Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শরীরের সুস্থতায় শীতের শাক

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আমাদের দেশে বছরের সব সময়ই কম-বেশি শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি জন্মে। কিন্তু শীত আমাদের নানা দু:খ-কষ্টের কারণ হলেও সাথে নিয়ে আসে হরেক রকমের খাদ্য, শাক ও সবজি যা আমাদের মওসুমি রোগবালাই প্রতিরোধ করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির মধ্যে আসে নানা পরিবর্তন। কোনো ঋতু সাথে নিয়ে আসে হরেক রকম ফল। আবার কোন ঋতু নিয়ে আসে ফুল। তেমনি মানুষের জন্য নিয়ে আসে হরেক রকম শাকসবজি। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের দেহের অভ্যন্তরেও পরিবর্তন হয়। ফলে মানুষের দেহে কিছু খাদ্য ও ভিটামিনের ঘাটতি হয়। স্রষ্টা এই ঘাটতি পূরণের জন্য সৃষ্টি করেছেন নানা প্রকার খাদ্য, শাকসবজি ও ফলমূল। আমাদের দেশে শীতকাল হলো হরেক রকম শাকসবজির ঋতু। নানাবিধ শাকসবজি পাই শীতকালে। আমরা এসব শাকসবজির গুণাগুণ সম্পর্কে অজ্ঞ বলে এগুলোকে অবহেলা করি, খাই না। মাছ- গোশতের প্রতি আমাদের বেশি আর্কষণ। এই আকর্ষণের কারণ সামাজিক ও অর্থবিত্ত। যারা বিত্তশালী তারা মনে করেন, শাকসবজি খাবে যাদের অর্থ নেই, বিত্ত নেই। তারা জেনেও না জানার ভান করেন যে, মাছ- গোশত সব সময় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফলে বেশি বেশি গোশত খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা ও স্থুলতার শিকার হন। অথচ কম দামি সহজলভ্য লালশাক,পালংশাক,পুঁইশাক, মুলাশাক, কলমিশাক ইত্যাদি আমাদের জন্য অনেক উপকারী,তা জানি না। আসুন জেনে নিই শাকসবজির গুণাগুণ।
পালংশাক: লোকে বলে শাকের রাজা পালংশাক। এই শাকের বিভিন্ন গুণের জন্য বলা হয় এ কথা। পালংশাক অনেক রোগ সারায়। শরীরের কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর জমলে পালংশাক তা গলিয়ে বের করতে সক্ষম। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুণ। ফুসফুসের রোগ সারাতেও পালংশাক অনন্য। নানাবিধ পেটের অসুখে পালংশাক ধন্বন্তুরী। এতে রয়েছে লোহা ও তামা। তাই পালংশাক শক্তিবর্ধক। এই শাক রক্ত বৃদ্ধি করে ও রক্ত পরিশোধনও করে। হাড় মজবুত করে। যারা শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারে না, তারা পালংশাক দিয়ে ভাত খাওয়াবেন, উপকার হবে। পালংশাকের স্যুপও খাওয়াতে পারেন। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের জন্যও পালংশাক উপকারী। পালংশাকে প্রস্রাব বাড়ে। প্রস্রাবের সাথে বহু রোগ বেরিয়ে যায়। পিত্ত ও কফের জন্যও পালংশাক উপকারী। পেট পরিস্কার করে।
পুঁইশাক: কথায় বলে, মাছের রাজা রুই, আর শাকের মধ্যে পুঁই। কিন্তুু পুঁই গুরুপাক খাবার। সবাই খেয়ে হজম করতে পারে না। পুঁই পেট পরিস্কার করে। পুইশাক শুক্রবর্ধক, বাত ও পিত্তনাশক।
কলমিশাক: কলমিশাক গ্রামের পুকুর, হাওর, বাঁওড় ও বিলে সর্বত্র পাওয়া যায়। কেউ কেউ পুকুরে লাগায়। এ ছাড়াও খালক্ষিলে আপনা- আপনি হয়। এর ফুলগুলো খুবই সুন্দর । কলমিশাক খুবই উপকারী। শক্র, স্তনেও দুধবর্ধক। মুখে রুচি আনে। রক্ত পরিস্কার করে।
হেলেঞ্চাশাক: হেলেঞ্চা কলমিপ্রজাতির শাক। হেলেঞ্চাশাকের স্বাদ সামান্য তিক্ত, তবে উপকারী। যাদের লিভার সমস্যা আছে, তারা হেলেঞ্চার রস ও শাক খেলে উপকার পাবেন। শরীর ঠান্ডা রাখে, রক্ত পরিস্কার করে। হেলেঞ্চা সেদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যায়। এতে পিত্ত ঠান্ডা রাখে। সরিষাশাক: শীতকালে সরিষাশাক পাওয়া যায়। অন্য কোনো সময় পাওয়া যায় না। সরিষাশাক গুরুপাক খাবার। হজম কঠিন। মল-মূত্রবর্ধক। শরীর গরম করে। সরিষা শাক খুব উপকারী নয় বিধায় জনপ্রিয়তা কম।
মুলাশাক: কচি মুলার পাতাকে মুলাশাক বলে। এটা স্বাদে কিছুটা তেতো। তবে সহজে হজম হয়।
লালশাক: অত্যন্ত সহজলভ্য এই লালশাক। দেখতে লাল এবং রান্নার পর ভাত মাখালে লাল হয় বলে একে বলা হয় লালশাক। এক প্রকার লালশাক দেখতে লাল হলেও ভাত মাখালে লাল হয় না। আয়ুর্বেদি মতে, এই লালশাক ততটা উপকারী নয়। লালশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে হিমোগেøাবিন। মেয়েদের মাসিকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত যায় বিধায় নিয়মিত লালশাক খেলে ওই রক্তের ঘাটতি পূরণ হয় বহুলাংশে।
তেলাকুচাশাক: এই শাককে ডায়াবেটিসের ওষুধ বলা হয়। এই শাকের রস ডায়াবেটিসর জন্য বেশি উপকারী। তেলাকুচাপাতা রান্না করে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। যাদের হাত- পায়ে জ্বালা- যন্ত্রণা করে, তারা তেলাকুচাশাক বা তরকারি খেলে উপকার পাবেন। গ্রামদেশে তেলাকুচার পাতা সহজলভ্য।
থানকুনিপাতা: গ্রামদেশে মাঠে ঘাটে সর্বত্র পাওয়া যায় এবং থানকুনিপাতা খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ মতে, থাকুনিপাতা সপ্ত ধাতুর উপকার করে। সপ্ত ধাতু বলতে-রস, মেদ, মজ্জা, রক্ত, মাংস, অস্থি ও বীর্যকে বুঝায় । বিশেষভাবে পেটের সর্বপ্রকার সমস্যায় থানকুনিপাতা অমোঘ ওষুধ। কবিরাজ বলেন, থানকুনিপাতা দীর্ঘ জীবন দান করে। কাশি, অর্শ, লিভারের অসুখ, জন্ডিস, প্রস্রাবের সমস্যা, কৃমি, অজীর্ণ প্রভৃতি ভালো হয়।

ষ ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট,০১৭১৬২৭০১২০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন