পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে খারাপ হওয়ায় অষ্টম শ্রেণির জেএসসি ও জেডিসি এবং পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। তবে মাদরাসার জেডিসিতে ইংরেজির পাশাপাশি আরবিতেও খারাপ ফল করেছে ছাত্রছাত্রীরা। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে কোচিং নির্ভরতা, শিক্ষক স্বল্পতা ও দক্ষ শিক্ষক না থাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানসম্মত শিক্ষক না থাকার কারণেই দুই স্তরের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে বলে মনে করছেন দেশের শিক্ষাবিদরা। এর ফলে অষ্টম ও পঞ্চমের দুই পরীক্ষা থেকে এবার ঝরে পড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ছাত্রছাত্রী।
শিক্ষাবিদদের মতে, প্রাথমিক স্তরে সনদনির্ভর পাবলিক পরীক্ষার কোন প্রয়োজন নেই। এই স্তরে স্কুলভিত্তিক বার্ষিক পরীক্ষাই যথেষ্ঠ। শিক্ষানীতিতেও এই পরীক্ষার কথা বলা নেই। এই সনদের কারণেই অভিভাবকরা কোচিং সেন্টারমুখী হচ্ছেন, গণিত ও ইংরেজি শিক্ষকদের পেছনে দৌড়াচ্ছেন। যাদের প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাদের সন্তানরাই ইংরেজি ও গণিতে অকৃতকার্য হচ্ছে। এর ফলে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার আরও বাড়ছে। এছাড়াও সরকার ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিলেও স্কুলভিত্তিক পাঠদানে শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিতে খুব বেশি মনোযোগীও নন। কারণ প্রশিক্ষণে সময় নষ্ট না-করে কোচিং সেন্টারে সময় দিলেই তাদের আর্থিক সুবিধা বেশি হয়।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, সরকার প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে ঝরে পড়া হ্রাস ও বিদ্যালয়ে সব শিশুর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা প্রবর্তন করা হয়। এই পরীক্ষার ফল ভালো করার লক্ষ্যে বিশেষ করে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঝরে পড়ার হার কিছুতেই রোধ হচ্ছে না। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সনদনির্ভর পাবলিক পরীক্ষার কারণে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার আরও বাড়ছে। এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেও যারা কেন্দ্রে আসেনি বা পরীক্ষায় ফেল করেছে তাদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। এই কোমলমতি শিশুদের দায় কে নেবে?
এবারের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায়, এই স্তরের পরীক্ষার্থীরা ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে অংশ নিয়েছিল। ওই বছর পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ৩০ লাখ। কিন্তু জেএসসি ও জেডিসি পর্যন্ত আসতে মাঝ পথে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী হারিয়ে গেছে (ঝরে পড়েছে)। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৪২ জন ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল ৬৯ হাজার ৬৩১ জন। আর সব পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়েছে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৪৪০ জন। এ হিসেবে মোট ঝরে পড়েছে চার লাখ ৬৪ হাজার ৭১ জন শিক্ষার্থী। একই দিনে প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর প্রাথমিক ও এবতেদায়ি সমাপনীতে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছিল মোট ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেনি এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৬০ জন শিক্ষার্থী। আর এই দুই পরীক্ষায় এবার উত্তীর্ণ হয়েছে ২৮ লাখ দুই হাজার ৭১৫ জন। এ হিসেবে ঝরে পড়েছে মোট দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬০ জন খুদে শিক্ষার্থী।
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অষ্টম শ্রেণিতে ইংরেজি ও গণিতে খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। গতবারের চেয়ে এবার গণিতে পাসের হার প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। গত বছর গণিতে পাস করেছিল ৯৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এবার গণিতে পাস গত বছরের চেয়ে কমেছে ৬ শতাংশ। এবার এ বোর্ডে পাস করেছে ৯১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যশোর বোর্ডেও গণিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে ১০ শতাংশ কমেছে। এবার এ বোর্ডে পাস করেছে ৮৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে জেডিসিতে বিপর্যয় হয়েছে ইংরেজির পাশাপাশি আরবি বিষয়েও। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে, শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। এসব বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব আছে। এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের (ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান) দিয়ে প্যানেল গঠন করতে হবে, কীভাবে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়।
প্রাথমিকের বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার সবচেয়ে বেশি খারাপ ফল হয়েছে ইংরেজিতে। এ বিষয়ে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। ভালো ফল হয়েছে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায়, পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। প্রাথমিকে সনদের কারণেই অভিভাবকরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে দৌড়াচ্ছে, কোচিং সেন্টারমুখী হচ্ছেন, গণিত ও ইংরেজি শিক্ষকদের পেছনে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু যাদের প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাদের সন্তানরাই ইংরেজি ও গণিতে খারাপ ফল করছে। এই অশুভ প্রবণতার কারণে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা বাণিজ্যিক হয়ে পড়ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় গত বছর পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং এবতেদায়ি সমাপনীতে পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এবার প্রাথমিকে পাস করেছে ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং এবতেদায়িতে পাস করেছে ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার প্রাথমিকে পাসের হার কমেছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং এবতেদায়িতে কমেছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এছাড়াও এবার প্রাথমিকে সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন এবং এবতেদায়িতে পাঁচ হাজার ২৩ জন। গত বছর প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮ জন এবং এবতেদায়িতে পেয়েছিল পাঁচ হাজার ৯৪৮ জন। এই হিসাবে প্রাথমিকে জিপিএ-৫ কমেছে ১৯ হাজার ২৮৯টি এবং এবতেদায়িতে কমেছে ৯২৫টি।
এবারের প্রাথমিক সমাপনীতে ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সারাদেশের ৩৬০টি স্কুলে কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি। এসব স্কুলে মোট শিক্ষার্থী দুই হাজার ৪৫৩ জন। নতুন জাতীয়করণ করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৬টিতেও কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।