Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জাতীয় ঐক্যের শপথ

বিএনপির বিজয় র‌্যালিতে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জাতীয় ঐক্য তৈরির শপথ নিয়েছে বিএনপি। জাতীয় পতাকা, নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন ও রঙিন বেলুন নিয়ে গতকাল (রোববার) বিকালে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক। শোভাযাত্রা থেকেই অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। স্বাধীনতার ৪৬তম বছর পূর্তিতে গতকাল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরুর উদ্বোধনকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ি বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রা শুরু করে বিএনপি। এর আগে দুপুর থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়া পল্টন সড়কের সামনে সমবেত হতে থাকেন। রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল রেস্তেঁরা পর্যন্ত বেলা আড়াইটার দিকেই হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। আর শোভাযাত্রা শুরু হলে ঘোড়ার গাড়ি, জাতীয় পতাকা, নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন-রঙিন বেলুন নিয়ে অংশ নেয় হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক। নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও জিয়াউর রহমানের স্মরণে নানা শ্লোগান দেয়। শোভাযাত্রা নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর হয়ে বিকাল ৩ টা ৩৭ মিনিটে মালিবাগে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রাটির অগ্রভাগ যখন মালিবাগের মোড়ে তখনো শেষভাগ নয়া পল্টনের মোড় অতিক্রম করতে পারেনি। শোভাযাত্রাটি মালিবাগ মোড় ঘুরে আবার পল্টনের দিকে চলে যায়। দেখা গেছে, বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় বিএনপির দলীয় পতাকার পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ি, জিয়াউর রহমান-খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের প্রতিকৃতি নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। শোভাযাত্রায় ব্যান্ড সঙ্গীতের দলও ছিলো। অনেকে মুক্তিযোদ্ধার সাজেও সাজেন। শোভাযাত্রার অগ্রভাবে ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের হাজারো নেতাকর্মী। এরপর পর্যায়ক্রমে মহিলা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, কৃষকদল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পিকআপ ভ্যানে বড় সাউন্ড সিস্টেমের ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ গানের তালে তালে, বিজয়ের সাজে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে নেতাকর্মীরা বিজয় র‌্যালিতে যোগ দেন।
শোভাযাত্রার আগে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যেই স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম সেই স্বপ্ন আমাদের বাস্তবায়িত হয়নি। আজকে বিজয়ের ৪৭ বছর পরেই দুর্ভাগ্য ও দু:খের সাথে আমাদের মা-বোনদের হাহাকার আমাদেরকে শুনতে হচ্ছে। আজকে আমাদের ছেলেরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে তারা প্রাণ বিসর্জন দেয়, গুম হয়ে যায় এবং আত্মত্যাগ করে। শত শত, হাজার হাজার নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্তরীণ ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারা অন্তরীণ। মির্জা ফখরুল বলেন, এই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেই কারাগার ভেঙে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। আমরা সমৃদ্ধ স্বপ্নের বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, মানুষ তার মতপ্রকাশ করতে পারবে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে লিখতে পারবে; এই ধরনের মুক্ত বাংলাদেশ চাই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের শুধু একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে আজ এই সরকার পদদলিত করতে চায়। আমরা বলতে চাই- এভাবে বাংলাদেশের মানুষকে পদদলিত করে রাখা যাবে না, দাবিয়ে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য অতীতে যেমন প্রাণ দিয়েছে আবারো তারা প্রাণ দিয়ে হলেও গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে। আসুন শান্তিপূর্ণভাবে এই বিজয় র‌্যালি করার মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেয়ার যে দাবি তাকে সোচ্চার করি। এই দিনে আমরা এই লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের আহবান করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আজকের এই দিনে আমরা বলতে চাই একটি সুষ্ঠ, অবাধ নির্বাচনের জন্যে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।
সংক্ষিপ্ত বক্ত্যব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবময় দিন। কিন্তু আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এই সরকার ধ্বংস করেছে। মৌলিক মানবাধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংবাদ মাধ্যম ও মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। একদলীয় বাকশালের দিকেই যাচ্ছে সরকার। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিজয়ের চেতনা ধারণ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি।
বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, নূরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ছাত্রদলের রাজীব আহসান, আসাদুজ্জামান আসাদ, মামুনুর রশিদ, নাজমুল হাসান, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, নূরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, মহানগর বিএনপির নবীউল্লাহ নবি, বজলুল বাসিত আঞ্জু, হাজি শফিকুল ইসলাম রাসেল সহ ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের হাজারো নেতাকর্মী বিজয় র‌্যালিতে অংশ নেন।
এদিকে বিএনপির শোভাযাত্রা ঘিরে নয়া পল্টন থেকে মালিবাগ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। গতকাল সকাল থেকে নাইটেঙ্গেল মোড়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) ও একটি জলকামান মোতায়েন ছিল। বিএনপির কার্যালয়ের উত্তর পাশের রাস্তায় ছিল আরো একটি এপিসি, জলকামান ও প্রিজনভ্যান। রাস্তার উভয় পাশে পুলিশের সতর্ক অবস্থানও দেখা যায়। এছাড়া পল্টন থানা এলাকায় দেখা যায় র‌্যাবের একাধিক গাড়ি। তবে শোভাযাত্রা উপলক্ষে কাকরাইল, বেইলি রোড, রাজারবাগ, মৌচাক, বিজয়নগরসহ বিভিন্ন সড়কে কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়ে। সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজটের। দুর্ভোগে পড়ে অসংখ্য যাত্রী।



 

Show all comments
  • সালাউদ্দিন ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:২৫ এএম says : 0
    আপনাদেরকে মাঠে পাওয়া যাবে তো ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণতন্ত্র

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ