পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী শহর ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য রাখা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকার যানজট, পানিবদ্ধতা নিরসন এবং বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যাসহ চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে গত দুই দশকে নানা রকম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শত শত কোটি টাকার বাজেট খরচ করা হলেও বাস্তব অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। একদিকে যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অনেকগুলো ফ্লাইওভার মির্মিত হয়েছে, অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে পানিবদ্ধ হয়ে যানচলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ার বাস্তবতায় তেমন কিছুই করা হয়নি। দেশের নগর পরিকল্পনাবিদরা এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়েছেন ঢাকার বেদখল হয়ে যাওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধার ও যথাযথ সংরক্ষণের উপর। ঢাকার পরিবেশবাদি সংগঠনগুলোও বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি শহরের লাইফলাইন ও পরিবেশগত নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেদখল হয়ে যাওয়া অর্ধশতাধিক খাল পুনরুদ্ধারের তাগিদ দিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালত থেকেও এ সম্পর্কিত নির্দেশনা দেয়া হলেও এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের গড়িমসি ও আইনগত দীর্ঘসুত্রতার সুযোগ নিয়েছে দখলদাররা। ঢাকার চারপাশের নদী ও অর্ধশতাধিক খাল দখলে দুই শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ইতিপূর্বে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে ঢাকার খাল দখলে ২৪৮ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করেছিল ঢাকার জেলাপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি(বেলা)র একটি রীট আবেদেনের প্রাথমিক শুনান শেষে গত সোমবার রাজধানীর ৫০টি খাল পুনরুদ্ধারে কর্মপরিকল্পনা চুড়ান্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চ আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা হাইকোর্টে জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। কর্মপরিকল্পনা অনুসারে ঢাকার খালগুলোর বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান, মূল প্রবাহ অনুসারে সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখলদারদের তালিকা এবং খালগুলো সংরক্ষণ ও রক্ষনাবেক্ষণে উদ্যোগ নিতে ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক,ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খালগুলো জোরপূর্বক দখল, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, দূষণ থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিবাদিগণের ব্যর্থতা কেন বেআইনী ও জনস্বার্থবিরোধি এবং এসব খাল পুনরুদ্ধার ও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে জনস্বার্থে ও পরিবেশবাদি গ্রুপের রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে এ ধরনের রুল ও নির্দেশনা দিয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা ও আশপাশেই নয়, সারাদেশেই খাল, নদীসহ সরকারী ও সংরক্ষিত জমির উপর প্রভাবশালী মহলের অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় ও নাগরিক সংকট ক্রমশ ঘণীভূত হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের খাল ও ছড়াগুলোর বেহাল অবস্থা এবং অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতা ও দূষণের চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
ঢাকার ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাস পাঁচ শতাথিক বছরের পুরনো হলেও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চারদশকের মাথায় বিশ্বের অন্যতম নোংরা ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাওয়া জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। রাজধানী শহরকে অনিরাপদ ও বসবাসের অযোগ্য রেখে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কোন রূপরেখাই সফল হবেনা। গত এক দশক ধরে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। বৈদেশিক বাণিজ্য, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং আভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতায়ও এক ধরনের স্থবিরতা ও সংকট চলছে। বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগিরা বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা, কার্গো নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনে দেশে সুশাসনের অভাব এবং জননিরাপত্তার অভাবকেই দায়ী করা হচ্ছে। নদী দখল, খাল ও জলাভ‚মি দখল, পাহাড় ও বনভ‚মি দখলসহ সারাদেশে প্রভাবশালী মহলের দখলবাজির যে মচ্ছব চলছে তা ক্রমে পুরো সমাজব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খল ও দুর্বিসহ করে তুলেছে। যানজট ও পানিবদ্ধতার কারণে রাজধানী শহরের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, প্রতিদিন কোটি কোটি কর্মঘন্টার অপচয় হচ্ছে, নাগরিক জীবনে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। এসবের জন্য সর্বাগ্রে দায়ী প্রভাবশালী মহলের আইন অমান্যের প্রবণতা, দখলবাজি এবং বেপরোয়া দূষণের প্রতিযোগিতা। এসব দখলবাজ ও অপরিনামদর্শি দূষণের জন্য দায় ব্যক্তিদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। জনস্বার্থে দেয়া উচ্চ আদালতের রুল ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিত করতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।