পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ও সন্তোষজনক বলে মনে করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চালসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক জরিপে উঠে এসেছে। বিশেষত: শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেনীর আয় না বাড়লেও নানাভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শহুরে দারিদ্র্য বেড়েছে বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চালসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষকে তাদের আয়ের বেশীরভাগ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে। এর ফলে সুষমখাদ্য তথা পুষ্টির চাহিদা পুরণ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ বা সংস্থান করতে পারছেনা সাধারণ মানুষ। দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে চলছে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা,অস্বাভাবিক হারে ও অযৌক্তিক প্রক্রিয়ায় পন্যমূল্য বৃদ্ধি দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। সরকার একদিকে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল ও দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির মূল্য বাড়িয়ে নিজেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে অনুঘটকের ভ‚মিকা পালন করছে।
চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে সরকার। যদিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যেই দেশে দারিদ্র্য ও আয়বৈষম্য দুটিই বাড়াচ্ছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চলতি অর্থবছরে জীবনযাত্রার ব্যয় সাড়ে ৮ শতাংশ বা তারো বেশী বেড়েছে। ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব)’র বার্ষিক প্রতিবিদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। গত বছর(২০১৭) দেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার আগের বছরের মূল্যস্ফীতির হারের শতকরা ৩২ ভাগ বেশী বলে জানা গেছে। এমন অস্বাভাবিক হারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল একচেটিয়াভাবেই বিত্তবানদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এই বৃত্তের বাইরে থাকা নিম্ন আয়ের ১২ কোটি মানুষ মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেনা । পণ্যমূল্যের স্ফীতি দেশে অন্তত ২ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে বলে ক্যাবের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকারের চরম ব্যর্থতার পরিচয় সুস্পষ্ট। কোন গণতান্ত্রিক ও জনবান্ধব সরকারের শাসনে নিত্যপণ্যের মূল্যে এমন নিয়ন্ত্রণহীন উল্লম্ফন চলতে পারেনা। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে কোটি কোটি মানুষকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া অথবা দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের মূল্য অব্যাহত হারে কমেছে বাংলাদেশে তখন জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর আগে গণশুনানীর নিয়ম রয়েছে, প্রতিটি গণশুনানীতে অংশগ্রহনকারি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো গ্যাস, বিদ্যুত ও জ্বালানীর মূল্য না বাড়িয়ে মূল্য কমিয়ে এনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দাবী জানালেও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মূল্য সমন্বয়ের কথা বলে প্রতিবারই মূল্য বাড়িয়েছে। জ্বালানি ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যমূল্য বেড়ে থাকে। সরকার যখন গ্রামীন দারিদ্র্য হ্রাসে নানাবিধ পরিকল্পনার কথা বলছে, উদ্যোগ নিচ্ছে তখন গ্যাস, বিদ্যুত ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধি এবং সিন্ডিকেটেড কারসাজি ও মুনাফাবাজির কারণে শহুরে নিম্ন ও মধ্যআয়ের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এই মুহুর্তে আন্তর্জাতিক রেটিংয়ে বিশ্বের অন্যতম অনিরাপদ ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পেয়েও জীবনযাত্রার জন্য বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর ঢাকা। কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ হলেও পণ্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রনে সরকারের ব্যর্থতার কারণে প্রতি বছর নতুন করে দরিদ্র্য মানুষের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে লাখ লাখ পরিবার।ক্যাবের সর্বশেষ রিপোর্টে গত বছর ঢাকার শহরে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির হার ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হাত ধরে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির জন্য মূলত সরকারের সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার দায় সবচেয়ে বেশী। দেশে বোরো ও আমন ধানের বাম্পার ফলন ও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার পরও কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাদ্যশস্য ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া, আপদকালীন ও জরুরী খাদ্য মজুদ অক্ষুন্ন রাখতে ব্যর্থতা এবং হাওরে ফসলহানির পর সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি পুরনে চাল আমদানীশুল্ক শুন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসার পরও খুচরা বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারার ব্যর্থতা সরকার এড়াতে পারবেনা। অন্যদিকে বাম্পার ফলন দিয়ে খাদ্য চাহিদা পুরণে অগ্রনী ভ‚মিকা পালনকারি ধান ও আলুচাষিরা ন্যয্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে মূলধন হারিয়েছে। সফল কৃষকরা এখন কৃষিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এ একটি অশনি সংকেত। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থরক্ষার বদলে আমদানীকারক ও মুনাফাবাজ সিন্ডিকেটকে লাভবান করার মাধ্যমে দেশকে সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। বল্গাহীন মুনাফাবাজি ও লুন্ঠনের সাথে জড়িতদের নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বৃদ্ধি ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।