে। এসব গাড়িই রাজধানীর গলার কাঁটার মতো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে চলেছে। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এক শ্রেণীর পরিবহন মালিক। সেবা তো তো দুরের কথা যাত্রীরা সামান্যতম নিরাপদ নয় এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সাথে ভোগান্তিতো আছেই। এরকমের ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচলের কারণে শুধু দুর্ভোগই নয়, ক্ষতির মুখে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যও। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চললেও নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা। বিআরটিএ-এর সচিব মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। সাপ্তাহিক ছুৃটি বাদে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। ফিটনেসবিহীন ত্রæটিপূর্ণ গাড়ি ধরা হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরেও যে এগুলো চলছে তা স্বীকার করে বিআরটিএ সচিব বলেন, এগুলো যাতে চলতে না পারে সেজন্য বিআরটিএ-এর সাথে পুলিশেরও দায়িত্ব আছে।
পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব মতে, ঢাকায় ১৯৩টি বাস রুটে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে সহ¯্রাধিক বাস ১৫ বছরের পুরনো। সেগুলোকে রাজধানীতে চলাচলের জন্য আর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট ছাড়াই নির্দ্দিষ্ট রুটে যাত্রী বহন করে চলেছে। যাত্রীবাহী এসব বাস যে কেউ দেখলেই বুঝবে এগুলোর ফিটনেস নেই। জেনেশুনেই বাধ্য হয়ে যাত্রীরা এসব বাসে চড়তে বাধ্য হচ্ছে।
গুলিস্তানে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রাবণ পরিবহনের বেশিরভাগ বাসের বেহাল অবস্থা। বাসের বডির অংশ খুলে পড়ে গেছে। কোনোটার সামনের বিরাট অংশই ভাঙ্গা। পেছনের বাম্পার খুলে ঝুলে আছে। জানালা বলতে কিছু নেই। ভেতরে বসার সীটগুলো নড়বড়ে। জোড়াতালি দিতে দিতে সীট কভারের উপরের অংশে কয়েক প্রকার চাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। তারপরেও এসব বাস শহরতলীর যাত্রী বহন করে চলেছে। সাদেক নামে একজন যাত্রী বলেন, বাসগুলো চলাচলের অযোগ্য, নিরুপায় হয়ে আমরা চড়ছি। বিকল্প থাকলে চড়তাম না। মতিঝিলের চাকরিজীবী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এরকম লক্কর-জক্কর বাস রাস্তায় যাতে চলতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব তো পুলিশের। কিন্তু পুলিশ কিছু বলে না বলেই এরা আমাদের কাছে থেকে ভাড়া ঠিকই নিচ্ছে কিন্তু সার্ভিসতো দিচ্ছে না। ফিটনেসবিহীন বাস চলাচলকে প্রতারণা বলে উল্লেখ করে মুন্নী নামে এক যত্রী বলেন, মালিক সমিতি ইচ্ছা করলেই এসব বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলরত সাড়ে তিন হাজার বাসের মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি বাসের এমন বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোম্পানীগুলো হলো, গাবতলী-সায়েদাবাদ রুটের ৮নং মিনিবাস, মোহাম্মদপুরের মেশকাত পরিবহন, দিশারী পরিবহন, ইউনাইটেড পরিবহন, মতিঝিল-গাজীপুরের গাজীপুর পরিবহন, তানজিল পরিবহন, মিরপুর সার্ভিস, ইটিসি ট্রান্সপোর্ট, এটিসিএল, তরঙ্গ পরিবহন, মিডওয়ে, আজিমপুরের ভিআইপি পরিবহন, মিরপুর চিড়িয়াখানা রুটের নিউভিশন পরিবহন, যাত্রাবাড়ী টঙ্গীর তুরাগ পরিবহন, ছালছাবিল পরিবহন, অনাবিল পরিবহনসহ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানী। বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব কোম্পানীর বাসগুলোর বেশিরভাগই ‘জ’ সিরিয়ালের। এগুলোর বয়স ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ বহদিন ধরেই। কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে পুরনো বাসগুলোকে আর ফিটনেস দেয়া যায় না। তাই বলে ফিটনেসবিহীন বাসগুলো চলাচল কিন্তু বন্ধ হয়নি। আলাপকালে বাস মালিকরা জানান, ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সবই চলছে আগের মতোই। কম্পিউটার পদ্ধতিতে ফেল করে গত দেড় বছরে ৭/৮শ’ বাস ফিটনেস ছাড়াই চলাচল করছে। ওই বাসগুলোর বয়স বেশি না। এক বছর বা দুই বছর হবে। কিন্তু হেড লাইটের আলো বেশি এবং ব্রেকের অবস্থা ভালো না হওয়ায় বাসগুলো ফিটনেসে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কিন্তু মালিকপক্ষ বাসগুলো আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশকে টাকা দিয়ে।
জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলরত লক্কর-ঝক্কর মার্কা যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা কতো তার সঠিক হিসাব বিআরটিএ-তে নেইই। এক বছর আগে অভিযান শুরুর পর ফিটনেস করানো এবং অভিযানে আটক গাড়ির সংখ্যা হিসাব করলে এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি হবে। কারো কারো মতে, এখন এই সংখ্যা ৮০ হাজারের কম নয়। বিআরটিএ-এর হিসাব মতে, সারাদেশে নিবন্ধনকৃত যানবাহনের সংখ্যা ২০ লাখ। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১০ লাখ। মোটরসাইকেল বাদ দিলে গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ লাখ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সারা বছরে বিআরটিএ-তে ৬ লাখ যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা হয়। এর বেশি হয় না। এর অর্থই হলো বাকী ১০ থেকে ১২ লাখ যানবাহন ফিটনেস ছাড়াই চলাচল করছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে ৮০ হাজারের বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালিকপক্ষ সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বাঁকা পথে ব্যবসা করছে। যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। এসব বন্ধ করতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়া দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।