Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাজারের উত্তাপ কমছেই না

ইলিশে হাত দেয়া যায় না, গোশতের দামও বেশি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাজারের উত্তাপ যেন কমছেই না। ভোজ্যতেলের দাম ফের বেড়েছে। চিনির কেজি একশ টাকা। চাল-ডালের দামও বেশি। গরুর গোশতের কেজি ৭শ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় মাছ ইলিশ সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রতিটি মাছের দাম বেশি। সাধারণ মানুষ দেশি মাছ ক্রয় করতে না পারায় চাষের মাছের প্রতি বেশি আগ্রহী হন। সে মাছের দামও বেড়ে গেছে। কর্মজীবী ও পেশাজীবী মানুষ শুক্রবার সাপ্তাহিক বাজার করে থাকেন। গতকাল রাজধানীর একাধিক বাজারে গিয়ে দেখা গেছে পণ্যেমূল্য এখনো ঊর্ধ্বমুখী। মরিচ, পেঁপেসহ দু’একটি সবজির দাম কমলেও অন্যান্য প্রায় সব পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, ক্যাপ্তান বাজার, ধোলাইপাড় এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে মাছ বিক্রিতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশ মাছের গ্রাহক খুবই কম। অন্যান্য মাছের দাম ইদানিং বেশি হওয়ায় আগের চেয়ে বিক্রি কমে গেছে। একজন মাছ বিক্রেতা বলেন, বিক্রি কম হচ্ছে। আগে যে মানুষ এক দেড় কেজি কই মাছ কিনতেন তিনি এখন আধা কেজি মাছ কিনেন। যেই ক্রেতা আগে বড় পাঙাশ মাছ কিনতো তিনি এখন কম দামের ছোট পাঙাশ খোঁজেন। এভাবে আগের চেয়ে ক্রেতা কমেছে খুচরা বাজারে। দামের কারণে দেশি মাছের বিক্রি আরো কম।
শুক্রবার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে বেড়েছে গরু ও মুরগির গোশতের দাম। এক কেজি গরুর গোশত বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। যা, গত সপ্তাহে ছিল ৬৮০ টাকা। অন্যদিকে ২০ টাকা বেড়ে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহন খরচ বাড়ায় গোশতের দাম বেড়েছে। গোশতের বাজারের এমন অস্থিতিশীলতায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা নিজদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর গোশত কীভাবে ৭৫০ টাকা হয়ে যায়? সাধারণ মানুষের কাছে গোশত এখন আভিজাত্যের খাবারে পরিণত হয়েছে।
শনির আখড়ায় বাজার করতে আসা ঢাকা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বাজারে আসলেই মাথা ঠিক থাকে না। কোনোদিন শুনি না যে আজ এই জিনিসটার দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগি কিনেছি ১৬০ টাকা কেজি। এখন দেখি ১৮০ টাকা। গরুর গোশত ৭০০ থেকে ৭৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে আমরা না হয় কোনোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারছি। কিন্তু গরিব মানুষ তো এক পর্যায়ে না খেয়ে মরতে হবে। এভাবে পরিবার-সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজারে। তিনি বলেন, গোশত দাম আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। অনেকেই হয়তো কিনতে পারছেন। কিন্তু দেশের মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে গরুর গোশত যেন স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, গত ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া গোশত ও মাছের দাম আর কমেনি। দাম বেশি হওয়ায় সুস্বাদু দেশি মাছ ও নদীর মাছের ক্রেতা অনেক আগেই কমে গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদার শীর্ষে থাকা চাষের (হাইব্রীড) তেলাপিয়া, পাঙাশ আর চাষের কই মাছের দামও বেড়েছে অনেক। যে কই মাছ কিছু দিন আগেও ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি ছিল এখন তা ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঙাশ মাছ আর তেলাপিয়া মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতারা বলছে, মাছের খাবারের দাম বেশি সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এসব কারণে মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে ফলে ক্রেতাও আগের চেয়ে কমেছে অনেক।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাষের কই মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, রুই মাছ ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের বিক্রে কম হলেও যারা কিনছেন তারা ইলিশ ছোট সাইজের (জাটকা) ৮০০ টাকা, মাঝারি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং বড় সাইজেরগুলো ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি কিনছেন। অন্যদিকে বড় কাতল মাছ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, বড় পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ১০৫০ টাকা, চাষের পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, ট্যাংড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আর মাগুর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর ফকিরাপুলের স্থানীয় খুচরা মাছ বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আহমদ আহমেদ বলেন, প্রতিটি মাছের দাম বাড়তি, যেই মাছেরই দাম করি সেটারই ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষের পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই মাছের দাম আগে তুলনামূলক কম ছিল; এখন সেইসব মাছেরও দাম বেড়েছে অনেক। যা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দামের কারণে ভালো মাছ তো শখ করেও কিনতে পারি না। এখন এসব কম দামের মাছের দামও বেড়ে গেছে। আগে এক কেজি কই মাছ কিনেছি এখন দাম বাড়তির কারণে আধা কেজি কিনে নিয়ে যাই। আবার বাজারে গেলে ছোট পাঙ্গাস খুঁজে নেই। এছাড়া আমার মতো অনেকে বাজারে এসে মাছ কিনতে না পেরে সবজি, ডিম কিনে বাড়ি ফিরে। বাজার ঘুরে দেখা যায় মাছের বাজারে সাধারণ নিম্ন আয়ের ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে, বাড়তি দামের কারণে তারা অনেকেই মাছ কিনতে পারে না।
ধানমন্ডির নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, বাজারে মাছের দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতা কমে গেছে। আগে যদি সারাদিনে যেখানে ৪০/৫০ কেজি কই মাছ বিক্রি করেছি সেখানে এখন সেই পরিমাণ অনেক কমে গেছে। বাজারে আগে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হত তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কই, রুই মাছ। সেগুলো এখন আগের মতো তেমন বেশি বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ বাড়তি দামে মাছ কেনা কমিয়ে দিয়েছে, ক্রেতাও কমেছে আগের চেয়ে।
তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, সবজির দাম আগের চেয়ে সামান্য কমেছে। সব সবজির দাম ৫-১০ টাকা করে কমেছে। গত কয়েক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি থাকা কাঁচা মরিচের দামও এই সপ্তাহে স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিটি সবজিই ক্রমান্বয়ে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসছে। বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক সপ্তাহ আগেও এই দাম ছিল ২৫০ টাকার বেশি। এদিকে সপ্তাহের বাজারে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১৫ থেকে ৩০ টাকা ও কমলি শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাকের আঁর্টি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজারের উত্তাপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ