পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমরা সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন পেশায় কাজকর্ম করে খাই। রাজনীতি করি না। কোন ঘোরপ্যাচও বুঝি না। ভোট আসলি একটা ভোট দিই, আমাদের প্রত্যাশা যারা ভোট নেবেন তারা দেশ ও দশের উন্নয়নে কাজ করবেন, আমরা কিভাবে ভালো থাকতে পারি তার ব্যবস্থা করবেন’-একথা অজপাড়া গা’য়ের একজন সাধারণ ভোটারের। একই ধরনের কথা বললেন ছুটিতে গ্রামে থাকা চার পেশার চারজন। তাদের কথা, এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে নিরপেক্ষ থাকার উপায় নেই। গ্রামে আসলে চেনা লোক যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছে রাজনীতির কারণে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরে ঘরে অশান্তি তৈরী হয়েছে। বিভাজনের রেখার কারণে পরাণডা খুলে কথা বলার উপায় থাকে না। পরিস্থিতি পরিবেশ দেখেশুনে লোক বুঝে কথা বলতে হয়। আগে তো এরকম ছিল না। কেন এমন হলো। এখন দেখছি গ্রামেও ঢুকে গেছে রাজনীতি মারাত্মকভাবে। সামাজিক বন্ধন যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে-এটি কেন হচ্ছে বুঝতেই পারছেন সব পার্টিজান হয়ে গেছে। নির্দ্দিষ্ট কোন দলের কথা বলবো না, কেউ কারো ছাড় দিয়ে কথা বলেন না। মারমুখী আচরণ হয় মতামত পক্ষে না গেলে। কিন্তু রাজনীতি তো এই শিক্ষা দেয় না। পরমতসহিঞ্চু, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিষ্টাচার, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তাদের পক্ষেবিপক্ষে কথাবার্তা হচ্ছে, তাতেও পরিবেশ গরম হচ্ছে অনেক এলাকায়।
জনস্বার্থবাহী পদক্ষেপের ব্যাপারে বর্তমান ও অতীতের অনেক এমপি’র নানা ধরণের ছলচাতুরী, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, ভোট আসলে একরকম আর ভোট শেষে আরেক রকম ব্যবহার ভালোভাবে নিচ্ছে না মানুষ। মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে নির্বাচনী রাজনীতির তর্কবিতর্ক চলছে তুমুল। রাজনৈতিক দলগুলো ত্যাগী নেতা ও কর্মীদের মূল্যায়ন না করার বিষয়ও আলোচিত হচ্ছে। আগে গোঁফ দাড়িতে পাক না ধরলে, পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতা না হলে সাধারণতঃ এমপি প্রার্থী হতেন না। এখন প্রেক্ষাপট যেন ভিন্ন, সব এলাকায় নতুন মুখের অনেকটাই জয়জয়কার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীকে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে তাদের শতকরা ৯০ ভাগ নতুন মুখ। পুরাতনদের কদর নেই তা নয়। তবে নতুন মুখের সম্ভাব্য প্রার্থীর পিছনে ভিড় বাড়ছে। তাদের আচার আচরণেও লোকজন খুশী। জনসাধারণের কথা, সবচেয়ে ভালো লাগছে সম্ভাব্য নতুন মুখের প্রার্থীরা ভোটের কথা বলছেন না, দোয়া চাচ্ছেন আর আমাদের মনের কষ্ট, ব্যাথা, ক্ষোভ ও রোষের কথা শুনছেন মনযোগ দিয়ে। বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন কৃষক বললেন, আওয়ামী লীগের নতুন মুখের একজন প্রার্থী পারুক আর না পারুক আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তো বাড়ছেই, রাস্তাঘাটে চলা যায় না, ছেলেপেলের লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরী জোটে না, টাকা ছাড়া অনেক নেতা কথা বলেন না, দলীয় মাস্তান হাস্তানদের জ্বালায় বাঁচি না, ছোট পোলাপানরা দলের কারণে আমাদের উপর ছড়ি ঘুরায় চোখ রাঙায়-এসব নানা অভিযোগ মন দিয়ে শুনে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। এতেই আমরা খুশী।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অকপটে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেন যোগ্য অযোগ্য বিচার বিশ্লেষণ করেই সংসদ সদস্য প্রার্থী দেয়। তৃণমুলের নেতৃবৃন্দেরও প্রত্যাশা অর্থ প্রভাব তদবিরের জোরে যেন বিতর্কিত ও জনবিছিন্ন কেউ প্রার্থী হতে না পারে। কারণ তাদের নিয়ে ভোটারদের কাছে যাওয়া কঠিন হবে। তাই যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে তাদের যেন বাদ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তৃণমুল থেকে কেন্দ্রে এসব ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩৬টি আসনে আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী এখন মাঠে। বিএনপির রয়েছে অন্তত একশ’ প্রার্থী। জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাসদ, জেএসডি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন পার্টিরও রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থী। এর মধ্যে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ করছেন। মনোনয়ন দৌড়ে কে এগিয়ে যাবেন কে পড়বেন পিছনে, কার ভাগ্যের শিঁকে ছিড়বে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ভোটযুদ্ধের আগে মনোনয়ন যুদ্ধ উপভোগ করছেন জনসাধারণ।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নের জন্য যে যার মতো কেন্দ্রে তদবির করে দলীয় টিকিট নেয়ার চেষ্টা করছেন। আগে দলীয় মনোনয়ন পেতে এতটা বেগ পেতে হতো না। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংখ্যাও ছিল না অধিক সংখ্যক। লক্ষণীয় আপাদমস্তক রাজনৈতিক নেতা সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় তুলনামূলক কম। ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী বেসরকারী ও সেনা কর্মকর্তার সংখ্যা বেশী। যারা কোনভাবেই রাজনীতির সংস্পর্শে ছিলেন না। অনেকেরই কথা, ক্রমাগতভাবে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে রাজনীতি। তবে অরাজনৈতিক সম্ভাব্য প্রাথীরা মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অনেকের বক্তব্য ‘আমরা জনগণের খেদমত করার সুযোগ পেলে অবশ্যই জনপ্রতিনিধির মূল দায়িত্বটি পালন করতে পারবো। আমরা রাজনীতির হাল ধরতে চাই, সহযোগিতা করুন।’
দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে ও এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবাই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় যেসব প্রোগ্রাম হচ্ছে তা নির্বাচন কেন্দ্রিক। ‘জনপ্রিয়তা না থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে না’-প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা একথা ঘোষণার পর থেকে ঝিমিয়ে পড়া দলীয় অনেক এমপি অতিমাত্রায় চাঙ্গা হয়ে উঠেন। অপরদিকে,বিএনপির চেয়ারপার্সন ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর থেকে তাদের দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে নেমে পড়েন। তবে বিএনপির প্রার্থীরা দলীয় নেত্রীর গ্রেফতারী পরোয়ানার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ও বাদ প্রতিবাদে সময় দিচ্ছেন বেশী। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও একটু একটু করে এগুচ্ছে। সবার লক্ষ্য এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচন। দলীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কথা, অনেকেরই গণমুখী চরিত্র নেই, তারাও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করছেন। তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের বক্তব্য, এবারের নির্বাচন হবে প্রতিদ্ব›দ্বীতাপুর্ণ। তাই কাগুজে বাঘ নয়, সত্যিকারের জনদরদী যারা, যাদের জনপ্রিয়তা আছে, দলের স্বার্থে নিবেদিত এবং পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা তাদের খুঁজে বের করে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কেন্দ্র ভুল করবে না।
বিএনপির একাধিক সুত্র জানায়, বিপদ আপদকালীন সময়ে কারা মাঠে ছিল, কার কি ভুমিকা, ঘরে বসে মাঠে আছি রিপোর্ট করাসহ চাতুরতার আশ্রয় নেয়া নেতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারী দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রেখে গা বাঁচানোর রাজনীতি যারা করেছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। সর্বশেষ বিএনপি’র কেন্দ্র থেকে একটা ম্যাসেজ পৌছে দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের কাছে যে, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আরো বিপদ হবে। কোঁমর বেধে মাঠে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। নির্বাচনের প্রস্ততির পাশাপাশি আন্দোলনও জোরদার করতে হবে। যারা শক্ত হয়ে নামবেন তারাই কেবল দলে থাকবেন, প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন, বাকিরা যাবেন স্থায়ী ছুটিতে।’ এদিকে সকল রাজনৈতিক দলই কোন আসনে কাকে মনোয়ন দিলে ভালো হয় তারও এটা জরিপ চালাচ্ছে। আবার সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। বর্তমানে সব আসন এলাকায় আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে চলছে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।