Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলট্রাসনোগ্রাফি কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন সব যন্ত্রপাতি আবিষ্কিত হয়েছে যার সাহায্যে অতি অল্প সময়ে মানব দেহের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এমন একটি যন্ত্রের নাম আলট্রাসনোগ্রাফ। এটি এক ধরণের অতি উন্নত প্রযুক্তির রোগ নিরুপণ পদ্ধতি যা শুধু মাত্র নিরাপদ শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়। আলট্রাসনোগ্রাফের শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১-১০ মেগাহার্টজ হয়ে থাকে। এ শব্দ সাধারণত মানুষ কানে শুনতে পায় না। এ শব্দ তরঙ্গ মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রবেশ করানো হয় এবং প্রতিধ্বনি কম্পিউটার যন্ত্রের সাহায্যে একটি টেলিভিশনের পর্দায় ছবি আকারে প্রতিফলিত হয়। তা দেখে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করেন। মানব দেহের অনেক রোগই এ পদ্ধতিতে নিরুপন করা হয়। তার মধ্যে লিভার (যকৃত), পিত্তথলী, অগ্নাশয়, প্লীহা, কিডনি, মূত্রথলী, প্রস্টেট গ্রন্থি, জরায়ু, গর্ভাশয়, থাইরয়েড গ্রন্থি, স্তন, চোখ ইত্যাদি। মায়েদের গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের গর্ভের সন্তানের বয়স,ওজন,অবস্থান,জন্মগত ত্রæটি সন্তানটি জীবিত না মৃত, সন্তানের সংখ্যা, সন্তান ছেলে না মেয়ে ইত্যাদি তথ্য অতি সহজে জানা যায়। অন্য কোন মাধ্যমে এমন তথ্য জানা সম্ভব নয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই প্রয়োজন। কোন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পর ২০-২২ সপ্তাহের পর অথবা ২৮-৩০ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই দরকার কারণ এ পরীক্ষা হতে নিচের তথ্য গুলো জানা যায় এবং কোন প্রকার অসুবিধা হলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করে নিরাপদ থাকা যায়। 

১। গর্ভের বয়স:- এ পরীক্ষায় বাচ্চার মাথা এবং পায়ের হাড় মেপে সে মোতাবেক মহিলার ডেলিভারীর তারিখ বা প্রসবের তারিখ বলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যাদের মাসিকের হিসাব মনে নেই বা হিসাব রাখেন না বা যাদের মাসিক অনিয়মিত তাদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই প্রয়োজন।
২। গর্ভের সংখ্যা :- এ পরীক্ষার সাহায্যে গর্ভে কয়টি সন্তান বিদ্যমান তা সুন্দর ভাবে জানা যায়। প্রসবের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
৩। গর্ভ ফুলের অবস্থান:- গর্ভাবস্থায় গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা খুবই দরকার। এ পরীক্ষায় যদি দেখা যায় গর্ভফুল জরায়ুর মুখের কাছাকাছি অথবা জরায়ুর মুখে ঢেকে আছে অথবা নাড়ী বাচ্চাকে পেচিয়ে আছে তাহলে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দ্রæত ব্যাবস্থা নিতে হবে। এ অবস্থায় সধারণত স্বাভাবিক প্রসব আশা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের প্রস্থতি নিতে হতে পারে। অনেক সময় হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে তার কারণ জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া যায়।
৪। বাচ্চার অবস্থান:- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান জানা জরুরি কারণ স্বাভাবিক খাড়া অবস্থায় বাচ্চা না থাকলে বিপদের লক্ষণ হতে পারে। বাচ্চা উল্টো বা কোনাকোনি থাকলে এ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া যায়। ফলে মারাতœক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা ছাড়া পেটের পানির পরিমাণ জানা আরো জরুরি। জরায়ুতে পানিতে ভাসমান অবস্থায় বাচ্চা থাকে কোন কারণে পানি কমে গেলে বা শুকিয়ে গেলে বাচ্চা মারা যেতে পারে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে অনাগত সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
৫। সন্তান ছেলে না মেয়ে:- আধুনিক এ যুগে মহিলারা গর্ভবতী হলেই কাংখিত হয়ে থাকেন পরিবারের সবাই সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানার জন্য। গর্ভের সন্তানের বয়স ২০-২২ সপ্তাহ হলেই এ পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তান ছেলে না মেয়ে জানা যায়। তবে ২৬ সপ্তাহের পরে স্পষ্ট ভাবে জানা যায় সন্তান ছেলে না মেয়ে। অনেক সময় গর্ভধারণ জরায়ুর বাহিরে সন্তান বড় হতে থাকে। যা খুবই বিপদ জনক। তা আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জেনে সঠিক চিকিৎসা নিলে বিপদ মুক্ত হওয়া যায়। তা ছাড়া বাচ্চার হৃদস্পন্দন কম না বেশি তা নির্ণয় করা জরুরি। বর্তমান সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার, গ্রহণ যোগ্যতা এত ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ পরীক্ষাটি করে থাকেন। তা ঠিক নয়। আপনার দেহের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন কি না তা আপনার চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন। মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঔষধ গ্রহণ করবেন না। অথবা নিজে নিজে অযথা পরীক্ষা করাবেন না।

ষ মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন