হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ফের মুখোমুখি। যথারীতি দু’দলের নেতারা বাকযুদ্ধে শামিল। জনগণ হতভম্ব। নাগরিক সমাজ হতাশ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা শংকাকুল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বড়জোর এক বছর বাকী। দেশী-বিদেশী সকল মহল অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মতো কোনো নির্বাচন তাদের কাম্য নয়। ওই ধরনের একটি নির্বাচন সম্ভবপর করে তুলতে, সকলেরই অভিন্ন অভিমত, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার বিকল্প নেই। নির্বাচন নিয়ে দল দুটির মধ্যে পরস্পরবিরোধী অভিমত রয়েছে। এই বিরোধ ও মত পার্থক্যের অবসান না হলে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা নেই। এই পটপ্রেক্ষায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ-সমঝোতা জরুরিই নয়, অপরিহার্যও বটে। বিএনপির পক্ষ থেকে পূর্বাপর আলোচনার প্রস্তাব ও তাকিদ রয়েছে। আওয়ামী লীগের তরফে বিভিন্ন সময় আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া হলেও পর্যবেক্ষক মহল আশা করেছে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসতে রাজি হবে। কারণ, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারেনা।
সম্প্রতিককালে রাজনীতিতে একটি ভালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। বিএনপির চেয়ারপারসন লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিপুল সংখ্যায় উপস্থিতি, তার কক্সবাজার সফর এবং দীর্ঘদিন পর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিএনপির বিশাল জনসভা অনুষ্ঠানের পর ধারণা করা হচ্ছিল, বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে না দেয়ার যে কঠোর অবস্থানে ছিল, তা থেকে হয়তো সরকার সরে আসছে। সহাবস্থানমূলক রাজনীতি হয়তো দেশে আবার ফিরছে। ওই তিনটি উপলক্ষে সরকার বা সরকারী দলের তরফে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিএনপিও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃংখলভাবে তার কর্মসূচীগুলো পালন করেছে। এরপর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎ এবং সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয় তখন অনেকের মধ্যেই এ আশাবাদ জাগ্রত হয় যে, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দু’দলের মধ্যে আলোচনা হয়তো এই সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পথ ধরেই বাস্তবে রূপ লাভ করবে।
গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর এ নিয়ে আপাতত আশাবাদী হয়ে ওঠার আর কোনো সুযোগ থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। পূর্ণপ্রসঙ্গের উল্লেখ করে বলেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ সরকার প্রধান হিসাবে তিনি নেবেন কিনা, এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কোনে দল নির্বাচন করবে, কোন দল করবে না, এগুলো তাদের দলের সিদ্ধান্ত। যারা সত্যি নির্বাচন করতে চায়, নির্বাচনে আসবে। আর যদি তাদের সিদ্ধান্ত হয় করবে না, তো করবে না। বিএনপির নির্বাচনে আসার প্রশ্নে একটি তীর্যক মন্তব্যও তিনি করেছেন। বলেছেন, নাকে খত দিয়ে তারা আগামীতে এমনিই নির্বাচনে আসবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে ক’দিন আগে একটি গুঞ্জন উঠেছিল আগাম নির্বাচন নিয়ে। সরকার এখন খুবই সুবিধামত অবস্থানে রয়েছে। আগাম নির্বাচন দিলে সরকারীদলের বিজয় অবধারিত। গুঞ্জনের পেছনে এটাই ছিল যুক্তি এবং সরকার আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছে, এমনটাই চাউর হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আগাম নির্বাচনেও বিএনপি প্রস্তুত, এই ধরনের মন্তব্য থেকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, আসলেই কি আগাম নির্বাচন হতে যাচ্ছে? এই গুঞ্জন ও আলোচনারও ইতি টেনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে যে কোনো সময় নির্বাচন হয়। কিন্তু এমন কোনো দৈন্যদশায় পড়িনি বা সমস্যায় পড়িনি যে এখনই নির্বাচন দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ এসব মন্তব্য বা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির নেতারা পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সরকার বা সরকারী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে। আগে থেকেই তারা বলে আসছিলেন, বিএনপি নির্বাচন ও আন্দোলন-দুটি পথই ঠিক করে রেখেছে। বিএনপিকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন হবেনা। দলের মহাসচিব স্পষ্ট করে জবাবী মন্তব্যে বলেছেন, বিএনপি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে যাবে না। আওয়ামী লীগ নেতারাও আগের মতো বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে মুসলিম লীগ হয়ে যাবে বা শেষ হয়ে যাবে।
এই বাকবিতন্ডা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের স্ব স্ব অবস্থানে অনড় রয়েছে। সহাবস্থানমূলক রাজনীতির প্রত্যাবর্তন কিংবা রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনার সম্ভাবনায় যে স্বস্তি, তার আসলেই কোনো ভিত্তি বা মানে ছিল না। হতে পারে, সরকার কিছুটা নমনীয়ভাব প্রদর্শন করে পরিস্থিতি আঁচ করতে চেয়েছিল। পরিস্থিতির যারা মূল্যায়ক-বিশ্লেষক, তাদের মূল্যায়ন-বিশ্লেষণ কারো জানার সুযোগ নেই তারা ও সংশ্লিষ্টরা ছাড়া। অনুমিত হয়, মূল্যায়ণ-বিশ্লেষণে সরকারের জন্য কিংবা সরকারী দলের জন্য আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোনো বার্তা নেই। বিএনপিকে রীতিমত ‘বন্দী’ অবস্থায় রেখে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা দিয়ে কিংবা গ্রেফতার করেও তার জনপ্রিয়তা হ্রাস করা যায়নি। একটু ‘ছাড়’ দেয়ায় মানুষ যেভাবে পথে নেমেছে, জনসভায় হাজির হয়েছে, তাতে মনে হয়, তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। এমন দলের সঙ্গে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিশ্চয়তা দিয়ে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে পেরে ওঠা মোটেই সহজসাধ্য নয়। এমত আশঙ্কায় সরকার বা সরকারী দল তার পূর্বাবস্থানে আরো দৃঢ় ও অটল থাকাকেই শ্রেয় বিবেচনা করছে বলে মনে হয়। ইতোপূর্বে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখার কৌশল নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি মামলা-মোকদ্দমা ও নির্বিচার গ্রেফতার এর একটি প্রমাণ। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত কয়েকদিনে নতুন করে রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা এবং তার অসিলায় গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। নতুন এই গ্রেফতার অভিযানে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ওদিকে বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যে কোনো সময় এ মামলার রায় হয়ে যেতে পারে। কী রায় হবে, সেটা আন্দাজ করা সম্ভব নয়। তবে বেগম খালেদা জিয়া দন্ডিত হলে তার প্রভাব দলের উপর প্রচন্ডভাবে পড়বে। সে ক্ষেত্রে দলটি নির্বাচনে যাবে কি না, তা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে। নব পর্যায়ে শুরু হওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া মামলা ও গ্রেফতার অভিযান চলতে থাকলে দলটির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া কেমন করে সম্ভব হবে, সে প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, বিএনপি নির্বাচনে আসলে আসবে, না আসলে না আসবে। এতে সরকারের কিছু করার নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে হবে? একথা সত্য বটে, নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়া যে কোনো দলের একান্ত এখতিয়ারের বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে দ্বিদলীয় রাজনীতির যে ধারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তাতে বিএনপি অংশ না নিলে যেমন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলে প্রতিপন্ন হবে না, তেমনি আওয়ামী লীগ অংশ না নিলেও সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। এই বাস্তবতায় দু’দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এবং নিলেই কেবল নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়, প্রশ্নবিদ্ধ, একতরফা ও অসুষ্ঠু নির্বাচন হিসাবে পরিগনিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও কোনো কারণে যদি বিএনপি অংশ না নেয়, সেক্ষেত্রেও নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের অনুরূপ বলেই গন্য হবে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সুস্পষ্ট বিরোধ বা মত পার্থক্য রয়েছে। নির্বাচনকালে সরকারের প্রকৃতি কেমন হবে, সংসদ বহাল থাকবে কিনা, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কিনা, সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চত হবে কিনা, মোটা দাগে এই চারটি বিষয়ে দ্বিদলীয় সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এসব বিষয়ে মত, দৃষ্টিভঙ্গী ও অবস্থান দু’দলের ভিন্ন ভিন্ন। আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে চায়, সংসদ বহাল রাখতে চায়, সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মোতায়েন করতে চায়। এবং সমান সুযোগের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ভুক্ত বলে মনে করে। পক্ষান্তরে বিএনপি চায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। তার কথা, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে এবং সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ মোতায়েন করতে হবে। তার মতে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এবং সংসদ বহাল থাকলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। সর্বোপরি, এই ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে সরকারের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ থাকবে এবং সেক্ষেত্রে গণরায়ের সঠিক প্রতিফলন হবে না।
মৌলিক এসব বিষয়ে আলোচনা হলেই কেবল উভয় তরফের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা পথ বেরিয়ে আসবে। বস্তুত সমঝোতা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আলোচনা ও সমঝোতা যদি না হয়, উভয় পক্ষ যদি স্ব স্ব অবস্থানে নিশ্চল থাকে তবে কী হবে সেটা অনুমেয় বটে, তবে বাস্তবতা অনুমানকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজুদ্দিন খানের একটি বিবেচনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, দুই দলের মধ্যে সমঝোতার কোনো সদিচ্ছা বা লক্ষণ নেই। গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং আগামী প্রজন্মের কথা তারা ভাবছে না। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দুই দলই মুখোমুখি অবস্থানে। মাঝে মাঝে সমঝোতার কিছুটা প্রত্যাশা সৃষ্টি হলেও তা কখনো আলোচনার মুখ দেখছে না। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও বিএনপির পাল্টা বক্তব্যে মনে হচ্ছে, রাজনীতির আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। অতীতেও কাল মেঘই ছিল। কিন্তু মাঝে মাঝে তা সরে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলেও তা হয়নি। তিনি মনে করেন, এ কালো মেঘ দূর করতে দুই দলেরই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশের কথা চিন্তা করে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনীতি ফের আগের অবস্থানেই চলে এসেছে। এর উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখছি না। তার আশঙ্কা, দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে রাজনীতি ফের সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। তার পরামর্শ, একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থায় উপায় খোঁজার দায়িত্ব সরকারের, তাকেই উদ্যেগ নিতে হবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করাই হলো গণতন্ত্র।
কথায় বলে, আশা ছাড়তে নেই। যারা একটু বেশী আশাবাদী তারা মনে করেন, সরকারের অবস্থান আগামীতে এমন কঠোর থাকবে না। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে সরকারের ছাড় দেয়ার মনোভাব ততো উজ্জীবিত হবে। বিএনপির ক্ষেত্রেও একথা সমান প্রযোজ্য। তাদের মতে, ২০১৪ আর ২০১৮ সালের অবস্থা একই জায়গায় নেই। এখন আর আগের মতো নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সরকারকেই গোঁফ নামাতে হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মনে করেন, সরকার সমঝোতার পথে আসবে। আলোচনায় বসবে। তার ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিলেও সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অতীতের নজির টেনে তিনি বলেছেন, গতবারও তিনি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। পরে আলোচনায় এসেছেন। এখন দেশের যে পরিস্থিতি, সেখান থেকে বের হতে হলে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, শেষ পর্যন্ত সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেছেন, আমরা আগেই বলেছে, নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। নির্বাচন কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। তাই বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে নাকে খত দিয়ে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং সব দলকে নির্বাচনে আনতে সরকারই বাধ্য হবে। বলা বাহুল্য, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের দায়িত্বই প্রধান। সরকারী দলের নেতারাও বিভিন্ন সময় বলেছেন, তারাও অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান। তাদের এই চাওয়া বাস্তবায়নে তাদেরই উদ্যোগী হতে হবে। আওয়ামী লীগকে জনগণবাদী দল হিসাবে তারা পরিচয় দিয়ে থাকেন। জনগণ কি চায়, সেটা তাদের অজানা থাকার কথা নয়। জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুধাবন ও ভাষা পাঠ করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। রাজনীতিতে হঠকারিতা ও জেদের মূল্য অনেক বেশী, সেটা দু’দলকে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে। শুভবুদ্ধিই সেখানে সঠিক পথ দেখাতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।