Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরা হচ্ছে -পুলিশের দাবী

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের বিভিন্ন দাবী দাওয়া পুরণ না হওয়াতে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এসব দাবী জরুরী ভিত্তিতে সমাধানের জন্য গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সাধারণ পুলিশ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসময় অনেকেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে তাদের দাবীর কথা জানান। পরে সমাধানের আশ্বাস পেলে তারা শান্ত হন। কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের দাবী দাওয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণাপলয়ের সাথেও বৈঠক করবেন। পুলিশ সপ্তাহ-২০১৮ তে এবারই প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া ৫টি আলাদা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছে পুলিশ। বাহিনীটির অধিকাংশ দাবির সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট, পুলিশ সপ্তাহে তাদের সঙ্গে কার্যকরি বৈঠকের এজেন্ডা রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।
পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহেও জনবল, আবাসন ও যানবাহন সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। পুরনো অনেক দাবি-দাওয়াও তাদের কাছে নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া এবারও আবাসন, যানবাহন ও জনবল সংকট নিয়ে আলোচনা হবে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের নতুন বিশেষায়িত অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও সামরিক বাহিনী পরিচালিত আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আদলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে চায় পুলিশ প্রশাসন।
এছাড়াও মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করায় পর্যটন জেলা কক্সবাজারের নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চেয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের মতো একটি ব্যাটালিয়ন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৮’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, পুলিশ সপ্তাহে প্রতিবছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হয়ে থাকে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পুলিশের অনেক ইস্যু থাকে। এ জন্য এবার পুলিশ সপ্তাহে আসার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন অনেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব। তাদের সঙ্গে আয়োজিত সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরদিন বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর তাদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অর্থ, গণপূর্ত, আইন, পরিকল্পনা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবরা অংশ নেবেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে। তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে ও একটি গন্ডির মধ্যে রাখতে আলাদা ব্যাটালিয়ন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্নজনকে দেয়া হয়েছে এই সুপারিশ। এছাড়াও ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’ বাতিলের জন্য দাবি তোলা হয়েছে। ২০১৭ সালের পুলিশ সপ্তাহেও একই দাবি করেছিল পুলিশ।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্র জানায়, ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষোভ রয়েছে। ২০১৩ সালে এ আইন প্রণয়নের পর থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অনেক অপরাধীও এ সুযোগ নিচ্ছে। এ বিষয়ে গত বছর পুলিশ সপ্তাহেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইনটি বাতিলের দাবি তোলা হয়।
হুইল চেয়ারে বসে পদক নিলেন কনস্টেবল শাওরিত
হুইল চেয়ারে বসেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সাহসিকতার পদক গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ছায়ানীড় জঙ্গি আস্তানায় গুনুতর আহত কনস্টেবল শাওরিত। প্যারেড করে অভিবাদন জানিয়ে রাজারবাগে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়ায় বিপিএম ও পিপিএম পদকপ্রাপ্তরা। উচ্চ থেকে নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারিবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু নেই শুধু বিপিএম পদকে ভূষিত কনস্টেবল শাওরিত হাসান। পরবর্তীতে পাশেই অন্য কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় মঞ্চের দিকে যান শাওরিত। পদক গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন শাওরিত হাসান। তিনি বলেন, ‘মাত্রই ২০১৬ সালে পুলিশে যোগদান করেছি। পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটে কাজ করছিলাম। কিন্তু কে জানতো স্প্রিন্টার ও জঙ্গিদের বিস্ফোরণে জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাবে! কিন্তু ভালো লাগছে প্রধানমন্ত্রী আমার ত্যাগের স্বীকৃতি দিলেন। রাষ্ট্র আমাকে সহযোগিতা করছে।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাদের মেডেল পরিয়ে দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাওরিত হাসানকেও পদক পরিয়ে দেন। পদক গ্রহণ শেষে হুইল চেয়ারে বসেই অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে যান নাস্তার টেবিলে।
গত বছরের ১৬ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ছায়ানীড় জঙ্গি আস্তানায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়। সোয়াটের সমন্বয়ে অভিযান চলাকালে জঙ্গিরা ভেতর থেকে এলোপাথাড়ি বোমা ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। শাওরিতসহ সোয়াট টিমের সদস্যরা ওই ভবনের ছাদে প্রবেশ করলে জঙ্গিরা ফের গ্রেনেড ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ৫/৬ ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময়ও ঘটে। জঙ্গিদের বিস্ফোরিত বোমার আঘাতে সোয়াট টিমের সদস্য শাওরিত হাসানসহ ও ৪ জন গুরুতর আহত হন।
সেদিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শাওরিত হাসান বলেন, বোমা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড ধাক্কায় আমার ব্যবহৃত ঢাল দুমড়েমুচড়ে যায়। বাম পা ভেঙে যায়। গুরুতর আহত অবস্থাতেও আমি দমে যাইনি। প্রাণপণ লড়ে গেছি।
তিনি বলেন, আমি আবার সুস্থ হয়ে নিজ কর্মে ফিরতে চাই। যারা এ দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে চাই।
নিজের শরীরের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, এখনো আমি হাঁটতে পারি না। বা পায়ে এখনো অপারেশনের রড রয়ে গেছে। সুস্থ হতে আরও বছরখানেক সময় লাগবে।
শাওরিত বলেন, পুলিশ প্রধান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ আমাকে পদকে ভূষিত করায়। আমার আবেদন, আমার সুস্থতার জন্য সময় ও সুচিকিৎসা যেন অব্যাহত রাখা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ