পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এককালের ‘বাংলা ভেনিস’ খ্যাত বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ খাল বোজানোসহ তা উধাও হবার পরে ক্রমে এ নগরী বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়ছে। একসময়ের সবুজ বরিশাল নগরায়নের ধক্কায় তার অতীর রূপ ও পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে। গত তিন দশকে এনগরীর অনেক খাল বোজানোর পরে বেদখলের ধাক্কায় তার অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে খাল উদ্ধারের নামে জেলা প্রশাসন থেকে অনেক ঢাক ঢোল পোটানো হলেও তার বাস্তবতা প্রায় শূন্য। এমনকি নগরীর জেল খাল খনন কার্যক্রম তিনবার উদ্বোধন হলেও তার বাস্তবাতা ভিন্ন। এখালটি খননের নামে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নানা ধরনের সহায়তা গ্রহণ করা হলেও সে খালে এখন পানি প্রবেশের পথ প্রায় রুদ্ধ। অতিকষ্টে এনগরীতে কয়েকটি খাল এখনো তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখলেও তার শ্রোত স্তিমিত।
এক দশকে এ নগরী থেকে বিপুল সংখ্যক গাছ হারিয়ে গেলেও কোন পরিকল্পিত বনায়ন হয়নি। অথচ বিগত দশকের গোড়ার দিকে বরিশাল মহানগরী বৃক্ষ রোপনে কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছিল। লাগামহীন নগারায়নসহ সিটি করপোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিবেকহীন কর্মকান্ডে এ নগরী থেকে বিপুল পরিমান গাছ হারিয়ে গেছে।
কিন্তু এখন সরকারী-আধা সরকারী পর্যায়ে এনগরীতে কোন বৃক্ষ রোপন হয়না। অথচ প্রতিবছর ঘটা করে বরিশাল বিভাগীয় সদরে বিশাল বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হয়। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বড় বড় কর্মকর্তাগণ সে মেলায় অনেক ভাল ভাল বক্তব্যও রাখেন। কিন্তু নগরীর যে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এ বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়, সে ময়দানের চার পাশ থেকে শুরু করে সংলগ্ন ‘ভিআইপি এলাকায়’ও গত দুই দশকে কোন গাছ লাগান হয়নি। অথচ পুলিশ ও প্রশাসনের জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাস ভবন সংলগ্ন ঐ এলাকাটির রাস্তাটিতেও গত দ্ ুদশকে কোন গাছ লাগন হয়নি। কিন্তু নানা অজুহাতে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পূর্ব পাশে বাধ রোডর ধারে কির্তনখোলা নদী তীর ঘেশে এককালের বিশাল ঝাউ বাগান উজার হয়েছে আরো অর্ধ শতক আগে। ঐ রাস্তার পাশের বড় বড় পাম গাছগুলোর অস্তিত্বও এখন আর চোখে পড়ে না। এমনকি বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ভিভিআইপিদের জনসভার নিরাপত্তার অজুহাত তুলে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশে উদ্যানটির পূর্ব পাশের বাঁধ রোডের পাশের বেশ কিছু পাম গাছ কেটে ফেলা হয়েছ বছর কয়েক আগে। নগরীর কালেক্টরেট পুকুর পাড়, পোষ্ট অফিসের সামনে, জেলা পরিষদের সামনের পুকুর পাড়, বিবির পুকুর পাড়ের পাম ও কৃষ্ঞচুড়াসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সদর হাসপাতালেল সামেনর পামগাছগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে খোড়া অজুহাতে। সাবেক মেয়র সড়ক অধিদফ্তরের সিএন্ডবি রোডের কাশীপুর থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত কথিত ৪লেনে উন্নীত করার নাম অন্তত দুশ মেহগনি ও কৃষ্ঞচুড়াসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে সাবার করেন। এমনকি সরকারী এসব গাছ কোথায় গেছে তার কোন হিসেবও কারো কাছে নেই।
কিন্তু এনগরীতে কোন বনায়ন হয়নি গত এক দশকে। অতি স¤প্রতিও বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনের মধ্যবর্তি স্থানে একটি শতবর্ষী রেইনট্রী গাছ হেলে পড়লে তা কেটে ফেলা হয়েছে। এর আগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাস ভবন সংলগ্ন এলাকায় ঝড়ে ঐ একই বয়সী দুটি গাছ উপড়ে পড়লে তা কেটে ফেলতে হয়। তবে প্রকৃতিক দূর্যোগে কিছু গাছ পড়ে গেলেও সে স্থলে আর কোন নতুন গাছ লাগান হচ্ছে না এ নগরীতে। ১৯০৩সালে বরিশাল শহরে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা সদর স্থাপনের পরে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা জজ, সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপারদের জন্য যেসব বাস ভবন নির্মান করা হয়েছিল, সেসব বাড়ী ও সামনের রাস্তাগুলোতে বিপুল সংখ্যক রেইনট্রী লাগান হয়। শতাধীক বছরের স্বাক্ষী হয়ে তার অতি সামান্য কয়েকটি গাছ এখনো অবশিষ্ট থাকলেও বেশীরভাগই নানা অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নতুন কোন গাছ আর লাগান হয়নি।
অথচ বরিশাল শহরের বনরাজি ও গাছ গাছালী নিয়ে একাধীক প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিক অনেক গল্প প্রবন্ধ লিখে গেছেন। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের অনেক কবিতায় এশহরের গাছের কথা রয়েছে।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও বরিশাল শহরে এসে এনগরীর প্রকৃতিক শোভায় মোহিত হয়েছিলেন। তিনি তার অমর উপন্যাস ‘মৃত্যু ক্ষুধা’য় বরিশাল শহরের প্রকৃতিক শোভার বর্ণনাও দিয়েছেন। বৃটিশ যুগে শহরের সুরকীর রাস্তা আর গাছ গাছালীর কথাও উল্লেখ আছে তার লেখায়। তিন ঐ উপন্যাসে বলেছেন, ‘বরিশাল। বাংলার ভেনিস। আঁকাবাঁকা লাল রাস্তা। শহরটি জড়িয়ে ধরে আজে ভুজ-বন্ধের মত করে। রাস্তার দু-ধারে ঝাউ গাছের সারি। তারই পাশে নদী। টলমল টলমল করছে-বোম্বাই শাড়ী পরা ভরা-যৌবন বধুর পথ-চলার মত করে। যত না চলে, অঙ্গ দোলে তার চেয়ে অনেক বেশী। নদীর ওপারে ধানের ক্ষেত। তারও ওপারে নারকেল-সুপারী কুঞ্জঘেরা সবুজ গ্রাম,শান্ত নিশ্চুপ। সবুজ শাড়ী-পরা বাসর-ঘরের ভয়-পাওয়া ছোট্ট কনে-বৌটির মত। এক আকাশ হতে আর-আ্কাশে কার অনুনয় সঞ্চারন করে ফিরছে। বৌ কথা কও। বৌ কথা কও। আঁধারে চা্দঁর মুড়ি দিয়ে তখনো রাত্রী অভিসারে বোরোয়নি। তখনো বুঝি তার সন্ধা প্রসাধন শেষ হয়নি। শঙ্কায় হাতের আলতার শিশি সাঁঝের আকাশে গড়িয়ে পড়েছে। পায়ের চেয়ে আকাশটাই রেঙে উঠেছে বেশী। মেঘের কালো খোপায় ভূতীয়া চাঁদরে গো’ড়ে মালাটা জড়াতে গিয়ে বেঁেক গেছে। উঠোনময় তারার ফুল ছড়ানো ....।’
জাতীয় কবি নজারুলের বরিশাল সম্পর্কে হৃদয়গ্রাহী এ স্মৃতিরচারণ এখন বর্তমান প্রজন্মের কারো হৃদয়ে কতটুকু আলোড়ন সৃষ্টি করে কিনা জানা না গেলেও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কর্মকান্ডে এনগরী থেকে সবুজ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আর তা ফিরিয়ে আনারও কোন উদ্যোগ কারো নেই।
এব্যপারে গতকাল বন অধিদফ্তরের বরিশালের বন সংরক্ষকের সাথে টেলিফোনে আালাপ করা হলে তিনি জানান, ‘অপতত সামাজিক বনায়নের আওতায় কোন প্রকল্প না থাকায় এনগরীতে তার অধিদফ্তর থেকে বনায়নের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে আগামীতে এ ধরনের কোন প্রকল্প হলে তিনি অবশ্যই নগরীর যতটা সম্ভব সবুজায়নে চেষ্টা করবেন বলেও জানান। পাশাপাশি কোন সরকারী-আধাসরকারী দফতর চাইলে চারা সরবারহ সহ বৃক্ষ রোপনে প্রযুক্তিগত সব সহায়তা প্রদানে প্রস্তুন রয়েছেন বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।