পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ব্রির বিজ্ঞানীরা গত বুধবার আরো ৫টি নতুন জাতের ধান অবমুক্ত করার তথ্য প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি-৮৬ জাতটি বাংলাদেশে আবাদযোগ্য এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ফলনশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরীক্ষামূলক চাষাবাদে দেখা গেছে, ব্রি-৮৬ জাতটিতে ব্রি-২৮ জাতের চেয়ে প্রতি হেক্টরে অন্তত ৫০০ কেজি বেশী ফলন পাওয়া গেছে। ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নতুন চারটিসহ সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভাবিত ১০টি জাতের ধান নিয়ে উচ্ছসিত আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এসব জাত বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে এবং ভবিষ্যতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে জানিয়েছিলেন। তারা ব্রি-৮৬ জাতসহ আগে উদ্ভাবিত ৮১টি জাতের সাথে এ বছর ব্রি-৮২, ৮৩, ৮৪ ও ৮৫ ভ্যারাইটি আবাদযোগ্য করে তোলার মধ্য দিয়ে নতুন মাইলফলক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। এ জাতগুলো আউশ, আমন ও বোরো মওসুমে আবাদযোগ্য হিসেবে বিভক্ত রয়েছে। ব্রি-৮৬ জাতের সাথে আগের উদ্ভাবিত জাতগুলোর পার্থক্য হচ্ছে-এটিকে দেশের প্রথম বায়োটেক রাইস ভ্যারাইটি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই প্রজাতির ধান চাষে যান্ত্রিক হার্ভেস্ট মেশিনের ব্যবহার সহজসাধ্য হওয়ায় চাষিদের ধানকাটা শ্রমিকের উপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানিয়েছেন। নিয়ামত নামের একটি ইরাণী ধানের ভ্যারাইটিকে অ্যান্থার কালচার নামক জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রি-৮৬ ধানটি উদ্ভাবন করা হয়েছে যা উচ্চফলনসহ উচ্চপুষ্টিসমৃদ্ধ।
উষ্ণায়ণ বা গেøাবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের মত জনবহুল ও দরিদ্র দেশগুলো ক্রমহ্রাসমান খাদ্য উৎপাদনের বৈশ্বিক বাস্তবতায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে জনসংখ্যার চাপ এবং খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের কারণে আবাদি জমি অকৃষিখাতে চলে যাওয়ায় আবাদি জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ ক্রমহ্রাসমান জমিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পুরণের সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হচ্ছে। গত পাঁচ দশক ধরে আমাদের ধান গবেষক, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষকরা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছেন। স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে জনসংখ্যা ৭ কোটি এখন ১৭ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ধানের উৎপাদনও প্রায় তিনগুন হয়েছে। ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পুরণে এ এক বৈপ্লবিক সাফল্য। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্ষরাসহিষ্ণু, বন্যাসহিষ্ণু ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করে আমাদের ধান গবেষকরা বিশ্বের সামনে বিষ্ময়ের জন্ম দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক রর্বাট স্টুয়ার্ড ফিলিপাইনের বানোসে অবস্থিত তার অফিসে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও উৎপাদকদের সাফল্য সম্পর্কে বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সমীক্ষা অনুসারে ২০২০ সালের আগে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে সক্ষম হবেনা বলে ভবিষ্যদ্বানী করা হলেও সে সব ভবিষ্যদ্বানী মিথ্যা প্রমান করে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে ইতিমধ্যেই স্বয়ংসম্পুর্ন হয়েছে।
ব্রি-র বিজ্ঞানীদের নব উদ্ভাবিত ধানগুলো একদিকে যেমন উচ্চফলনশীল, অন্যদিকে তেমনি ক্ষরা, বন্যা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু । সেই সাথে জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মত খনিজসহ বাড়তি ভিটামিন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনেও তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষকরা ধানের পাশাপাশি উন্নত জাতের ভ’ট্টা, আলু, আম, পেয়ারাসহ নানা জাতের খাদ্যশস্য ও ফল উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত। নদনদী শুকিয়ে পানি সংকট, ক্ষরা, আকষ্মিক বন্যা ও উপকুলীয় জলোচ্ছাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এরই মধ্যে বাংলাদেশকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। এহেন বাস্তবতায় পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার উপযোগি ফসলের জাত আবাদের প্রতি নজর দিতেই হবে। আমাদের ব্রি-র বিজ্ঞানীরা সে কাজে নিজেদের সক্ষমতার প্রমান দিয়ে চলেছেন। এ জন্য তাদের প্রতি অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। তাদের এমন সাফল্যে পুরো জাতি আনন্দিত ও আশান্বিত। এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। ধান ও কৃষি গবেষনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও গবেষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা ও প্রণোদনা দিতে হবে। ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষনা বাজেট বাড়াতে হবে। পাশাপািিশ বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সাথে কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য ও ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণের উপযোগি বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।