Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কচু শাকের ভেষজ গুণ

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। সবজী হিসাবে বাংলাদেশে কচু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার শেষভাগে যখন অন্যান্য সবজী বেশী পরিমাণে পাওয়া যায় না তখন সবজীর চাহিদা মেটাতে কচু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের দেশে রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, পতিত জমিতে অনাদরে অবহেলায় কচুগাছ জন্মে। বন জঙ্গলে জন্মে বনো কচু। বুনো কচু মানুষ খায় না। অনুমান করা হয়, প্রায় ২ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ কচুর চাষ করতে শুরু করে। কচুর খাবার উপযোগী জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-মুখী কচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পইদনাল কচু, দুধ কচু, মৌলবী কচু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি। প্রজাতিভেদে কচুর মূল, শেকড়, লতি, পাতা ও ডাঁটা সবই খাওয়া যায় ।
এদেশে সবজি হিসেবে কচুর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণ যোগ্যতা বহুদিন ধরে। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি ও সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এ শাক দু’প্রকার যথা : ১। সবুজ কচুশাক ২। কালো কচুশাক। পুষ্টি তালিকা : খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ ও কালো কচুশাকে যথাক্রমে ১০২৭৮ ও ১২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে । এ ক্যারোটিন থেকেই আমরা ভিটামিন ‘এ’ পেয়ে থাকি। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচুশাক থেকে ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৫৬ কিলোক্যালোরী খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। সবুজ কচুশাকের চেয়ে কালো কচুশাক অনেক বেশি পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচুশাকে ৬.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৮.১ গ্রাম শর্করা, ২.০ গ্রাম চর্বি, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৭৭ কিলোক্যালোরী খাদ্যশক্তি রয়েছে। আমাদের দেহের পুষ্টি সাধনে এসব পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । এমন অনেক শাক-সবজি আছে যেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ থাকে। কিন্তু এটি সহজে আত্মীকৃত হয় না। অথচ কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এ শাকের লৌহ দেহ কর্তৃক সহজে আত্মীকরণ হয়।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়া ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে কচুকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। মুখী এবং পানি কচুর ডগা দেহের ক্ষত রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া জ্বরের রোগীকে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধ কচু খাওয়ানো হয়। ওল কচুর রস, উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়। আবার মানকচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা ঘরে ঘরে প্রচলিত রয়েছে। কচুশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। পুষ্টি ও ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও খাওয়ার সময় গলা চুলকায় বলে কচুশাক অনেকে খেতে চায় না। কারণ কচুতে অক্সালেটের যে দানা থাকে, খাওয়ার সময় গলায় কাঁঠার মতো বিধে যায়। তাই বলে কচু কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া লালশাক ও পুঁইশাকের চেয়ে খাদ্যশক্তি, চর্বি, শর্করা, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ বেশি থাকে। চিকিৎসকরা রক্তশূণ্যতা এবং গর্ভাবস্থায় সহজে আয়রণ বা লৌহের জন্য বেশি করে কচু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কচুশাক কোলন ক্যান্সার ও বেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। কচুশাক শিশুদের বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। ফলে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় কচু খেলে শরীরে এ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা যায়। যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের কচু না খাওয়া ভালো। কাজেই দেশের প্রতিটি পরিবারের বয়স্কসহ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ির আঙিনায়, বাগান আকারে বা যার যতটুকু পতিত জায়গা আছে সেখানে পরিকল্পিতভাবে কচুশাকসহ বিভিন্ন প্রকার গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাক উৎপাদন করে প্রতিদিন নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কচু ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। কচুশাক আমাদেরকে নানা রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন-আল্লাহ যেখানে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার আশেপাশে খাদ্য শস্যের ভিতরেও রোগ আরোগ্যের শেফাও দিয়েছেন । গাছের মতো বন্ধু নাই-খাদ্য পুষ্টি ওষুধ পাই। তাই পথের ধারে অবহেলায় বেড়ে উঠা গাছটিও আপনার মূল্যবান জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।

ষ ডাঃ মাওঃ লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট-০১৭১৬২৭০১২০

 



 

Show all comments
  • গ্রাঃ ডাঃ আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। ২৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:৪০ পিএম says : 0
    বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন এর ফলে উৎপাদন বেহত হচ্ছে।অপসংস্কৃতি ও খাদ্যাবাশ এর রুটিন না যেনে ফাস্ট ফুডস এর কারনে মানব দেহের গঠন প্রবৃত্তি বিকৃত হয়ে, আমাদের মরণ আত্মহত্যা দিকে যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক চিন্তা ও সমন্বিত সংগ্রামে সহায়তা করুন আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন