পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘বাবা এভাবে কেন চলে গেলে, এখন আমাদের কী হবে।’ এভাবেই আহাজারি করছিলেন দীপা তালুকদার (১৫) ও তনিমা তালুকদার (১৩)। মাকে জড়িয়ে ধরে এ দুই কিশোরীর কান্নায় ভারী হয়ে উঠে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বাতাস। তাদের আহাজারিতে সবার চোখে পানি। সান্ত¦না দেয়ার কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্বজনেরা। বাবা প্রদীপ তালুকদারের (৪৬) মৃত্যুর খবরে মায়ের সাথে তারা ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে প্রদীপের স্ত্রী বিলাপ করে বলছেন, প্রদীপ আমাদের ছেড়ে কোথায় গেলে। তিনি বলেন, দুই কন্যাকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন ছিল তার। প্রদীপের মৃত্যুতে যেন নিভে গেছে সাজানো গোছানো একটি সংসারের আশার প্রদীপ।
গতকাল (সোমবার) দুপুরে নগরীর জামালখানের রীমা কনভেনশন সেন্টারে পদদলিত হয়ে যে ১০ জন নিহত হন তাদের একজন প্রদীপ তালুকদার। নগরীর আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গা এলাকার মনোরঞ্জন তালুকদারের ছেলে প্রদীপ ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ করতেন। তার বড় মেয়ে দীপা তালুকদার আগ্রাবাদ সিডিএ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট মেয়ে তনিমা এবার একই স্কুল থেকে জেএসসি দিয়েছে। বাবাকে হারিয়ে দুই কন্যা চোখে অন্ধকার দেখছেন। সংসার কিভাবে চলবে, দুই মেয়েকে কিভাবে বড় করবেন হাসপাতালের বারান্দায় বসে তা নিয়ে আহাজারি করছিলেন তাদের মা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রদীপ বান্দরবান গিয়েছিলেন কাজে। রোববার রাতে বাসায় ফিরে জানতে পারেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর মেজবানের কথা। দুপুরের আগে মেজবান খেতে বের হন রীমা কনভেনশন সেন্টারে। যাওয়ার আগে বলে যান, চৌধুরীর মেজবানে যাচ্ছি। এটাই ছিল তার সাথে শেষ কথা। দুপুর ২টায় এক প্রতিবেশী ফোন করে স্বামীর মৃত্যুর কঠিন খবরটি জানান তাকে। প্রদীপের গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর ফতেহপুরে।
পদদলিত হয়ে নিহত লিটন দেবনাথের দুই শিশু পুত্র-কন্যা ও স্বজনদের লাশের পাশে আহাজারি করতে দেখা গেছে। আনোয়ারা উপজেলার মোহছেন আউলিয়া এলাকার প্রকৃতরঞ্জন দেবনাথের ছেলে লিটন দেবনাথ (৪৩) নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে থাকেন। একসময় নগরীর হাজারিগলিতে একটি ওষুধের দোকান ছিল তার। শেয়ার ব্যবসার লোকসানে পড়ে ওই দোকানটি বিক্রি করে দেন তিনি। অভাব-অনটনে চলছে তার সংসার। মেয়ে টিনা (১২), ছেলে নবান্ন (৮) ও স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট সংসার। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ভালবাসতেন তিনি, আর তাই মেজবানে হাজির হন। তবে খাওয়ার টেবিলে পৌঁছার আগেই রীমা কনভেনশন সেন্টারের প্রধান ফটকেই পদপিষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। স্ত্রী জানতেন না তিনি এখানে এসেছেন। দুপুরে খেতে না যাওয়ায় মোবাইলে ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পান। এরপর টিভির খবরে দেখেন স্বামীর লাশের ছবি। ছবি দেখে ছুটেন হাসপাতালে। হাসপাতালের বারান্দায় তার ছোট ভাই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। তিনি বারবার বলছিলেন, দাদা তো গেলেন তার দুই অনাথ শিশুকে এখন দেখবে কে। পদপিষ্ট হয়ে নিহত ১০ জনের মধ্যে আরও রয়েছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার সনাতন দাশের ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ৪র্থ বর্ষের ছাত্র দীপঙ্কর দাশ রাহুল। তার পরিবারের সদস্যরাও হাসপাতালে লাশের পাশে বসে আহাজারি করছিলেন। নিহত ১০ জনের মধ্যে বেশিরভাগই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের মৃত্যুতে এসব পরিবার কঠিন সঙ্কটে পড়েছে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে মুহিবুল হাসান নওফেল। স্বজন হারাদের সাথে তিনিও কেঁদেছেন, দিয়েছেন সান্ত¦না।
এদিকে হতাহতের স্বজনরা বলছেন, অতীতে মহিউদ্দিন চৌধুরী অসংখ্য মেজবানের আয়োজন করেছেন সেখানে কখনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তার কুলখানির এ মেজবানে এমন ট্র্যাজেডি ঘটবে তা কারো কল্পনাতেও ছিলনা। তারা এজন্য ওই কনভেনশন সেন্টারে তদারকির দায়িত্বে থাকাদের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। আহতদের কয়েকজন বলেন, আমরা শুধুমাত্র পেট ভরে খাওয়ার জন্য সেখানে যাইনি। চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এ আয়োজনে আমাদের যাওয়া। সেখানে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন তা ভাবতেও পারেননি তারা। আহতদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, কনভেনশন সেন্টারের সামনে মানুষের ভিড় বাড়তেই হঠাৎ গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। বারবার অনুরোধ করার পরও ভেতর থেকে গেইট খোলা হচ্ছিল না। তারা বলেন, গেইট খুলে দিলে লোকজন কনভেনশন সেন্টারের ভেতরে চত্বরে গিয়ে অবস্থান নিতেন। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। সেখানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিল তারা এ দায় এড়াতে পারেন না। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। মহানগরীর আরও ১৩টি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করা হয়। প্রায় সবগুলোই হয় চরম বিশৃঙ্খলা। এ নিয়েও অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। জানা গেছে, মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে কুলখানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে আয়োজন করা হলেও অব্যবস্থাপনার কারণে তা পুরোপুরি সফল হয়নি। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ভালবাসেন এমন অনেকে মেজবানের জন্য গরু পাঠিয়েছেন। অনেকে রান্নাবান্নায় তদারকি ও স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন নিজ উদ্যোগে। এরপরও এ ধরনের দুর্ঘটনায় হতবাক সাধারণ মানুষ। কুলখানিতে এসে লাশ হয়ে ফেরার এ ট্র্যাজেডি স্বজন হারানোদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নাড়া দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।