২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস্ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব এইডস্ দিবসে সাধারণ জনগণকে এইচ, আই, ভি, সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। টঘঅওউঝ ২০১৭ সালে বিশ্ব এইডস দিবসে ক্যাম্পেইন এর বিষয় হিসাবে ঘোষণা করেছে, “গু ঐবধষঃয, গু জরমযঃ.” অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে জরমযঃ ঃড় যবধষঃয. অর্থাৎ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পৃথিবীর যে যেখানেই বাস করুক না কেন, সব মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
২০১৬ সালে টঘঅওউঝ এর ডাটা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী এক মিলিয়ন মানুষ এইডস্ সম্পৃক্ত রোগে মারা যায়। বিশ্বের সবগুলো দেশ একযোগে পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস্ দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এইডস্ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করবে।
এইচ আই ভি ভাইরাস এইডস্ রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এ ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে রক্ত সঞ্চালন, এইচ.আই.ভি আক্রান্ত সূঁচ এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে। এছাড়াও এইচ.আই.ভি বহনকারী মহিলা থেকে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবকালীন সময়ে তাঁর সন্তানের নিকট এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। এইডস তখনই হয় যখন এইচ. আই. ভি সংক্রমণের কারণে কারো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। সর্ব সাধারণের সচেতনতার জন্য এইচ. আই. ভি সংক্রমণের কিছু লক্ষণ জানা প্রয়োজন যা নি¤œরূপ: * দ্রæত গতিতে ওজন কমে যাওয়া। * শুষ্ক কাশি। * বার বার জ্বর আসা। * রাতের বেলায় প্রচন্ড ঘামিয়ে যাওয়া। * অনবরত এবং বর্ণানাতীত দূর্বলতা। *কিছু স্থানের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। * এক সপ্তাহের বেশি সময় ডায়রিয়া থাকলে। *
সাদা অথবা ব্যতিক্রমধর্মী কোনো দাগ জিহŸা বা মুখের ভিতর দেখা দিলে। * স্মৃতি শক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়া এবং বিষণœতা।
এইচ আই ভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এইচ আই ভি আক্রান্তদের তিনভাগের একভাগেরও বেশি মানুষের মুখে সমস্যা থাকে। এটি হয়ে থাকে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে। এইচ আই ভি আক্রান্তদের মুখের সমস্যার লক্ষণসমূহ: * ওরাল ক্যান্ডিডোসিস (থ্রাশ)। * বার বার মুখে অ্যাপথাস আলসার। * হেয়ারী লিউকোপ্লাকিয়া। * জ্বর ঠোসা। * ক্যাপোসিস সারকোমা (টিউমার)। * হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সংক্রমণ। * লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। * শুষ্ক মুখ যার কারণে দাঁতে ক্ষয়, খাবার গ্রহণ এবং গলধঃকরণে সমস্যা হতে পারে। জিহŸা বা মুখে কালো, সাদা বিশেষ ধরণের দাগ।
তার মানে এই নয় যে, উপরের মুখের ও শারীরিক লক্ষণসমূহ দেখা দিলেই কেউ এইচ আই ভি আক্রান্ত হয়েছেন বা এইডস রোগ আছে- এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। এক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে আপনাকে এইডস পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এইডস পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনার এইডস রোগ হয়ে গেছে। এমন অনেক মানুষ দেখা গেছে যারা এইচ আই ভি আক্রান্ত, তাদের অনেক বৎসর কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। এইচ আই ভি সংক্রমণের লক্ষণসমূহের উপর ভিত্তি করে ও সব সময় মন্তব্য করা ঠিক নয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এইডস্ বিস্তারে বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। এইডস্ রোগীর পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে। কেবল সভা, সেমিনার নয় সত্যিকার অর্থে কাজ করতে হবে।
একটি কথা না বললেই নয় যে, বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বেশ কিছু এইচ আই ভি ভাইরাস পজিটিভ ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের-ই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় নি। তাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের দেশের জনগণ এইডস্ এর ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই এই বিষয়টি সবার খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে মিয়ানমারে প্রচুর এইডস্ রোগী রয়েছে।
তাই বাঁচতে হলে শুধু জানলেই হবে না, অন্যকে জানানোর মাধ্যমে সার্বিক সামাজিক সচেতনতার লক্ষ্যে সবার একযোগে কাজ করতে হবে। নষ্ট করার মতো সময় এক মুহূর্তও নেই। আসুন আমরা গোঁড়ামি ও চরম পন্থা বর্জন করে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জীবন গড়ার মাধ্যমে প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার শপথ গ্রহণ করি।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল: ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইল: ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স
সার্ভিসাইটিস
জরায়ুর নিচের অংশকে সার্ভিক্স বলে। সার্ভিক্স এর প্রদাহ হলে তাকে বলে সার্ভিসাইটিস। প্রদাহের সবচেয়ে পরিচিত কারণ জীবাণুর সংক্রমণ। সার্ভিসাইটিস ২ ধরনের। অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। হঠাৎ তীব্র প্রদাহ হলে তাকে অ্যাকিউট সার্ভিসাইটিস বলে। দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ চলতে থাকলে তাকে ক্রনিক সার্ভিসাইটিস বলে।
সার্ভিসাইটিসে বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। সবার যে একই রকম উপসর্গ থাকবে তা নয়। তবে কিছু উপসর্গ আছে যা বেশীর ভাগ রোগীরই দেখা যায়। এর মধ্যে আছে-
১। রক্ত¯্রাব। ২। তলপেট এবং যোনীর ভেতরে ব্যথা।
৩। মিলনের সময় ব্যথা
৪। সাদা¯্রাব
৫। জ্বর, অস্বস্তি
৬। পেছনের দিকে ব্যথা
বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণে সার্ভিসাইটিস হয়। এর মধ্যে আছে:
১। হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস।
২। ক্ল্যামাইডিয়া
৩। গনোরিয়া
৪। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস
এলার্জির কারণেও কিন্তু সার্ভিসাইটিস হতে পারে।
ইতিহাস শারীরিক পরীক্ষা এবং টেস্ট করে এই রোগ ডায়াগনসিস করা যায়। প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট, যোনি থেকে নিঃসৃত রসের কালচার এবং বøাড টেস্ট করে নিশ্চিত ভাবে রোগটি ধরা যায়।
সার্ভিসাইটিসের চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর ওষুধ দিতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। খুব তীব্র অবস্থায় ক্রায়োসার্জারি এবং সিলভার নাইট্রেট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন চিকিৎসা লাগে।
সার্ভিসাইটিস পরিচিত সমস্যা। এমন হলে গাইনোকোলজিস্ট এর পরামর্শ নিতে হবে। নাহলে ভবিষ্যতে ভুগতে হতে পারে।
ষ ডা. ফজলুল কবীর পাভেল
আপনার প্রশ্ন
প্রশ্ন ঃ আমি বিবাহিতা। বয়স ৩২। এ বয়সেই আমার মুখের ত্বক নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার সৌন্দর্যহানি হয়েছে। আমি আমার ত্বককে পূর্বাবস্থায় ফিওে পেতে চাই।
Ñলুবনা। উত্তারা। ঢাকা
উত্তর ঃ অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক কসমেটিক সার্জারি মেসোথেরাপী আপনার মুখের ত্বক কোন পার্শ্ব-ক্রিয়া ছাড়াই মাত্র ০১ সেশন চিকিৎসায় নমনিয় ও কমনী করতে সক্ষম।
প্রশ্ন ঃ আমি বিবাহিত। বয়স ৪৮। বিয়ের সময় আমি শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে আমার লিঙ্গ একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। আমি এই দুঃসহ যাতনা হতে মুক্তি চাই।
-করিম। মিরপুর । ঢাকা।
উত্তর ঃ আপনি সম্ভবত পুরুষত্বহীনতায় ভুগছেন। আপনার রক্তে সেক্স -হরমোন সমূহের ভারসাম্যহীনতা শনাক্ত করে একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞকৃত অতিদ্রæত আপনাকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন।
প্রশ্ন ঃ আমি অবিবাহিতা। বয়স ১৭। আমার মুখে বুকে ও পিঠে অনেক বড় বড় ব্রণ হয়েছে। আমি অতি অল্প সময়ে এ থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
Ñরুমা। রাজাবাজার, ঢাকা।
উত্তর ঃ আপনার জন্য সু-খবর হলোÑ অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক সার্জারি- রেডিও সার্জারি
চিকিৎসায় কোন পাশ্ব-ক্রিয়া ছাড়াই আপনার
মুখের ব্রণ নির্মূল করতে সক্ষম।
প্রশ্ন ঃ আমি অবিবাহিতা। বয়স ২২। আমার মুখে অনেক বাদামী তিলা হয়েছে। এতে আমার মুখশ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। প্লিজ আমাকে তিলা হতে মুক্তির একটি সুপরামর্শ দেবেন।
Ñলতিফা, ইডেন কলেজ, ঢাকা।
উত্তর ঃ আপনি আপাতত রোদ থেকে দূরে থাকুন। এতে না কমলে আপনি একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ‘লেজার’ চিকিৎসার মাধ্যমে তিলা থেকে মুক্তি পাবেন ইনশা আল্লাহ।
ষ ডা. একেএম মাহমুদুল হক খায়ের
ত্বক, যৌন, সেক্স ও এলার্জী বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট, কসমেটিক সার্জন।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ফোন ঃ ০১৭১৯২১৯৪২৯, ০২৯৩৪২৮৭৬ ।
অটিজম প্রতিরোধে চাই সচেতনতা
অটিজম আক্রান্তদের প্রতি অযতœ অবহেলা না করে সাধারণ নাগরিকদের মত জীবন যাপনে সুযোগ করে দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের অনেকের ধারনা, অটিজম একটি বংশগত রোগ। এটা সম্পূর্ণভাবে ঠিক নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ বাবা মায়েরও অটিস্টিক শিশু হতে পারে। আবার অনেকের ধারনা সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশু অটিস্টিক হতে পারে। এটাও কিন্তু ঠিক নয়। অটিস্টিক শিশুকে অনেকে বাবা মায়ের অভিশাপ বলে থাকেন, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। অনেক শিশু জন্ম ও স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী অথবা জেদি প্রকৃতির হতে পারে। এতেই কিন্তু বোঝা যায় না যে শিশুটি অটিস্টিক। আমাদের সমাজের নানান ভুল ধারনা ও কুসংস্কারের ফলে অনেক শিশুর ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে, যা শিশুর জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কোনও শিশু অটিজমে আক্রান্ত মনে হলে অনতিবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে অটিজমের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক সফলভাবে মোকাবেলা করা যায়। শিশুর কি ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে, নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
অটিজমের বিষয়টি যত দ্রæত নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভাল। অটিস্টিক শিশু হয়তো অন্য সকল সাধারণ শিশুর মতো সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না। কিন্তু, সাইকোথেরাপি বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব শিশুকে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এই ধরনের শিশুদের জন্য প্রচুর বিশেষায়িত স্কুল আছে, সেখানে তাদের জন্য বিশেষভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা আছে। এ ধরনের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেবেন, কোন ধরনের স্কুলে আপনার শিশুকে ভর্তি করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে এগোলে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুই উন্নতি করে। এমনকি অনেক শিশু সাধারণ স্কুলে যাওয়ার মতোও হয়ে ওঠতে পারে। অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা যেমন- অতিরিক্ত চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেক সময় এরকম ক্ষেত্রে, চিকিৎসক শিশুটিকে ঔষধও দিতে পারেন। নিবিড় ব্যবহারিক পরিচর্যা, স্কুল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রয়োজনে সঠিক ওষুধের ব্যবহার একটি শিশুর অটিজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেকখানি সহায়ক হয়। যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া অটিজম আক্রান্ত শিশুদেরকে বাসায় আবদ্ধ না রেখে চিন্তা চেতনা বৃদ্ধির জন্য পার্কে কিংবা কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। তাদের বিনোদনের সুযোগ করে দিতে হয়। এমনকি অন্যান্য শিশুদের সাথে মিলেমেশার সুযোগ করার ক্ষেত্রে অন্যান্য অবিভাবকদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।
অটিজমের যেহেতু কোনও নিরাময় নেই, তাই সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবারে কারো অটিজম অথবা কোন মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- বেশি বয়সে বাচ্চা না নেওয়া। বাচ্চা নেয়ার আগে মাকে রুবেলা ভেকসিন নেয়া। গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ না খাওয়া । মায়ের ধূমপান, মদ্যপানের মত কোন অভ্যাস থাকলে বাচ্চা নেয়ার আগে অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া। বেশী বেশী পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সন্তান জন্মের পর থেকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
আসুন নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করে অটিজম প্রতিরোধ করি। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা আমাদের কিংবা সমাজের বোঝা নয়। এদের প্রতিভাগুলি বিকাশ করার লক্ষ্যে তাদের পাশে দাড়াই।
ষ মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
সংগঠক ও সমাজকর্মী ।
কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে হলুদ
রূপচর্চা থেকে শুরু করে চিকিৎসায়ও প্রচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে হলুদ। তবে এটি যে বড় কোনও রোগের প্রতিষেধক হতে পারে, তা এখনও অনেকের কাছেই অজানা। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির দু’জন গবেষক হলুদের আরও এক কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন। গবেষকরা বলেছেন, হলুদে কারকিউমিন নামে এমন একটি উপাদান রয়েছে, যা কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, হলুদের কারকিউমিন নানা খাবারের মধ্যে থাকলেও তা কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। তারা গবেষণায় মূলত দু’ধরনের উপাদানের ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো হলুদের কারকিউমিন, অন্যটি সিলিমেরিন। এ দু’টি উপাদানকেই কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে মনে করছেন গবেষকরা। তারা জানান, হলুদের কার্যকর একটি উপাদান হলো কারকিউমিন। এটি মশলাযুক্ত খাবারে থাকে। এছাড়াও আরেকটি উপাদান সিলিমেরিন পাওয়া যায় কাঁটাগাছে। ওই গাছটির রস সাধারণত পেটের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
গবেষকরা কোলন ক্যানসারের ওপর উপাদানগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে কোলন ক্যানসারের মডেল তৈরি করেন। সেখানে কারকিউমিন ও সিলিমেরিন প্রয়োগ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, উভয় উপাদানের একত্রে ব্যবহার কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর। এগুলো কোলন ক্যানসার বৃদ্ধি রোধ করে এবং ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়। এছাড়া কোলন ক্যানসারের কোষগুলোর মৃত্যুর হারও বেড়ে যায়। এ বিষয়ে সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির গবেষক উথায়শঙ্কর ইজেকিয়েল বলেন, এধরনের উপাদান ব্যবহার ক্যানসার চিকিৎসা সুবিধাজনক। কারণ, প্রচলিত পদ্ধতিতে যেভাবে কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়, তাতে দেহে বিষাক্ত উপাদান সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়। তিনি বলেন, উদ্ভিদ উপাদানের সহায়তায় যদি কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়, তা হলে তাতে দেহের ক্ষতিও রোধ করা সহজ হবে। তবে গবেষকরা বলেন, কোলন ক্যানসারের চিকিৎসায় কার্যকর হলেও এ উপাদানগুলো বাড়তি গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে যে কোনও ওষুধই ব্যবহার করা ক্ষতিকর। উচ্চমাত্রায় যে কোনও উপাদান ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কোলন ক্যানসারের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য আরও কিছুদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরবর্তীতে সবকিছু ঠিক থাকলে তা কোলন ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যাবে বলেও জানান গবেষকরা।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
আলট্রাসনোগ্রাফি কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা
বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন সব যন্ত্রপাতি আবিষ্কিত হয়েছে যার সাহায্যে অতি অল্প সময়ে মানব দেহের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এমন একটি যন্ত্রের নাম আলট্রাসনোগ্রাফ। এটি এক ধরণের অতি উন্নত প্রযুক্তির রোগ নিরুপণ পদ্ধতি যা শুধু মাত্র নিরাপদ শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়। আলট্রাসনোগ্রাফের শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১-১০ মেগাহার্টজ হয়ে থাকে। এ শব্দ সাধারণত মানুষ কানে শুনতে পায় না। এ শব্দ তরঙ্গ মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রবেশ করানো হয় এবং প্রতিধ্বনি কম্পিউটার যন্ত্রের সাহায্যে একটি টেলিভিশনের পর্দায় ছবি আকারে প্রতিফলিত হয়। তা দেখে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করেন। মানব দেহের অনেক রোগই এ পদ্ধতিতে নিরুপন করা হয়। তার মধ্যে লিভার (যকৃত), পিত্তথলী, অগ্নাশয়, প্লীহা, কিডনি, মূত্রথলী, প্রস্টেট গ্রন্থি, জরায়ু, গর্ভাশয়, থাইরয়েড গ্রন্থি, স্তন, চোখ ইত্যাদি। মায়েদের গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের গর্ভের সন্তানের বয়স,ওজন,অবস্থান,জন্মগত ত্রæটি সন্তানটি জীবিত না মৃত, সন্তানের সংখ্যা, সন্তান ছেলে না মেয়ে ইত্যাদি তথ্য অতি সহজে জানা যায়। অন্য কোন মাধ্যমে এমন তথ্য জানা সম্ভব নয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই প্রয়োজন। কোন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পর ২০-২২ সপ্তাহের পর অথবা ২৮-৩০ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই দরকার কারণ এ পরীক্ষা হতে নিচের তথ্য গুলো জানা যায় এবং কোন প্রকার অসুবিধা হলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করে নিরাপদ থাকা যায়।
১। গর্ভের বয়স:- এ পরীক্ষায় বাচ্চার মাথা এবং পায়ের হাড় মেপে সে মোতাবেক মহিলার ডেলিভারীর তারিখ বা প্রসবের তারিখ বলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যাদের মাসিকের হিসাব মনে নেই বা হিসাব রাখেন না বা যাদের মাসিক অনিয়মিত তাদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই প্রয়োজন।
২। গর্ভের সংখ্যা :- এ পরীক্ষার সাহায্যে গর্ভে কয়টি সন্তান বিদ্যমান তা সুন্দর ভাবে জানা যায়। প্রসবের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
৩। গর্ভ ফুলের অবস্থান:- গর্ভাবস্থায় গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা খুবই দরকার। এ পরীক্ষায় যদি দেখা যায় গর্ভফুল জরায়ুর মুখের কাছাকাছি অথবা জরায়ুর মুখে ঢেকে আছে অথবা নাড়ী বাচ্চাকে পেচিয়ে আছে তাহলে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দ্রæত ব্যাবস্থা নিতে হবে। এ অবস্থায় সধারণত স্বাভাবিক প্রসব আশা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের প্রস্থতি নিতে হতে পারে। অনেক সময় হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে তার কারণ জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া যায়।
৪। বাচ্চার অবস্থান:- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান জানা জরুরি কারণ স্বাভাবিক খাড়া অবস্থায় বাচ্চা না থাকলে বিপদের লক্ষণ হতে পারে। বাচ্চা উল্টো বা কোনাকোনি থাকলে এ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া যায়। ফলে মারাতœক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা ছাড়া পেটের পানির পরিমাণ জানা আরো জরুরি। জরায়ুতে পানিতে ভাসমান অবস্থায় বাচ্চা থাকে কোন কারণে পানি কমে গেলে বা শুকিয়ে গেলে বাচ্চা মারা যেতে পারে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে অনাগত সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
৫। সন্তান ছেলে না মেয়ে:- আধুনিক এ যুগে মহিলারা গর্ভবতী হলেই কাংখিত হয়ে থাকেন পরিবারের সবাই সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানার জন্য। গর্ভের সন্তানের বয়স ২০-২২ সপ্তাহ হলেই এ পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তান ছেলে না মেয়ে জানা যায়। তবে ২৬ সপ্তাহের পরে স্পষ্ট ভাবে জানা যায় সন্তান ছেলে না মেয়ে। অনেক সময় গর্ভধারণ জরায়ুর বাহিরে সন্তান বড় হতে থাকে। যা খুবই বিপদ জনক। তা আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জেনে সঠিক চিকিৎসা নিলে বিপদ মুক্ত হওয়া যায়। তা ছাড়া বাচ্চার হৃদস্পন্দন কম না বেশি তা নির্ণয় করা জরুরি। বর্তমান সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার, গ্রহণ যোগ্যতা এত ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ পরীক্ষাটি করে থাকেন। তা ঠিক নয়। আপনার দেহের রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন কি না তা আপনার চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন। মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঔষধ গ্রহণ করবেন না। অথবা নিজে নিজে অযথা পরীক্ষা করাবেন না।
ষ মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
কচু শাকের ভেষজ গুণ
কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। সবজী হিসাবে বাংলাদেশে কচু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার শেষভাগে যখন অন্যান্য সবজী বেশী পরিমাণে পাওয়া যায় না তখন সবজীর চাহিদা মেটাতে কচু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের দেশে রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, পতিত জমিতে অনাদরে অবহেলায় কচুগাছ জন্মে। বন জঙ্গলে জন্মে বনো কচু। বুনো কচু মানুষ খায় না। অনুমান করা হয়, প্রায় ২ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ কচুর চাষ করতে শুরু করে। কচুর খাবার উপযোগী জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-মুখী কচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পইদনাল কচু, দুধ কচু, মৌলবী কচু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি। প্রজাতিভেদে কচুর মূল, শেকড়, লতি, পাতা ও ডাঁটা সবই খাওয়া যায় ।
এদেশে সবজি হিসেবে কচুর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণ যোগ্যতা বহুদিন ধরে। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি ও সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এ শাক দু’প্রকার যথা : ১। সবুজ কচুশাক ২। কালো কচুশাক। পুষ্টি তালিকা : খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ ও কালো কচুশাকে যথাক্রমে ১০২৭৮ ও ১২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে । এ ক্যারোটিন থেকেই আমরা ভিটামিন ‘এ’ পেয়ে থাকি। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচুশাক থেকে ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৫৬ কিলোক্যালোরী খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। সবুজ কচুশাকের চেয়ে কালো কচুশাক অনেক বেশি পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচুশাকে ৬.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৮.১ গ্রাম শর্করা, ২.০ গ্রাম চর্বি, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৭৭ কিলোক্যালোরী খাদ্যশক্তি রয়েছে। আমাদের দেহের পুষ্টি সাধনে এসব পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । এমন অনেক শাক-সবজি আছে যেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ থাকে। কিন্তু এটি সহজে আত্মীকৃত হয় না। অথচ কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এ শাকের লৌহ দেহ কর্তৃক সহজে আত্মীকরণ হয়।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়া ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে কচুকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। মুখী এবং পানি কচুর ডগা দেহের ক্ষত রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া জ্বরের রোগীকে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধ কচু খাওয়ানো হয়। ওল কচুর রস, উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়। আবার মানকচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা ঘরে ঘরে প্রচলিত রয়েছে। কচুশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। পুষ্টি ও ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও খাওয়ার সময় গলা চুলকায় বলে কচুশাক অনেকে খেতে চায় না। কারণ কচুতে অক্সালেটের যে দানা থাকে, খাওয়ার সময় গলায় কাঁঠার মতো বিধে যায়। তাই বলে কচু কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া লালশাক ও পুঁইশাকের চেয়ে খাদ্যশক্তি, চর্বি, শর্করা, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ বেশি থাকে। চিকিৎসকরা রক্তশূণ্যতা এবং গর্ভাবস্থায় সহজে আয়রণ বা লৌহের জন্য বেশি করে কচু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কচুশাক কোলন ক্যান্সার ও বেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। কচুশাক শিশুদের বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। ফলে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় কচু খেলে শরীরে এ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা যায়। যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের কচু না খাওয়া ভালো। কাজেই দেশের প্রতিটি পরিবারের বয়স্কসহ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ির আঙিনায়, বাগান আকারে বা যার যতটুকু পতিত জায়গা আছে সেখানে পরিকল্পিতভাবে কচুশাকসহ বিভিন্ন প্রকার গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাক উৎপাদন করে প্রতিদিন নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কচু ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। কচুশাক আমাদেরকে নানা রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন-আল্লাহ যেখানে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার আশেপাশে খাদ্য শস্যের ভিতরেও রোগ আরোগ্যের শেফাও দিয়েছেন । গাছের মতো বন্ধু নাই-খাদ্য পুষ্টি ওষুধ পাই। তাই পথের ধারে অবহেলায় বেড়ে উঠা গাছটিও আপনার মূল্যবান জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
ষ ডাঃ মাওঃ লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট-০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।