Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অস্বস্তির যানজট থেকে মুক্ত নগরবাসী

কুমিল্লায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নেই যানজট দুর্ভোগ, নেই ট্রাফিক ও কমিউনিটি পুলিশের হৈহুল্লর আর লাঠি নিয়ে তাড়ার দৃশ্য। এ যেনো এক নতুন নগরী। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছে নগরবাসী। দীর্ঘদিন পরে হলেও কুমিল্লা পুলিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিদ্যুৎ খাদক বাহন ইজিবাইকের চলাচল নিষিদ্ধ করায় এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নগরবাসী।
এসিদ্ধান্ত স্থায়ীভাবে বলবৎ এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রন করা গেলে পুরাপুরি যানজটমুক্ত নগরী গড়ে উঠবে বলেও মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহন ইজিবাইক চলাচলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ট্রাফিক বিভাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর গত চারদিন ধরে অনেকটা যানজটমুক্ত পরিবেশে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা নগরী। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের কাছে স্বল্প খরচে নির্দিষ্ট গন্তেব্যে আসা-যাওয়ার জন্য ইজিবাইক পছন্দের বাহন হয়ে দাঁড়ালেও যাত্রী চাহিদা ঘিরে কুমিল্লা নগরীতে এবাহনটির সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে নগরীতে এটির সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গড়ে উঠে ইজিবাইকের অঘোষিত স্ট্যান্ড। আর এসব স্ট্যান্ড ঘিরে একটি চক্র শুরু করে টোকেন চাঁদাবাজি। প্রতিদিন বিভিন্ন মোড় থেকে টোকেন দিয়ে তোলা হতো লাখ টাকা। মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকার ভাড়ায় যাতায়াতে যে সুবিধা ইজিবাইক দিতো তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিতো এবাহনটি ঘিরে সৃষ্ট যানজট। কেবল তাই নয়, প্রতিদিন নগরীতে চলাচলকারি ১৫ হাজার ইজিবাইকের ব্যাটারি চুষে নিতো প্রায় দেড় লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ। এছাড়াও ইজিবাইকের বেপোরোয়া চলাচল প্রতিনিয়ত দুঘর্টনা ঘটিয়ে পথচারি এবং ওই বাহনের যাত্রীদেরও আহত করতো। আবার কেড়ে নিতো অনেকেরই প্রাণ।
সচেতন নাগরিক সমাজ ইজিবাইকের চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। কারণ এটি কম খরচে যাত্রী সেবার নামে নগরীতে যানজট সৃষ্টি এবং দুর্ঘটনায় পথচারিদের পঙ্গু ও মৃত্যুর পথে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালের ২১ জুলাই প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ কার হয়েছিল। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞার দেড়মাসের মাথায় ইজিবাইক চালকরা মারমুখি কর্মসূচি দিয়ে বিভিন্ন মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের উপর হামলা করে নগরীতে রণক্ষেত্র পরিণত করে। এঘটনার কিছুদিন পর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ফের নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইজিবাইকের চলাচল শুরু হয়। ওইসময় প্রায় ৫ হাজার ইজিবাইক চলাচল করতো। সময়ের ব্যবধানে গত ৫ বছরে নগরীর রাস্তাঘাটে ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারে উন্নীত হয়। ইজিবাইক ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় স্থানীয়ভাবেও বাহনটি তৈরির কারখানা গড়ে উঠে। আর অনেক স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনও ইজিবাইক কিনে তা ভাড়া দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। নগর গ্রাম গঞ্জে গড়ে উঠে ইজিবাইকের ব্যাটারির জন্য চার্জার স্টেশন। যেখানে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
সবমিলে ইজিবাইক যখন নগরীতে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ ও নগরবাসীর জন্য যন্ত্রণাদায়ক বাহন হয়ে দাঁড়ায় তখন বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে খুব বেশি নাড়া দেয়। কারণ নগরীতে চলাচলকারি ১৫হাজার ইজিবাইক কোনভাবেই কয়েক লাখ নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ হতে পারে না। নগরবাসীকে যানজটের ত্রাহি অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে কুমিল্লা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেনের নির্দেশে ট্রাফিক বিভাগ গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করে। নগরীর চকবাজার থেকে রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, কান্দিরপাড় লিবার্টি মোড়, রাজগঞ্জ মোড় থেকে মোগটুলি, ফৌজদারী মোড়, পুলিশ লাইন, রেইসকোর্স এবং পূবালী চত্বর থেকে টমসনব্রীজ-ধর্মপুর রেলওয়ে গেইট পর্যন্ত সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সঙ্গে সম্পৃক্ত লিংক সড়কের অলিগলিতে ইজিবাইক চলাচল বেড়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে ইজিবাইকের বেপোরোয়া চলাচলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে গত চারদিন ধরে নগরীতে যানজট না থাকায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছেন নগরবাসী। নগরীর রাস্তায় ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় পথচারিরা নগরীর এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে নির্বিঘেœ হাঁটাচলা করেছেন। এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেট হেঁটেছেন যানজটের ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ইজিবাইকের চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় এসব সড়ক মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড গ্যাড়ে বসেছে। নগরবাসী সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধকে পুঁজি করে যাতে রিকশা চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে এ ব্যাপারেও প্রশাসনের ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

২২ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ