Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে খাদ্য ঘাটতি উদ্বাস্তু সঙ্কট বাড়বে

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে সেমিনারে ড. আইনুন নিশাত
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম শিকার উল্লেখ করে প্রখ্যাত জলবায়ু ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশ চরম খাদ্য ঘাটতি ও উদ্বাস্তু সমস্যার মুখোমুখি হবে। এ বিপর্যয় মোকাবেলায় পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
গতকাল (বুধবার) রাতে বন্দরনগরীতে এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ শীর্ষক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আইনুন নিশাত। আইইবির সেমিনার কক্ষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রকৌশলী কবির কুমার সেন, প্রকৌশলী উদয় শেখর দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মূল বক্তব্যে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্সের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, যেসব কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে এবং পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসছে তার জন্য বাংলাদেশ দায়ী না হলেও এখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে অকাল বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি আবার অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং অকাল বজ্রপাতের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এ বছর সুনামগঞ্জে চৈত্র মাসে শ্রাবণ মাসের মতো বৃষ্টি হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে একদিনেই ৪শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে। হাওর অঞ্চলে অক্টোবরেও বন্যা হয়েছে। এখনও সেখানে বন্যার পানি পুরোপুরি নামেনি। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অতিবর্ষণ হয়েছে।
এসব কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্য ঘাটতি পূরণে সরকারকে মিয়ানমারের মতো দেশ থেকেও চাল কিনতে হচ্ছে। জলবায়ুর এ বিচিত্র আচরণ অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে দেশে ধান ও গমের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে এবং আলু উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ এখন খাদ্য ঘাটতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে আর এতে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। লবণাক্ততার কারণে সেখানে গরুর দুধের দাম আর সুপেয় পানির দাম সমান হয়ে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশকে আগামী দিনগুলোতে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে সাতক্ষীরার লোকজন উদ্বাস্তু হয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন ঋণাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য উৎপাদন আরও কমে যাবে। সেইসাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে উপকূলীয় এলাকার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে খুলনা অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ মিলিমিটার এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০ মিলিমিটার বেড়েছে বলে জানান তিনি। এ কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীতেও জোয়ারের পানি উঠছে।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, ব্যাপক শিল্পায়নসহ নানা কারণে পৃথিবীর বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেনসহ ক্ষতিকর ৪টি গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ১শ’ বছরে গড় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি বাড়লেই তা গোটা পৃথিবীর জন্য মহা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এসব সঙ্কট মোকাবেলায় বিশ্ব এখন সোচ্চার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ১শ’ বছরে গড় তাপমাত্রার পরিমাণ ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার যে আশঙ্কা রয়েছে তাকে কমিয়ে ২ ডিগ্রিতে রাখার পক্ষে গোটা বিশ্ব ঐক্যমত হয়েছে। একে অন্তত দেড় ডিগ্রির মধ্যে কিভাবে সীমিত রাখা যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এ কারণে জলবায়ু সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেকোন আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ এখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ১শ’ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মত না হলেও ইতোমধ্যে আমেরিকার বেশ কয়েকটি রাজ্য ও সেই দেশের অনেক বড় কোম্পানী এতে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে। তিনি আশা করেন, আগামী ১২ ডিসেম্বরের যে সম্মেলন তাতে ওই তহবিল গঠন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ু পরিবর্তনের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ