পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট চলছে। বাসা-বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। বন্ধ হয়ে গেছে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কলকারখানার উৎপাদনের চাকা থমকে গেছে। গভীর সঙ্কটে পড়েছে গ্যাস নির্ভর শিল্পকারখানা। সিএনজি ফিলিংস্টেশনে শত শত গাড়ির লাইন। গ্যাসের অভাবে চলছে না অটোরিকশা, বাস মিনিবাস। এমনিতেই চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম। তার উপর হঠাৎ করে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় সঙ্কট ভয়াবহ হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন বর্তমানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২০৫ মিলিনয়র ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে ২০ থেকে ২৫ মিলিনয় ঘনফুট সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়।
সরকারি হিসাবে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৫১০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতদিন সরবরাহ দেয়া হতো ২২০ থেকে ২২৫ মিলিনয় ঘনফুট, এখন তাও মিলছে না। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে সচল রাখতে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি জাতীয় গ্রিড থেকে আরও গ্যাস চেয়েছে। চট্টগ্রাম চেম্বারসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও চট্টগ্রামে কলকারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এসব প্রস্তাব আমলে নেয়া হচ্ছে না। ফলে গ্যাস সরবরাহ কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চারটি ইউনিট বন্ধ আছে। এই কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে গেছে। শীতেও লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। পিডিবি’র হিসাবে বুধবার চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৭৪৬ মেগাওয়াট। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৩৩৬ মেগাওয়াট। পিডিবির সহকারি পরিচালক (জনসংযোগ) মনিরুজ্জামান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। একই কারণে বন্ধ আছে শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। একই এলাকার ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টও গ্যাসের অভাবে বন্ধ আছে।
রি-রোরিং মিল, তৈরী পোশাক কারখানাসহ গ্যাস নির্ভর শিল্প কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। কোন কোন কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে পোশাক খাতের ওয়াশিংপ্ল্যান্টগুলো। বিজিএমইএ’র একজন নেতা জানান, তৈরি পোশাক শিল্প গ্যাস সঙ্কটে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়ও। উৎপাদন না হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজিকরণ করা যাচ্ছে না। এতে করে বিদেশি ক্রেতা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন পোশাক কারখানা মালিকেরা। মহানগরীসহ এ অঞ্চলের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসচালিত যানবাহনের ভিড় লেগেই আছে। গ্যাস না পেয়ে অনেক যানবাহন বন্ধ রয়েছে। সিএনজি অটোরিকশার চালকরা এই অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তারা বলছেন গ্যাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পর্যাপ্ত গ্যাস মিলছেনা। যতটুকু গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে কয়েক ঘণ্টার বেশি গাড়ি চলছে না। এতে করে মালিকের জমার টাকা দিয়ে নিজের পকেটে আর কিছুই থাকছে না। ফলে তাদের পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাসাবাড়িতেও চুলা জ্বলছে না। এতে করে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, জামালখান, রহমতগঞ্জ, নাসিরাবাদ, চকবাজার, মরাদপুর, বহদ্দারহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ নেই। এসব এলাকায় প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চুলা আর জ্বলছে না। আবার রাত আটটা থেকে ১১টা পর্যন্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কোন কোন এলাকায় গ্যাস থাকলেও সরবরাহ কম থাকায় চুলা জ্বলে মাটির প্রিদীমের মতো। এতে সংকটে পড়েছেন গৃহিনীরা। হোটেল রেস্তোরাতেও গ্যাসের সঙ্কটে রান্না করা যাচ্ছে না। নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা তাজ নাহার বলেন, বাড়ির নীচ তলায় গ্যারেজে লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। এতে চুলার ধুঁয়ায় ভবন কালো হয়ে যাচ্ছে। বাসায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা রয়েছেন। তাদের জন্য গরম পানি করা এবং খাবার গরম করা যাচ্ছে না। আগ্রাবাদ বেপারি পাড়ার বাসিন্দা নাহিদা সুলতানা ও তার স্বামী দুজনেই চাকুরি করেন। সকালে উঠে তাদের নাস্তার জন্য হোটেলে ছুটতে হয়। ছেলে মেয়েদেরও বাইরের খাবার দিতে হচ্ছে। পতেঙ্গা এলাকার গৃহিনী হাসিনা ম্যাডাম জানান, ভোর হতেই গ্যাস চলে যায়। বিকেল নাগাদ গ্যাস আসলেও চাপ কম থাকায় তা দিয়ে রান্না করা যায় না। গ্যাস সঙ্কটের সাথে পাল্লা দিয়ে সিলিন্ডার গ্যাসের দামও বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ালেও রান্নার চুলায় গ্যাস মিলছে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষের শেষ নেই।
কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, নগরীতে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি। শিল্পকারখানার গ্রাহক প্রায় এক হাজার। আর সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে ৬২টি। আবাসিক গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা সর্বোচ্চ ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। ৬২টি ফিলিং স্টেশন থেকে গাড়িগুলো টেনে নিচ্ছে আরও ৩০-৩২ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। আবার সার কারখানা বন্ধ রেখে সচল করা হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে চট্টগ্রামে। গ্যাসের অভাবে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বিদ্যমান কারখানাগুলো সম্প্রসারণ কিংবা নতুন ইউনিট চালু করতে পারছে না গ্যাসের অভাবে। এতদিন সঙ্কট শিল্পাঞ্চলে থাকলেও এখন তা আবাসিক খাতেও বিস্তৃত হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই নগরীর বিস্তৃত এলাকায় গ্যাস সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে চট্টগ্রাম চেম্বারসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন এমনকি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও দাবি জানানো হয়। তবে এসব দাবি আমলে নিচ্ছে না সরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।