পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি’র মুসলমান বিদ্বেষের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ক্ষমতায় আসার পর দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানরা হত্যা ও নিগ্রহের শিকার হয়েছে। অথচ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, বিজেপি কর্তৃক মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। এমনকি মুসলমান নাগরিকদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আসামে আজ মধ্যরাতে যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশ করা হবে, তার মূল উদ্দেশই হচ্ছে সেখানে বসবাসরত মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করে বিতাড়ন করা। আসামের অর্থ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, আসামে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করতেই নাগরিকপঞ্জি করা হয়েছে। এতে যাদের নাম থাকবে না, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তবে যেসব হিন্দু বাংলাদেশী আসামে এসেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অনুসারে তাদের আসামে আশ্রয় দেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আসামে ২০ লাখেরও বেশি মুসলমান রয়েছে, যাদের শেকড় বাংলাদেশে। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি অনুযায়ী, যারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত রাজ্যটিতে প্রবেশ করেছে, তারাই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবে। নাগরিকপঞ্জিকে কেন্দ্র করে আসামজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আসামের মুসলমান নেতারা বলছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতো তাদেরও রাষ্ট্রহীন করতে নাগরিকপঞ্জি ব্যবহার করা হচ্ছে।
আসামে নাগরিকপঞ্জি ব্যবহার করে মুসলমান বিতাড়নের যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে, তা যে মুসলমানদের প্রতি বিজেপির ক্রোধ এবং বৈরি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ দলটি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বাংলাদেশী হিন্দুদের আশ্রয় ও নাগরিকত্বের অবাধ সুযোগ করে দিলেও, যুগের পর যুগ সেখানে বসবাস করা বাংলাদেশী মুসলমানদের বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছর রাজ্যটির ক্ষমতায় বসেই মুসলমান বিতাড়নের এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাধ্যমে দলটির চরম উগ্রবাদীতা আবারও প্রকাশিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আসামের মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে এবং তাদের বাংলাদেশে আসা ছাড়া গতি থাকবে না। ভারত সরকারের এ উদ্যোগ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতোই মুসলমানদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার মতো এক ধরনের ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী আখ্যায়িত করে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে, খুন ও নির্যাতন-নিপীড়নে মাধ্যমে যেভাবে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে, ভারত সরকারও ঠিক একই পন্থা অবলম্বন করতে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বলা যায়, আসামের মুসলমানরা সেখানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হতে যাচ্ছে। বংশ পরম্পরায় বসবাস করা মুসলমানদের বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রহীন করার এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর মাধ্যমে নতুন করে বিশ্বে চলমান মুসলমান নির্যাতনের আরেকটি অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। অনিবার্য ফল হিসেবে, এর দায় ভোগ করতে হবে বাংলাদেশকে। অথচ ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নাকি যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ সুসম্পর্কের পর্যায়ে রয়েছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে যা চেয়েছে, বিনাবাক্য ব্যয়ে তাই পেয়েছে। এমনকি নিজের ক্ষতি করে হলেও বাংলাদেশ ভারতের চাহিদা পূরণ করেছে। বাংলাদেশের সড়ক-বন্দর ব্যবহার করে আসামসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ভারত তার মালামাল নেয়াসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশের ন্যায্য দাবীর কোনোটিই পূরণ করেনি। বরং সীমান্তে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশী নাগরিকরা বিএসফ কর্তৃক হয় নির্যাতন, না হয় হত্যার শিকার হচ্ছে। ভারত বন্ধুত্বের জবাব দিচ্ছে গুলি ও নির্যাতনের মাধ্যমে। এখন আসাম থেকে ‘বাংলাদেশী’ বিতাড়নের নামে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার নতুন ষড়যন্ত্র করছে। যেখানে ১৯৫১ সালের পর আসামে আদমশুমারি হয়নি, সেখানে গত বছর রাজ্যটিতে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেই বিজেপি আদমশুমারি করেছে। আদমশুমারি করা স্বাভাবিক বিষয় হলেও বিজেপি যে তার উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে মুসলমানদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য এই আদমশুমারি করেছে, তা এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশকে যে বিপদে ফেলেছে, এ বিপদে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের পক্ষ নিলেও ভারত বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়নি। সে নীরব থেকেছে। তাহলে ভারত বাংলাদেশের কিসের বন্ধু হলো? মিয়ানমার সরকার মুসলমানদের বিতাড়নে যে হিংস্র পন্থা অবলম্বন করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেখানে গিয়ে তা সমর্থন করেছেন এবং এ থেকে উৎসাহী হয়েই আসাম থেকে মুসলমান বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এটাও উল্লেখ করা দরকার, ভারতে আশ্রিত অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের পাশে বিশ্বের সিংহভাগ দেশ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আসামের মুসলমানদের পাশেও একইভাবে দাঁড়াবে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বকে আসাম থেকে মুসলমান বিতাড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে জোরালো প্রতিবাদ জানাতে হবে। বলতে হবে, আসামের মুসলমানদের উচ্ছেদ করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া বরদাস্ত করা যাবে না। আমরা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ও অমানবিক পদক্ষেপ থেকে ভারতকে সরে আসার আহ্বান জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।