পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনীতি আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। অতিমাত্রায় রাজনীতি সচেতন হওয়ার ফলে নির্বাচনী হাওয়ায় আগেভাগে ভাসতে শুরু করেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জনপদ। ঘরে-বাইরে ভোটের গুঞ্জন আলাপ আর আড্ডা। হাটে-বাজারে একেকজনের মুখে একেক মন্তব্য আর বক্তব্য। প্রাণবন্ত বাহাস কিংবা বিতর্ক। সেই সাথে আমজনতার মুখে মুখে আলাপচারিতায় উঠে আসছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ কী নিশ্চিত করা হবে? নির্বাচন কমিশন (ইসি) কী পারবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে? ভোটাররা শান্তিমতো নিজের ভোটটি দিতে পারবে কী? এদিকে আর ১২ মাস পর কিংবা এ সময়ের ভেতর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষত দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজনীতিকে মাঠমুখী তথা ভোটারমুখী করে নিয়েছে পুরোদমে। এর সঙ্গে দুটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। এক. মনোনয়নের হিসাব-নিকাশে দলকে নতুন করে সংগঠিত ও প্রস্তুত করা। দুই. আন্তঃকোন্দলের সমস্যা-সঙ্কট মিটিয়ে ফেলে তৃণমূলের দলীয় নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মাঝে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা।
এই প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভোট রাজনীতি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় প্রধান দল ও তাদের সমর্থিত জোট-মহাজোটের প্রার্থীদের মনোননয়নের ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ জটিল অঙ্কের হিসাব-নিকাশ। আর চট্টগ্রামের দক্ষিণ ভাগে দুই দলেই রয়েছে গ্রæপিং, নেতায় নেতায় কোন্দলের পুরনো সেই ক্রনিক সমস্যা। সার্বিকভাবে চট্টগ্রামের নগর ও জেলায় কিছু এলাকা বাদে বেশিরভাগ নির্বাচনী আসনে ‘যত নেতা তত গ্রæপ’ এক নম্বর সমস্যা হিসেবেই দেখছেন মাঠের কর্মীরা। এ কারণে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে বিরোধ কোথাও কোথাও হালকা হয়ে এসেছে, আবার কোথাও চাপা পড়ে থাকলেও তা দমেনি!
চট্টগ্রাম মহানগরী
২৮৬ চট্টগ্রাম-৯ (মহানগরীর কোতোয়ালী) বন্দরনগরীর প্রাণকেন্দ্রের এই নির্বাচনী আসনে মহাজোটের টিকিটে ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে মনোনয়ন লড়াইয়ে তিনি এবার তীব্র চাপে আছেন। কেননা সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, তার পুত্র মুজিবুর রহমান এবং মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সিটি মেয়র ও মহাগর সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমর্থন কোন দিকে যাবে তা মনোনয়নে বড় একটি ফ্যাক্টর। অন্যদিকে বিএনপির মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এ আসনে দল ও জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। তবে ডা. শাহাদাত জানান, দলের হাইকমান্ড তার মনোনয়ন নিশ্চিত করে নিজ এলাকায় কাজ করতে বলেছে।
২৮৭ চট্টগ্রাম-১০ (মহানগরীর ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর) নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীনের মনোনয়নের বিকল্প দেখছে না দল ও মহাজোট। আর বিএনপি ও জোট থেকে মনোনয়ন আশা করছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। সেখানে দুই দলই অনেকটা অসংগঠিত অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়নে চরম অবহেলায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২৮৮ চট্টগ্রাম-১১ (মহানগরীর বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এম আবদুল লতিফ দল ও মহাজোটের ফের মনোনয়ন প্রত্যাশী। নিজের এলাকায় সময় দিচ্ছেন নিয়মিত, অবস্থান সংহত করতেও তৎপর। তার পাশাপাশি মহানগর নেতা খোরশেদ আলম সুজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বা সম্ভাব্য প্রার্থী। আবার সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়ে এ আসনে প্রার্থিতার চেষ্টাও কোন কোন নেতা করছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও জোট থেকে সেখানে প্রার্থী হবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পাল্টা মনোনয়ন দাবিদার আপাতত নেই। বিএনপি সেখানে অগোছালো অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
শহরতলীর হালচাল
২৮১ চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান আওয়ামী লীগের এমপি দিদারুল আলম মূল সীতাকুন্ড এলাকার ‘বাইরের (নগরীর কাট্টলী) লোক’ এবং জনগণের প্রত্যাশিত উন্নয়নে ব্যর্থতার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচিত। দলীয় নেতা-কর্মীরাও প্রতিনিয়ত ক্ষোভ-হতাশার কথা ব্যক্ত করছেন। আওয়ামী লীগ ও জোট সেখানে নতুন মুখ খুঁজছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে বিবেচনায় রয়েছেন, আওয়ামী লীগে ‘যোগদান পর্ব’ সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম মনজুর আলম (তখন বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত)। তবে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মনজুরকে নগরীর পতেঙ্গা-বন্দর আসনে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়েও কোন কোন নেতার বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে। তাছাড়া শক্ত অবস্থানে আছেন সাবেক এমপি মরহুম আবুল কাসেম মাস্টারের পুত্র বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। অন্যদিকে বিএনপি ও জোট সীতাকুন্ডে দলের যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকেই মূলত প্রার্থী হিসেবে চায়। যদিও তিনি মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত। তবে আসলাম প্রার্থী হতে না পারলে সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে বিবেচনায় আছেন সাবেক সচিব ও বনেদী সিদ্দিকী পরিবারের সন্তান এ ওয়াই বিআই সিদ্দিকী।
২৮২ চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) নির্বাচনী এলাকাটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি এবারও মহাজোটের মনোনয়ন পেতে সক্রিয় আছেন। তবে সেখানে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একাংশ চায় ‘নৌকা’য় দলের কোন যোগ্য প্রার্থী। অন্য অংশ আনিসুল ইসলামের পক্ষে। আওয়ামী লীগ থেকে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন উত্তর জেলা সভাপতি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম কিংবা পেশাজীবী নেতা অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলকে। মনোনয়ন নিয়ে দল ও জোট দ্বিধাবিভক্ত। অন্যদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন পেতে জোরালো দাবিদার হিসেবে অবস্থানে আছেন কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম। আর বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোঃ নাছির উদ্দিন ও তার পুত্র ব্যারিস্টার মীর মোঃ হেলাল উদ্দিন এবং এসএম ফজলুল হক। বিএনপিতে মনোনয়নের বিরোধ জিইয়ে আছে। হাটহাজারীতে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের ভোটের সমর্থন কোন দিকে যাবে তা রাজনৈতিক মহলের কাছে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, যতই নির্দেশ থাকুক হেফাজতের মাঠের কর্মীদের সমর্থন আওয়ামী লীগ আর বিএনপি দুই দিকেই শেষ পর্যন্ত ভাগ হয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম শহরতলীর অন্যতম আসনটি হচ্ছে ২৮৫ চট্টগ্রাম-৮ (কর্ণফুলীর ওপাড়ে বোয়ালখালী)। এই নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান এমপি জাসদ একাংশের নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদলের পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চায় তৃণমূল দলীয় মার্কায়। এলাকার উন্নয়ন অবহেলিত থাকার অভিযোগ সেখানে প্রকট। এক্ষেত্রে জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন দলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক এমপি-মন্ত্রী দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা
২৮৯ চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) থেকে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের আবারও মনোনয়ন চান বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী। বিএনপি ও জোট থেকে সেখানে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী গাজী শাহজাহান জুয়েল। তবে তৃণমূলে বিভিন্নমুখী চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বিএনপির বিকল্প প্রার্থীর সন্ধান নিয়ে। দলে অসংগঠিত অবস্থা বিরাজ করছে।
২৯০ চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসন থেকে আবারও আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত বর্তমান এমপি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের। তবে পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান মহিলা এমপি, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খান। অন্যদিকে বিএনপি ও জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম। আরও দৌঁড়ে আছেন সউদি আরব প্রবাসী নেতা মোস্তাফিজুর রহমান।
২৯১ চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) এলাকায় ফের আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের মনোনয়ন চান বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে তৃণমূলে বিকল্প খোঁজাও হচ্ছে। সেখানে বিএনপির নেতৃত্বে জোটের তরফে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত ধরে নিয়ে এগুচ্ছেন এলডিপির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
২৯২ চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) থেকে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান বর্তমান এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। তবে দল ও মহাজোটে তাকে নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা চলে আসছে বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় জামায়াত ঘরানা অবস্থান পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের সেই গোড়া থেকেই। এখানে দল নতুন মুখ খুঁজছে। মনোনয়নের দৌড়ে আলোচনায় আছেন রূপালী ব্যাংকের পরিচালক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান এবং দলের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। অন্যদিকে বিএনপি ও জোট থেকে মনোনয়ন পেতে ফের আগ্রহী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শামশুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরী। দু’জনের পক্ষে-বিপক্ষে বিরোধও রয়েছে। বিএনপির সেখানে কান্ডারীহীন দশা।
২৯৩ চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তবে এলাকায় জনবিচ্ছিন্নতা, উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যর্থতা ও বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। খোঁজা হচ্ছে দলের বিকল্প প্রার্থী। মহাজোটের মনোনয়নের দাবিদার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। অন্যদিকে বিএনপি ও জোট থেকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন দলের দক্ষিণ জেলা সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।