Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে চারদিকে

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নির্বাচনী হাওয়া-৩

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতাই পারে সাধারণ মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে। এই বিশ্বাস ধারণ করেই নির্বাচনী রাজনীতিতে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ব্যতয় ঘটবে না-সাধারণ মানুষের সাথে পথ চলতে ভোটের আলাপে এমনটিই মনে হয়েছে। তবে অনেকের মধ্যে এখনো নির্বাচন নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। কেন প্রশ্ন তার সঠিক উত্তর মিলছে না। তবে নানা ধারণার বিষয় অনেক ক্ষেত্রে ভাবিয়ে তুলছে। চারিদিকে প্রশ্ন রয়েছে আসলেই কি আগাম নির্বাচন হচ্ছে? নির্বাচনে কি সব দলের অংশগ্রহণ থাকছে? সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হবে কিনা এ প্রশ্ন যেমন আছে তেমনিই বিএনপির অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী যারা সাবেক সংসদ সদস্য মামলায় জর্জরিত তারা কি অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে? অস্ত্র ও পেশীশক্তি মুক্ত হবে কিনা, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী ও পলিটিক্যাল ক্যাডার আটকে কি কোন অভিযান চলবে এক সময়ের ভয়ংকর জনপদ হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে? সার্বিক পরিবেশই বা কেমন থাকবে? সেনাবাহিনী নামানো হবে কিনা?-এমন অনেক প্রশ্ন জনসাধারণের মধ্যে উকি দিচ্ছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। গভীরভাবে নির্বাচনী আলোচনা হলেই এসব প্রশ্ন উঠে আসছে।
সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ রাজনীতি নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনা করছেন ঠিকই, তবে কিছু কথা রাজনৈতিক হয়ে যেতে পারে সৃষ্টি করতে পারে বিতর্ক-সেজন্য সতর্কতা অবলম্বনও করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। একথাও ঠিক যে, সবাই চায় সুষ্ঠুভাবে ভোট হোক, সব দলের অংশগ্রহণ থাকুন, ভোটাররা যোগ্য দক্ষ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রলোবন জয় করা প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ যেন পায়, লোভজর্জর ব্যক্তি যেন অন্তত জনপ্রনিধি হওয়ার সুযোগ না পায়, কোন ধরণের গ্যাঞ্জাম ফ্যাসাদ কোথাও যাতে না হয়। আমরা সাধারণ মানুষ শান্তি চাই, আমরা হিসাব নিকাশ করেই ভোট দেব।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভোট পন্ডিতদের বক্তব্য যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই অধিকাংশ আসনে এবারও লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে বলেই আভাস পাওয়া গেছে। এখনো পর্যন্ত এই অঞ্চলের কোন আসনে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসার পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রধান দুই দলের জোটের কেউ প্রার্থী হলে তিনি থাকবেন প্রতিদ্বন্দিতায়। সাধারণ মানুষের কারো কারো মধ্যে ভোট নিয়ে অনিহাও প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের কথা ‘আমরা ভোট দিয়ে নেতা বানাই, তারা নেতা হওয়ার পর নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন’। তাদের মতে, ওয়ান ইলেভেনের পর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ নব রাজনীতির যুগে পা রাখে। উত্তরণ ঘটে গণতন্ত্রের। নতুন এক আশার ঝিলিক দেখা দেয় ভোট রাজনীতিতে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তৈরী হয় যথেষ্ট শ্রদ্ধা। কিন্তু একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধির কর্মকান্ডে মানুষ হতাশা ব্যক্ত করে থাকেন। আসলে অনেকের মধ্যেই মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি, চলছে সেইভাবে একই ধারায়। আগের মতোই কেউ কেউ আচার ব্যবহারও করছেন, স্বার্থান্ধ হয়ে চলছেন, বাসা বেধেছে নীতিহীনতা। মাঠ অনুসন্ধানে স্পষ্ট হচ্ছে এবারের একাদশ নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতাপুর্ণ। তাতে অনায়াসে এমপি হওয়ার সুযোগ থাকবে না। জনকল্যাণে যেসব জনপ্রতিনিধি ন্যুনতম ভুমিকা রাখেননি তারা ছিটকে পড়বেন। দলও তাদের চিহ্নিত করে মনোনয়ন থেকে বাদ রাখতে পারেন। তাছাড়া ভোটাররা ভাবাবেগে নয়, সচেতনভাবেই দেখে শুনে বুঝে যাচাই বাছাই করেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এমন মানসিকতার বর্হিঃপ্রকাশ ঘটছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অকপটে বলেছেন, আমরা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে, সাধারণ মানুষের কল্যাণের রাজনীতি দেখতে চাই। দলীয় নীতি আদর্শ তো থাকবেই কিন্তু প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিচার বিবেচনা করেই ভোট দেয়া হবে।
মাঠের নির্বাচনী রাজনীতির খোঁজ নিয়ে সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রধান দু’টি দলের কর্মকান্ড চলছে একরকম নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বসে নেই। তারা কার সাথে কিভাবে জোট করে নির্বাচন করবে, না এককভাবে করবে তা চিন্তাভাবনা করছে। শুধু ভোটাররা নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা ও কর্মীদের কথার মধ্যে এমন প্রশ্ন ওঠে আসছে যে, নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কেমন, শুধু কি বড় দুই দলের প্রার্থীকেই ভোটাররা বেছে নেবে না অন্য কোন দলের প্রতি একটু আধটু দৃষ্টি দেবে, কতকাল আর ক্ষুদে দলের নেতা থাকবো, অন্যদের আলোয় আলোকিত হবো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবারও নবম সংসদ নির্বাচনের মতো আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। তবে ৫/৬টি আসনে অন্যান্য দলের প্রার্থী কিংবা জোট মহাজোটের শরিকদের প্রার্থীরা লড়াইয়ে আসতে পারেন।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, বর্তমানে অস্ত্রবাজ চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের দাপট নেই একথা যেমন সত্য, তবে এটিও ঠিক যে,নির্মুল হয়নি অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী। তার উপর বরাবরই নির্বাচনী ডামাডোলে পলিটিক্যাল ক্যাডার, সন্ত্রাসী, মাস্তানসহ একসময়ের চিহ্নিত সন্ত্রাসী কোন না কোন প্রার্থীর কাছে ভিড়ে থাকে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন উইংও এ ধরণের আশংকায় অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এখন থেকেই তীক্ষè দৃষ্টি রাখছে। গোয়েন্দারা রিপোর্ট সংগ্রহ করছে সম্ভাব্য কোন কোন প্রার্থীর আশেপাশে পলিটিক্যাল ক্যাডার, মাসলম্যান বা সন্ত্রাসী কারা রয়েছে কিভাবে। বর্তমান অবস্থায় যেটি হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার কি অবস্থান খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে দলীয় একাধিক টিমের মাধ্যমে। প্রার্থী ছিলেন না বা হতে আগ্রহী নন অথচ ক্লিন ইমেজ আছে এমন অরাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সেনা অফিসার খুঁজে বের করা হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমের ১০ জেলায় (খুলনা বিভাগ) মোট ৩৬টি আসনে আসনভিত্তিক নির্বাচনী জরিপ চালিয়েছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের ফিল্ড অফিসাররা ৩স্তরে প্রার্থী তালিকা করেছে। বর্তমান এমপিদের কর্মকান্ডে কে নিন্দিত কে নন্দিত, কে মাঠে নামেন না, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি নেই, ক্ষমতায় থাকার সুবাদে কে কে রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হয়ে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, দলের ভাবমূর্তি করেছেন ক্ষুন্ন, তাদের জন্য অশনীসংকেত ধ্বনিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এমপিদের আমলনামা ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রে পৌছেছে। যেসব এমপি’র মনোনয়নের সম্ভাবনা কম সেসব এমপি’র আসনে নতুনরা জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। তাছাড়া এমনিতেই নতুনদের ধকল সামলানো কঠিন হচ্ছে সিটিং এমপিদের অনেকের। ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে অন্তত এই সমস্যাটা নেই বিএনপির।



 

Show all comments
  • কামরুজ্জামান ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০৮ এএম says : 0
    রাজনীতি আর নির্বাচনের হিসেব কিতাব বড়িই কঠিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ