পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের একটি প্রধান লক্ষ্য, বুধবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বাচা খান বিশ^বিদ্যালয়ে নৃশংস হামলার ঘটনায় তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। এতে শিক্ষক-ছাত্রসহ কমপক্ষে নিহত হয়েছে ২০ জন ।
এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে কোয়েটায় জাতিসংঘের সাহায্যপ্রাপ্ত একটি পোলিও ক্লিনিক, একজন স্থানীয় সম্প্রচার ব্যক্তিত্ব ও আফগানিস্তানের জালালাবাদে পাকিস্তানি কনস্যুলেটের উপর হামলার ৩টি ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয় যাদের মধ্যে সামরিক-বেসামরিক উভয় ধরনের মানুষই ছিলেন।
ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ সংকট তার অস্তিত্বের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে, তার স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। দেশটি একদিকে যখন উন্নতি ও ব্যর্থতার ক্রান্তিলগ্নে অবস্থানরত অবস্থায় নিজেকে দেখছে তখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই তার জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের অন্যতম প্রধান শিকার, পাশ্চাত্য প্রায়ই বিষয়টি উপেক্ষা করে। ২০১৫ গ্লোবাল টেরোরিজম ইন্ডেক্স অনুযায়ী ২০০৭-২০১৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা ১৫৯২। ১৯৯৮-২০০৬ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসজনিত মৃত্যুর তুলনায় তা ৯৪০ শতাংশ বেশি।
একই জরিপে সর্বাধিক সন্ত্রাস কবলিত ১২৪টি দেশের তালিকায় পাকিস্তানকে চতুর্থ স্থানে রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালে পেশাওয়ার আর্মি স্কুলে হামলার ঘটনা একটি অশুভ তোলপাড় করা ঘটনা হিসেবে কাজ করেছে।
আফগান সংযোগ
পাকিস্তানের সমস্যার অধিকাংশই আফগানিস্তানের রাজনৈতিক গোলযোগের সাথে সম্পর্কিত। আফগানিস্তানে ৯/১১’র পর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন দু’দেশের মধ্যকার আইনবিহীন সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের উর্বর লালন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। ৩টি দেশের সাথে নাজুক সীমান্ত থাকা পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম সংবেদনশীল ভূরাজনৈতিক এলাকায় অবস্থিত যেখানে নানা পক্ষ তাদের স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
চলমান মার্কিন ড্রোন হামলা স্থানীয় জনগণের একটি অংশকে উগ্রবাদী করে তুলেছে এবং পাকিস্তানি তালিবানের মতো উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোকে বেসামরিক ও সামরিক টার্গেটে হামলায় নিয়োজিত করেছে। এসব হামলা পাকিস্তানের শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে গোষ্ঠী উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখ-তার প্রতিই প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। এখন সেখানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান পরিস্থিতির শুধু আরো অবনতিই ঘটাবে।
বৈদেশিক ব্যাপার ছাড়াও পাকিস্তানকে অবশ্যই তার সীমান্তের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, সন্ত্রাসীদের প্রতি দেশজ সহানুভূতি নির্মূল করতে হবে এবং অন্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হওয়া বন্ধ করে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
সামরিক বাহিনী ও বিশেষ করে পাকিস্তানে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে বৈদেশিক নীতি সম্পদ হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহারের অভ্যাস এবং অভ্যন্তরীণ পাল্টা হামলা বন্ধে অবশ্যই মৌলিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
পরবর্তী তিন বছরের জন্য ৫ শতাংশের উপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি উন্নত মুদ্রা ব্যবস্থা ও সম্প্রতি তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জকে নতুন পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে সংহত করার পদক্ষেপকে কয়েক বছরের দুর্বল অবস্থার পর পাকিস্তান অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে গোয়াদর বন্দরকে চীনে কাশগড় শহরে সাথে যুক্ত করার ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনেতিক করিডোর (সিপিইসি) নির্মাণ চুক্তি পাকিস্তানকে কৌশলগত বাণিজ্যালয়ে পরিণত করতে পারে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা উত্তরকালে বিশ^ অর্থনীতিতে ইরানের পুনঃঅন্তর্ভুক্তি জ¦ালানি ঘাটতি মিটাতে ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করার বাস্তব সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
ভারতের সাথে শান্তি
ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাহোর সফরে ইঙ্গিত দেয় যে, অনেকে যাই মনে করুক ভারতের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। অন্যদিকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণিও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার সরকারের অভ্যন্তর থেকে চাপ থাকলেও তিনি তা র্পূবদিকের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন বাতিল করতে চান না।
ইতিহাস থেকে দেখা যায়, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের মধ্যে কার্যত প্রধান শক্তি হিসেবে রয়েছে। তবে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল রাহেল শরীফ অভ্যুত্থানের চক্রান্তের বদলে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের জারব-এ-আজবে সামরিক অভিযান ও করাচির রাজনৈতিক মাফিয়াদের নির্মূলের প্রতি প্রধান মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন।
পাকিস্তানে ৬৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা লাভ করে নওয়াজ শরীফের বেসামরিক সরকার দেশ শাসন করছে।
ভারতকে দেশের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা সত্ত্বেও আইএসের উত্থানের প্রেক্ষিতে দেশটির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ওয়ার কলেজে মাস্টারস ডিগ্রি লাভের সময় তার গবেষণা রিপোর্টে আইএসআই-এর বর্তমান প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রিজওয়ান আখতার যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের উচিত আগ্রাসীভাবে ভারতের সাথে সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
পাঠানকোটে ভারতীয় একটি সেনা ঘাঁটিতে সাম্প্রতিক হামলা ভারত-পাকিস্তান চলমান সংলাপ বন্ধ করবে বলে মনে হয় না বরং এ সংলাপ থেকে সহযোগিতা ও শুভেচ্ছার ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রক্রিয়াধীন বলে আভাস মিলছে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের সাথে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় চুক্তি থেকেও অভিন্ন স্বার্থের বিরুদ্ধে উভয় দেশের লড়াই জোরদারের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে।
এ ইতিবাচক অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যবহার করা এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। সূত্র : আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।