পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার মাতামুহুরী এবং সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী দশ উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়েছে। আদালত কর্তৃক এক হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষের অনুমতি দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। উল্লেখিত এলাকায় যে হারে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে বলা যায় তা তামাকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তামাক উৎপাদনকারী বড় বড় কারখানা চাষীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের তামাক চাষে উৎসাহী করে তুলছে। ইতোমধ্যে তামাক চাষে প্রায় লক্ষাধিক চাষী যুক্ত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিবর্তে অধিক লাভের আশায় তামাক চাষে যুক্ত হয়েছে। তারা এক ফসলি, দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতে কৃষিপণ্য উৎপাদন বন্ধ করে তামাক চাষ করছে। কৃষকদের বক্তব্য হচ্ছে, কৃষিপণ্য চাষ করে তারা তেমন কোনো সহায়তা পায় না। তামাক কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তামাক চাষ প্রক্রিয়া হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছে এবং বিভিন্ন সহায়তা করছে। এ তুলনায় কৃষি বিভাগের সহায়তা অপ্রতুল। কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে অবহেলা, কৃষকের সাথে দূরত্ব বজায় রাখা, সরকারের গৃহীত কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প কৃষককে অবহিত না করা, কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম, সার পাচার ইত্যাদি নানা অনিয়মের কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদনকারীরা উৎসাহ হারিয়ে অধিক লাভজনক তামাক চাষে ঝুঁকেছে। অভিযোগ উঠেছে, রবি শষ্য ও ধান উৎপাদনে যে সার চাষীদের মধ্যে সরবরাহ করার কথা তা এক শ্রেণীর ডিলার দুর্নীতির মাধ্যমে তামাক চাষীদের সরবরাহ করা হচ্ছে।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। ধূমপানের কারণে দেশে বছরে কতজন মৃত্যুবরণ করে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও সংখ্যাটা কয়েক হাজার হবে। ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। এমনকি সিগারেটের প্যাকেটে ধূমপান মৃত্যু ঘটায়, ক্যান্সার হয় ইত্যাদি সতর্কীকরণ লেখা থাকলেও তা থেকে ধূমপায়ীদের বিরত রাখা যাচ্ছে না। বরং ধূমপায়ীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্ভবত সিগারেট বা তামাক জাতীয় পণ্যই একমাত্র পণ্য, যার প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন পড়ে না। ধূমপায়ীরা তা নিজ থেকেই খুঁজে নেয়। এ সুযোগে তামাক উৎপাদনকারী কারখানাগুলোও তামাক উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে। পাবর্ত্য অঞ্চলে তামাক চাষের হার যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। যেখানে কৃষি অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধান ও অন্যান্য রবি শস্য চাষে উৎসাহী করে তোলা ও ব্যাপক সহায়তা করার কথা, সেখানে তারা চরম উদাসীনতা ও অসহযোগিতা প্রদর্শন করছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় কৃষকরা তামাকপণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভনে পড়ে সেদিকেই ঝুঁকে পড়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে তামাক কারখানাগুলো কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পরিসরে তামাক চাষ শুরু করলেও তা এখন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তামাক চাষের ক্রমাগত বিস্তৃতি এবং খাদ্যপণ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়া দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বান্দরবানের লামা উপজেলার চাষী স্বার্থরক্ষা কমিটি ২০১১ সালে তামাক চাষ বন্ধ ও কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়ে বান্দরবান জর্জ কোর্টে তামাক চাষের বৈধতা নিয়ে রিট করে। আদালত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের অনুমতি দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এ আইন কার্যকর হয়নি। তামাক চাষ বান্দরবান ও কক্সবাজারের ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ, তামাক চাষে তামাক কারখানাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যেভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা তার ধারে কাছেও নেই। বরং কৃষির জন্য বরাদ্দকৃত সার পাচার করে তামাক চাষে দেয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ধান ও রবি শস্য উৎপাদনকারী কৃষকরা সুযোগ-সুবিধা এবং ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে লাভজনক তামাক চাষে নিয়োজিত হচ্ছে। দুই জেলায় ব্যাপক হারে তামাক চাষ করে যাচ্ছে। এই চাষ করতে গিয়ে একদিকে খাদ্যপণ্য উৎপাদন কমে গেছে, অন্যদিকে উৎপাদিত তামাক পরিশোধনের জন্য গড়ে উঠা ৪০ হাজার চুল্লিতে বন উজার করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত করে তামাক উৎপাদন এবং পরিবেশ ধ্বংসের এই তান্ডব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সামনে হলেও কোনো ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
কৃষি জমিতে তামাকের উৎপাদন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। খাদ্য সংকট এড়াতে এর লাগাম টেনে ধরা উচিত। তামাক দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি ছাড়া উপকার করছে না। তামাক উৎপাদন প্রশ্রয় দিয়ে এই ক্ষতি বৃদ্ধি ঠেকাতে হবে। আদালত পাহাড়ি এলাকায় তামাক উৎপাদনে যতটুকু জমির অনুমতি দিয়েছে তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে তামাক চাষ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কৃষকদের ধান ও অন্যান্য রবিশস্য উৎপাদনে পর্যাপ্ত সহায়তা দিয়ে এবং তার ন্যায্য দাম নিশ্চিতের মাধ্যমে তামাক চাষে নিরুৎসাহী করার উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষি অধিদপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বলা বাহুল্য, কৃষি অধিদপ্তরের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারির দুর্নীতি এবং গাফিলতির কারণে কৃষকরা হতাশ হয়ে তামাক চাষে উৎসাহী হয়েছে। এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তামাক চাষের জমিকে ধান ও রবি শস্যর জমিতে পরিণত করতে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তাই নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।