পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উত্তরের রংপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হাওয়া উত্তরের আরেক জনপদ শিক্ষানগরী রাজশাহীতে বেশ জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে। তা ছাড়া দুয়ারে তো কড়া নাড়ছে নির্বাচন। হিসাব মতে, সময় মাত্র কয়েকটা মাস। যদিও বড় দু’দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে হাইকমান্ড সবুজ সঙ্কেত দেয়ার পর কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে তৎপর হয়ে উঠেছেন। গতবার মেয়র নির্বাচনে বেশ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার কাঁটার যন্ত্রণাটা এবার উপড়ে ফেলতে চান। সে লক্ষ্য নিয়ে বছরখানেক ধরে তৎপর। হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ায় তা আরো বেগবান হয়েছে। বসে নেই বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা মো: মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। নির্বাচনে জিতলেও রাজরোষে পড়ে তার মেয়রগিরিও খুব সুখকর হয়নি। কারাগার আর আদালতপাড়ায় বেশ সময় গেছে। আইনি লড়াইয়ে জিতে মেয়র আসনে বসে চেষ্টা করছেন নগরবাসীর জন্য কিছু একটা করার। বিধি বাম, রাজরোষ এখনো পিছু ছাড়েনি। কিছু করতে গেলে দরকার সরকারি টাকা ও নেকনজর। দুটোর একটিও নেই তার উপর। আর সিটি করপোরেশনের অবস্থা নূন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো। তারপর আবার দল আর মামলার হাজিরা। সব মিলিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। আসন্ন মেয়র নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তার দলের সবুজ সঙ্কেত পাবেন এমনটি প্রায় নিশ্চিত। রাজশাহীর নির্বাচনী হাওয়ায় ঘুরেফিরে আসছে বুলবুল-লিটনের নাম।
এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। লড়াই হবে নৌকা বনাম ধানের শীষের। অন্যবার ভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন হয়েছে। আর তাই নিরপেক্ষতা দেখানো জন্য নাগরিক কমিটির মতো কমিটির ব্যানারে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে। এবার সে অবস্থা নেই। সরাসরি আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপির নির্বাচনী যুদ্ধ। এ কারণে এবারের নির্বাচনে থাকবে ভিন্নমাত্রা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দু’দলের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এর ফলাফলের প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপর। সে নির্বাচনেরও খুব একটা দেরি নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের প্রার্থীকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। চায়ের কাপের ঝড়ে চলে এসেছে সিটি নির্বাচনের বিষয়টি। চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য। দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ঘরের শত্রæ বিভীষণ আর দলগুলোর কর্মকান্ডের উপর নগরবাসী আস্থার ব্যাপারটি। তাই এবারের নির্বাচনের হিসাব-নিকাশের ব্যাপারটি আপাত:দৃষ্টিতে বেশ জটিল মনে হচ্ছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পর ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত আর কখনোই এখানকার আসন আওয়ামী লীগের ঘরে যায়নি। সে সময় উপ-নির্বাচনে জাসদের ময়েন উদ্দিন মানিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর পদ্মায় অনেক পানি গড়িয়েছে। বালু চরের বিস্তৃতি ঘটেছে। আসনগুলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের কবলে চলে যায়। ১৯৮৭ সালের দিকে এরশাদ সরকার রাজশাহী পৌরসভাকে পৌর করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। প্রথম প্রশাসক হন অ্যাডভোকেট এম এ হাদী। এক বছর পর ১৯৯০ সালে পৌর করপোরেশন সিটি করপোরেশনের মর্যাদা পায়। অল্প কিছুদিনের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: দুরুল হুদা মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ’৯১ সালে বিএনপির তরুণ নেতা মিজানুর রহমান মিনু মেয়রের দায়িত্ব পান। ১৯৯৪ সালে মেয়র নির্বাচনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান মিনু। পাঁচ বছর পর ফের মেয়র নির্বাচিত হন মিনু। দীর্ঘ ১৭ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রগিরি করেছেন দৌর্দন্ড প্রতাপের সাথে। এর মাঝে একবার আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এলেও মিনুই ছিলেন মেয়র। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে বেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া লাগিয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি মিনুই ছিলেন মেয়র। এরপর মঈন-ফখরুদ্দিনের রাজনৈতিক সিডরে হারাতে হয় মেয়রের আসনটি। মিনু কারাগারে থাকায় ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে মেয়র মো: মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বুলবুলকে হারিয়ে লিটন নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেন ওই বছরের শেষের দিকে। পরবর্তী মেয়র নির্বাচনে বাতাস ঘুরে যায়। লিটনকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে বুলবুল নির্বাচিত হয়ে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখনো আসীন রয়েছেন। এবারো নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন এ দু’জনই। নির্বাচনে দুটি বড় দল। আবার প্রার্থীও শক্তিশালী। একজন চান আসন ধরে রাখতে, অন্যজন আসনটি ফিরে পেতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দু’দলের কাছে আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির জন্য তার দুর্গ পুন:রুদ্ধার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যুর পাশপাশি এখানকার অর্থাৎ সদর আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নেই। রয়েছে জোটের শরিক ওয়াকার্স পাটির ফজলে হোসেন বাদশা। তার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্পর্ক বেশ শীতল। তাই তারা নগরীতে তাদের প্রভাব ধরে রাখতে অন্তত মেয়রের আসনটি ফিরে পেতে চায়। যদিও সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র না হলেও এখনো তার প্রভাব রয়েছে সবখানে। সরকারি-বেসরকারি সব অনুষ্ঠানে তার সদর্প বিচরণ রয়েছে।
অন্যদিকে নগর পিতা হওয়ার পরও সরকারি-বেসরকারি সব অনুষ্ঠানে মেয়র বুলবুল উপেক্ষিত। কারণ বিএনপির নেতা। বিষয়টি নগরীর সচেতন মহলের কাছে দৃষ্টিকটু। এরপর রয়েছে সরকারি তহবিল বরাদ্দ বঞ্চনা। ফলে থমকে আছে নগরীর উন্নয়ন। রাজ রোষাণলের এমন কারণে নগরী উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়ায় নগরবাসী কম ক্ষুব্ধ নন। যার বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে ব্যালটে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভোটের কি দরকার। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকবে সে দলের একজনকে মেয়রের চেয়ারে বসিয়ে দিলে সব ল্যাঠা চুকে যাবে। এতে করে সরকারি বরাদ্দ আসবে। উন্নয়ন হবে। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট নিয়ে নগরবাসীকে বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না। বড় দু’দলের প্রার্থীর বাইরে এরশাদের জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিপিবি বাসদ প্রার্থী দেবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কারা প্রার্থী হতে পারেন এমনটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গতবারও মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন সমাজকর্মী মো: হাবিবুর রহমান। তিনি এবারো প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।
শুধু মেয়র প্রার্থী নয়, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে বর্তমানদের পাশাপাশি অনেক নতুন মুখ ওয়ার্ড কাউন্সিলের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে তাদের কথা জানান দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে নগরীতে স্মার্ট কার্ড বিতরণের সময় ওয়ার্ডবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বর্তমানদের পাশপাশি নতুন সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতাও ছিল নজরকাড়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।