Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা জেএমবির

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জঙ্গিরা ফের চট্টগ্রামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে তারা এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। এই মুহুর্ত্বে তারা চট্টগ্রামকে নিরাপদ মনে করছে। তবে সোমবার মধ্যরাতের সফল অভিযানের পরও তাদের ওই পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে বলে মনে করেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। এর আগেও নগরীতে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। সীতাকুন্ড, কাট্টলী এবং কর্ণফুলী এলাকায় সফল অভিযানে তাদের ওই প্রচেষ্টাও ভন্ডুল হয়। সোমবার মধ্যরাতে নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ির একটি আস্তানা থেকে দশটি তাজা গ্রেনেড, সুইসাইডাল বেস্টসহ নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে পাকড়াও করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় তারা নগরীর সদরঘাট থানায় আত্মঘাতি হামলার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলো। সেখান থেকে যে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয় তারা আত্মঘাতি দলের সদস্য।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) হাসান মো. শওকত আলী পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতেই জঙ্গিরা সদরঘাট থানাকে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল। এরা নব্য জেএমবির একাংশ। ৫-৬ জনের ছোট দলে তারা কাজ করে। টায়ার ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে তারা বাসা ভাড়া নিয়েছিল গ্রেফতার দুজন আত্মঘাতী দলের সদস্য। তিনি বলেন, পুলিশের কোনো স্থাপনায় নাশকতা করতে তাদের কথিত আমির ‘ডন’ এর নির্দেশে দুই মাস আগে চট্টগ্রামে আসে তারা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আশফাকুর এই গ্রæপটির ডেপুটি কমান্ডার। মিসবাহ উদ্দিন নামে জঙ্গি দলের অন্য এক সদস্যের মাধ্যমে দুই মাস আগে ওই বাসাটি ভাড়া নেয়। তাদের সাথে আর কারা আছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) এ এ এম হুমায়ুন কবীর বলেন, তারা আত্মঘাতি হামলার জন্য নগরীতে পুলিশের অনেক স্থাপনাই রেকি করেছিল। সদরঘাট থানাকে বেছে নেওয়ার কারণ- ওই থানার ওসি একজন নারী। তারা নারীর শাসন মানে না। এটা জানান দিতেই সেখানে হামলার পরিকল্পনা হয়। এছাড়া থানার ভেতর একটি মসজিদ আছে। সেখানে অনেকবার তারা যাওয়া আসা করেছে। এরফলে ওই থানার ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট ধারনা হয়। থানায় হামলা পরিকল্পনায় দুজন ছাড়াও মিসবাহ এবং জিবন ইসলাম নামের আরও দুজন জড়িত বলেও জানান তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে দুই জঙ্গি জানিয়েছেন, তাদের অবস্থান জানান দিতেই তারা আত্মঘাতি হামলার পরিকল্পনা করে।
গ্রেফতার আশফাকুর রহমান ওরফে আবু মাহির আল বাঙালি ওরফে রাসেল ওরফে সেলেবি তিতুশ (২২) এবং রাকিবুল হাসান ওরফে জনি ওরফে সালাহ উদ্দিন আয়ুবী ওরফে আবু তাইছির আল বাঙালি ওরফে হাসানকে (১৯) জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের সহযোগিদের পাকড়াও করার হবে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। দুই জঙ্গিকে যে ভবন থেকে গ্রেফতার করা হয় সেই মিনু ভবনের মালিক ইব্রাহিম মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, মিসবাহ উদ্দিন নিজেকে টায়ার ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। মাঝে মাঝে সে ফোনে কথা বলত। বলেছিল মিসবাহ মালিক এবং আশফাক ম্যানেজার। তবে তাদের বাসা প্রায় খালি থাকত। যে পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা বাসা ভাড়া নিয়েছিল- সেটি ভুয়া বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন সদরঘাট এলাকায় ঘনবসতি এবং শ্রমিকদের বসবাস বেশি হওয়ায় তারা ওই জায়গাটিই বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য বেছে নেয়।
এর আগে গত বছরের মার্চে মহানগরীর অদূরে সীতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযান অপারেশন এসল্ট-এ মারা যায় নারী-শিশুসহ কয়েকজন জঙ্গি। তার আগে মিরসরাইতেও জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগে নগরীর কাট্টলীর একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাবের। সেখান থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। দুই বছর আগে নগরীর কর্ণফুলী থানা এলাকার একটি বাড়িতে জেএমবির একটি আস্তানা থেকে উদ্ধার বিপুল সংখ্যক গ্রেনেড ও অস্ত্র। গ্রেফতার করা হয় কয়েকজন জঙ্গিকে। তাদের একজন পরে অভিযানের সময় নিজের গ্রেনেডে নিহত হয়। নিজেদের ফান্ড তৈরি করতে ছিনতাইয়ে নেমেছিল জেএমবির জঙ্গিরা। তিন বছর আগে নগরীর সদরঘাট এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে নিজেদের গ্রেনেডে মারা যায় দুই জঙ্গি। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় একে-২২ রাইফেল।
জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশ-জেএমবিকে নিষিদ্ধ করার পর তারা বেশ কয়েক দফায় চট্টগ্রামে আস্তানা গড়ে তুলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিগত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও সিরিজ বোমা হামলা করে জেএমবি। একই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে বই ও জ্যামিতি বাক্সভর্তি বোমা হামলা করে তারা। একই বছরের ২৯ নভেম্বর আদালতের প্রবেশপথে পুলিশ চেকপোস্টে আত্মঘাতি হামলা করে জেএমবি। এতে জঙ্গি হোসেন আলী ছাড়াও পুলিশ সদস্য রাজিব বড়–য়া, সীতাকুন্ডের সাবেক ফুটবলার শাহাবউদ্দিনসহ ৩ জন নিহত হয়। ওই হামলা পর নগরীর কাট্টলীর একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমান গোলাবারুদ উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয় জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল মহম্মদসহ বেশ কয়েকজনকে।
নিখোঁজ কিশোরকে খুঁজতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানা
নগরীর চকবাজার থেকে নিখোঁজ এক কিশোরের সন্ধান করতে গিয়ে সদরঘাট থানা এলাকার ওই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। কিশোর আবদুল্লাহ নিখোঁজের ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি জিডি হয়। ওই জিডির সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় সে নেত্রকোনার কমলাকান্দায় চলে গেছে। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী এএএম হুমায়ুন কবীর বলেন, আবদুল্লাহকে খুঁজতে গিয়ে জানা যায় সে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে। সদরঘাট এলাকায় তার সহযোগীদের কেউ আছে এমন সন্দেহের ভিত্তিতে সেখানে নজরদারি জোরদার করা হয়। আর এর জের ধরে উদ্ধার হয় জঙ্গিদের ওই আস্তানা। আবদুল্লাহ নগরীর কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত জুলাইয়ে হঠাৎ নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহকে ধরতে অভিযান চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেএমবি

১৭ আগস্ট, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ