পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের দ্রুত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিক কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই দফায় প্রাক-সম্ভাব্যতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। তবে একই রুটে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক)। এজন্য পৃথক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। এ নিয়ে গত এক বছর ধরে দ্ব›দ্ব চলছে মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু বিভাগের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাল্টাপাল্টি চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত। সওজের অধীনেই ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। আগামী জানুয়ারী থেকে কাজ শুরু হবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, আগে ডিপিপি হবে তারপর প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সেটি অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে। একই বিষয়ে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, কারা এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করবে তা আমি জানি না। যেহেতু মহাসড়ক বিভাগ এটার ফিজিবিলিটি করেছে তারাই ভালো বলতে পারবে। এদিকে, পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, মহাসড়ক বিভাগ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবে- মৌখিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত হলেও কাগজপত্রে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় ২০০৮ সালে। এতে ব্যয় হয় ৭০ কোটি টাকা। আর এডিবির ঋণে ২০১২ সালে এর সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৯৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে এলিভেটেড (উড়ালপথ) ও অ্যাট গ্রেড (ভূমির সমতল) উভয় পথেই নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করা হয়। পরবর্তীতে কিছু অংশ উড়ালপথে ও বাকি অংশ সমতলে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত বছর এপ্রিলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ। এতে বিদ্যমান মহাসড়কের পাশ দিয়ে এটি নির্মাণের জন্য এলাইনমেন্ট অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা প্রস্তাবনায় যুক্তি দেখানো হয়, উড়ালপথে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভূমি কম অধিগ্রহণ করতে হবে। ফলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে কম। এছাড়া বাজার বা অন্য কোনো সমস্যা এতে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী এতে অনুমোদনও দেন।
সূত্র জানায়, সওজ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করার পর একই রুটে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে সেতু বিভাগ। তারা প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রমও শুরু করে। সওজের সমীক্ষাকে বাদ দিয়ে পুরোটা উড়ালপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সমীক্ষার কাজ শুরু করে সেতৃ কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয় ৮০ কোটি টাকা। নিজস্ব অর্থায়নে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত বছর ২৩ অক্টোবর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহŸান করে সংস্থাটি। ইওআইতে সড়কপথের পাশাপাশি হাইস্পিড ট্রেনের কথা উল্লেখ থাকায় এ নিয়ে আপত্তি তোলে রেলওয়ে। এমনকি এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞানার্জনের জন্য ১২ সদস্যের একটি বিশেজ্ঞ দলকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেতু বিভাগ। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী তাতে সম্মতি দেন নি। অপরদিকে, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সেতুৃ কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে সড়ক বিভাগ। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে চিঠিও দেয়া হয়। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রস্তাবে আপত্তি তুলে পরিকল্পনা কমিশনেও চিঠি দেয় সড়ক বিভাগ। সড়ক বিভাগের আপত্তি মানতে রাজি ছিল না সেতু বিভাগ। এভাবে গত এক বছর ধরে দুই বিভাগের দ্ব›েদ্ব আটকে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ। সর্বশেষ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। অর্থমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে এ বিষয়ে সমাধান কামনা করেছে সড়ক বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ বিভাগের আওতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এরই পথিমধ্যে সেতু বিভাগ কর্তৃক এ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে গ্রহণ করা হলে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না। যদিও বিল্ড ওন অপারেট ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের জন্য ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল তিনটি ভিন্ন রুট প্রস্তাব করে। পরে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। তিনি এক্সপ্রেসওয়ের কিছুটা ভূমির সমতলে ও কিছু অংশ উড়ালপথে নির্মাণের সুপারিশ করেন। এর ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়ের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের ভিত্তিতে পুরো এক্সপ্রেসওয়েটি তিন ভাগে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকা-কুমিল্লা ৮৪ কিলোমিটার, কুমিল্লা-ফেনী ৫২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ও ফেনী-চট্টগ্রাম ৮০ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য তিনটি প্যাকেজের ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিংয়ের (ভিজিএফ) প্রস্তাব পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সবগুলো প্যাকেজের জন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) ভিজিএফ-সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সওজের আওতায় পিপিপিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগকারী নির্বাচনের লক্ষ্যে বিড ডকুমেন্ট প্রস্তুতির কাজ চলছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটিতে সওজের অধীনে হস্তান্তরে ব্যবস্থা গ্রহণে অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয় চিঠিতে।
এ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ হাজার যানবাহন চলাচল করত। ২০২০ সালে তা ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ২০৩০ সালে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৫ হাজার। এক্ষেত্রে বিদ্যমান মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হলেও খুব বেশি দিন এর সুবিধা পাওয়া যাবে না। এছাড়া মহাসড়কটিতে মাসে গড়ে ২০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ মহাসড়কে রয়েছে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট। এক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণই একমাত্র সমাধান।
এক্ষেত্রে তিনটি রুট বিবেচনা করা হলেও সবশেষে বিদ্যমান মহাসড়কের পাশ দিয়েই এটি নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কাঁচপুর থেকে দাউদকান্দি, কুমিল্লা, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর দুই পাশ আটকানো থাকবে। ইচ্ছে করলেই গাড়ি প্রবেশ বা বের করা যাবে না। শুধু নির্ধারিত জায়গা দিয়েই গাড়ি প্রবেশ ও বের করা যাবে। এটি নির্মিত হলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। এক্সপ্রেসওয়েটির দৈর্ঘ্য হবে ২১৮ কিলোমিটার। ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে থাকা কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুও নির্মাণ করা হবে ছয় লেনের। এগুলোয় সড়ক ও রেলপথ উভয় ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া সার্ভিস রোড, ৭টি ইন্টারচেঞ্জ, তিনটি সার্ভিস স্টেশন, ৬৪টি ওভারপাস, ৪৪টি ভেহিকল আন্ডারপাস, চারটি মাঝারি সেতু ও ২৮টি ছোট সেতু নির্মাণ করা হবে প্রকল্পটির আওতায়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ১৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে উড়ালপথে নির্মাণ করলে এতে ব্যয় পড়বে ৭২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। তিন ধাপে ৭০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে এ অর্থ ব্যয় হবে। ২০২২ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।