নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কেভিন কুপার মাঠ থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনলেন তামিম ইকবাল। অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্য দেখা গেল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। গেলপরশু সন্ধ্যার ম্যাচের ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রান নিতে গিয়ে বোলার ডিজে ব্রাভোর সঙ্গে কুপারের সংঘর্ষ! পিচের ওপর ছিটকে পড়লেন ব্রাভো! দৌড়ানোর চেষ্টা না করে নিজ থেকেই থেমে গেলেন কুপার। অন্য প্রান্তে রানআউট ঢাকা ডায়নামাইটসের টেল এন্ডের ব্যাটসম্যান! রানআউট ভেবে কুপার হাঁটা ধরেছিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ইচ্ছাকৃত নয় তবুও অপ্রত্যাশিত সংঘর্ষ। তামিম ছুটে গিয়ে তাকে থামালেন। আম্পায়ার ও ঢাকা কোচ খালেদ মাহমুদের সঙ্গে কথা বলে আবারও কুপারকে উইকেটে ফিরিয়ে আনলেন। শূন্য রানে আউট হতে পারতেন। কিন্তু তামিমের ঔদার্যে সেই কুপার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৫ বলে ৯ রান করে। এমনই এক সৌহার্দ্যরে মধ্য দিয়ে পর্দা নামলো বিপিএল চট্টগ্রাম পর্বের।
তবে শুরুটা হয়েছিল ব্যাট-বলের উত্তাপ ছড়িয়ে। গেলপরশু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের মধ্যকার ম্যাচটি দিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম পর্ব। এই ভেন্যুতে সাতটি দলের মোট ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে দারুণ উপভোগ্য ছিল প্রতিটি ম্যাচ। গ্যালারীতে এসে তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ম্যাচগুলো সরাসরি দেখে নির্মল বিনোদন পেয়েছেন চট্টলার দর্শকরা। ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ম্যাচের আমেজ পেয়েছেন তারা। কারণ, বিপিএলের সাতটি দলের হয়ে চট্টগ্রামে খেলতে এসেছিলেন শহীদ আফ্রিদি ও ক্রিস গেইলসহ ৮৮ জন বিদেশি তারকা ক্রিকেটার। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল এতদিন চট্টগ্রাম এই আন্তর্জাতিক ভেন্যু।
এবারের বিপিএলে চট্টগ্রাম ভেন্যুতে বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে। এরমধ্যে দলগত সর্বোচ্চ ২১৩ রান করে খুলনা টাইটানস। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করে তারা। চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিন সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে ২১১ রান করে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি করেছিল স্বাগতিক চিটাগং ভাইকিংস। এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ দলীয়। এছাড়াও চিটাগাং ভাইকিংস এর অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটি খেলেন এই ভেন্যুতেই। সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৯৫ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের এই রেকর্ডটি করেন তিনি। সবচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডও হয়েছে এখানে। রাজশাহী কিংসকে ৬৮ রানের ব্যবধানে হারায় খুলনা টাইটানস। অভিষেকে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ১৭ রানে চার উইকেট নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন রাজশাহী কিংসের বোলার কাজী অনিক। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের ১০টি ম্যাচে ১৫টি ফিফটির ইনিংস রয়েছে বিভিন্ন দলের ব্যাটসম্যানদের। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সন্তান তামিম ইকবালের রয়েছে দু’টি। ব্যক্তিগত একটি বাজে রেকর্ডও হয়েছে এখানে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পেস অলরাউন্ডার সাইফুদ্দীনের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ব্যাট হাতে টর্নেডো চালিয়ে ৩২ রান নিয়েছেন রাজশাহী কিংস দলপতি ড্যারেন স্যামি। এক ওভারে ৩২ রান দিয়ে ওই বাজে রেকর্ড করেন সাইফুদ্দীন। এছাড়াও এই ভেন্যুতে আম্পায়ারদের ভুলে এক ওভারে সাত বল করার ভিন্নধর্মী রেকর্ডও হয়েছে। সিলেট সিক্সার্সের পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির এক ওভারে আম্পায়াররা একটি অতিরিক্ত বল করান।
পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে থেকে এই বন্দর নগরীতে পা রেখেছিল স্বাগতিক চিটাগাং ভাইকিংস। ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছিল তারা। কিন্তু চার ম্যাচের তিনটিতেই হেরে বিপিএল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে দলটির। বিপিএলের এই চট্টগ্রাম পর্ব থেকে শূণ্য হাতেই ফিরতে হয়েছে সিলেট সিক্সার্সকেও। এখানে তাদেও দু’টি ম্যাচ থাকলেও দু’টিতেই হেরে গেছে তারা। এ কারণে চিটাগাং ভাইকিংসের মতো তাদেরও বিপিএল থেকে বিদায় ঘন্টা বেজেছে এই চট্টগ্রাম ভেন্যুতেই। তবে তিন ম্যাচে দুই জয় তুলে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকেই বিপিএলের শেষ চার নিশ্চিত করেছে খুলনা টাইটানস। ঢাকা ডায়নামাইটস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও অনেকটাই নিশ্চিত করেছে বিপিএলের সুপার ফোর। তিন ম্যাচে দুই জয়ে সুপার ফোরের স্বপ্ন দেখছে এখন রংপুর রাইডার্সও। যদিও রাজশাহী কিংসের কাগজে কলমে একটা সম্ভাবনা রয়েছে এখনও, তারপরও দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শেষে সুপার ফোরের চার দল নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাই সুপার ফোর নিশ্চিত করে ফুরফুরে মেজাজে ঢাকায় ফিরে গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, খুলনা টাইটানস, ঢাকা ডায়নামাইটস ও রংপুর রাইডার্স।
চট্টগ্রামের দর্শকরাও বাজিমাত করেছে দশটি খেলায় উপস্থিত হয়ে। এবারের খেলাগুলোতে দর্শকের ঢল নেমেছিল সাগরিকাস্থ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বলতে গেলে একেবারে সুপার হিট। টিকিটের জন্য ছিল হাহাকার। সোনার হরিণ টিকিট না পাওয়ার সুযোগ নিয়ে কালোবাজারিরা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেছে টিকিট। আসল বিপিএলের চিত্রই যেন ফুটে উঠেছিল চট্টগ্রামে। চ্যালেঞ্জটা এবার প্রথম পর্বে কিছুটা ঝিমিয়ে থাকা ঢাকা দ্বিতীয় পর্বের।
চট্টগ্রাম পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকা
দল ম্যাচ জয় হার পরি. পয়েন্ট নে.রা.রে
কুমিল্লা ৯ ৭ ২ ০ ১৫ ০.৬৮২
খূলনা ১০ ৬ ৩ ১ ১৩ ০.১২০
ঢাকা ১০ ৫ ৪ ১ ১১ ১.১৯৫
রংপুর ৯ ৫ ৪ ০ ১০ -০.১৮৯
রাজশাহী ১০ ৪ ৬ ০ ৮ -০.৫৮২
সিলেট ১০ ৩ ৬ ১ ৭ -০.৮১৩
চট্টগ্রাম ১০ ২ ৭ ১ ৫ -০.৪২৫
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।