Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মাঝ নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষ

ঘন কুয়াশায় সড়ক ও নৌ যোগাযোগে বিপর্যয়

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : উপর্যুপুরি ঘন কুয়াশায় গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক ও নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা চরম বিপর্যস্ত। ফলে গন্তব্যে পৌছা নিয়ে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগে পড়ছেন বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের ২১জেলার হাজার হাজার যাত্রী। কনকনে শীতের রাতে ফেরিঘাটগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে গিয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পরছেন নারী ও শিশুসহ বয়স্করাও। গত কয়েকদিন ধরেই কুয়াশার দাপট রাত পেরিয়ে সকাল ১০Ñ১১টা পর্যন্তও প্রলম্বিত হচ্ছে। ফলে দেশের প্রধান দুটি ফেরি রুটে দেড় থেকে দু’হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ছে। ফলে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি নৌপথ যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনেও বিপর্যয়ের পাশাপাশি ঝুঁকির কবলে। গত শুক্রবার প্রত্যুষে ঢাকাÑবরিশাল নৌপথে দুটি যাত্রীবাহী নৌযানের সংঘর্ষে বেশ কিছু যাত্রী আহত হবার পাশাপাশি নৌযানগুলোরও কম-বেশী ক্ষতি হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা ও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীবাহী নৌযানগুলো ৫Ñ৬ঘন্টা বিলম্বে পৌছেছে। বিআইডবিøউটিসি’র ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটি যাত্রী নিয়ে গতকাল সকাল ৬টার পরিবর্তে বেলা সাড়ে ১১টার পরে ঢাকায় পৌছে। সকালের খাবারের অভাবে নৌযানটির যাত্রীদের দুর্ভোগের কোন সীমা ছিলনা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে হীমশীম খাচ্ছেন ফেরি পরিচালনাকারী বিআইডবিøউটিসি’র কর্মকর্তাÑকর্মচারীরগণ। নৌ দিক নির্দেশনা প্রদানসহ নৌপথগুলো সচল রাখার পাশাপাশি সুষ্ঠু পরিচালন ব্যবস্থায় রাখতে বিআইডবিøউটিএ’র বিভিন্ন পরিদপ্তরের কর্মকর্তাÑকর্মচারীগণও পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। বার বার সতর্ক করার পরেও কতিপয় নৌযান চালকের বিবেকহীন কর্মকান্ডে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত শুক্রবার প্রতুষ্যে মুন্সিগঞ্জের কাছে বরিশালÑঢাকা রুটের ‘এমভি সুন্দরবরনÑ১০’এর ওপর আছড়ে পরে একই রুটের যাত্রীবোঝাই নৌযান ‘এমভি সুরভীÑ৭’। ঢাকার অদুরে কুয়াশাচ্ছন্ন শেষ রাতে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সুরভীÑ৭ এর চালক সুন্দরবন-১০’এর গায়ে আছড়ে পড়ে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এতে দুটি নৌযানেরই অনেক কেবিন যাত্রী বিছানা থেকে নিচে পড়ে যান। আতংকিত যাত্রীরা ডাক-চিৎকারও শুরু করেন। এমভি সুরভীÑ৭ ২০১৬-এর ২ জুলাই প্রত্যুষে ঢাকায় যাবার পথে বরিশাল বন্দরমুখি বিআইডবিøউটিসি’র রকেট স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’এর ওপর তুলে দিলে সরকারী নৌযানটির ৪ যাত্রী নিহত হয়। ঐ ঘটনায় নৌযানটির কাপ্তেন-এর সনদ বাতিল করেই নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তার দায়িত্ব শেষ করে।
গত কয়েকদিনের ঘন কুয়াশায় দেশের নৌ পরিবহন খাতই সবচেয়ে দুর্যোগের কবলে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত পাটুরিয়াÑদৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। একই দিন সকাল ৫টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মাওয়ার শিমুলিয়াÑকাঠালবাড়ী রুটেও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। কিন্তু পদ্মায় কুয়াশা কাটিয়ে সকাল ১০টায় ফেরি চালাচল স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও তখন প্রায় দেড় হাজার যানবাহন আটকে ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার আগেই মাত্র ১৩ঘন্টার মাথায় রাত ১১টা থেকে পাটুরিয়া ও রাত ১২টা ১০মিনিটে মাওয়া পুনরায় ফেরি পারপার বন্ধ হয়ে যায় ঘন কুয়াশার কারনেই। টানা ১২ঘন্টা বন্ধ থাকার পরে শুক্রবার সকাল ১১টায় পাটুরিয়া ও সকাল ১০টায় মাওয়া ফেরি পারপার শুরু হলেও আটকে পড়া যানবাহনের সংখ্যাও ছিল দুই সহ¯্রাধীক। কিন্তু মাত্র ১১ঘন্টার ব্যবধান পদ্মা বক্ষ ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাওয়ায় শুক্রবার রাত ১০টা থেকেই পাটুরিয়ায় পুনরায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। গতকাল(শনিবার)সকাল ৭টার পরে ফেরি চলাচল শুরু হলেও এসময় দৌলতদিয়ায় প্রায় ৬শ’ ও পাটুরিয়ায় আরো ৪ শতাধীক যানবাহন পারপারের অপেক্ষায় আটকা পরে।
গতকাল দিনভরই পাটুরিয়ায় পদ্মার দু পাড়ে অপেক্ষমান যানবাহনের ছিল বিশাল লাইন। জন দুর্ভোগ ছিল সব বর্ণনার বাইরে। গত কয়েকদিনের ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের রবি ফসলসহ জনজীবনেও বিরুপ প্রভাব পড়ছে। মাঝ পৌষের তাপমাত্রার পারদ কাঙ্খিত মাত্রায় না কমলেও ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা, গম ও শীতকালীন শাক-সবজীর ক্ষেতের যথেষ্ঠ ক্ষতি হচ্ছে। চলতি মওশুমে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। অথচ ডিসেম্বরের শেষ ও জানুয়ারীতে বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম-বেশী থাকার কথা।
গতকাল বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.১ডিগ্রী সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ছিল ২৭ডিগ্রী। আর পটুয়াখালীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.১ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে দেশের উত্তরারঞ্চলে ইতোমধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের নিচে ৯.৪ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেছে গতকাল ডিমলাতে। অপারদিকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩০.৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। বরিশালে গত ২৬ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৫ডিগ্রী ও গত শুক্রবার ছিল ১৫ডিগ্রী সেলসিয়স। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ২ডিগ্রী ওপরে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ