Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কপাল খুলবে কার পুড়বে কার

চট্টগ্রামে ভোট রাজনীতির ভাবনা-৩

শফিউল আলম : | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচনমুখী রাজনীতি যতই জোরদার হচ্ছে সেই সাথে সরব হচ্ছেন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির টিকিট লাভের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। সবকিছু মিলে চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনী এলাকাওয়ারি সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন ‘লড়াইয়ে’ কেউ এগিয়ে আবার কেউবা পিছিয়ে। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নে কার ভাগ্য খুলবে আর কার কপাল পুড়বে তা যথাসময়েই নির্ধারিত হয়ে যাবে। তবে তার আগেই মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা শেষতক মাঠে থাকতে চান। অনেকেরই ভাবসাব এমন যেন, ‘বিনাযুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মোদিনী’! আবার কেউ কেউ ভোটে দাঁড়ানোর ‘হুংকার’ দিয়ে ধনাঢ্য বড়সড় মাপের প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ হওয়ার আশায় সুযোগের অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে কারও উদ্দেশ্য পূরণে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে এখন থেকেই নেপথ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রতিপক্ষকে বাজিমাৎ করতে নির্বাচনী কূট-কৌশলের অংশ হিসেবেই ডামি প্রার্থী ঠিক করে রেখে আগেভাগে মাঠে নামানো হয়। প্রতিবার ভোটের মওসুমের বেশ আগেই ডামিদের পেছনে টাকার খেলা চলে দেদারসে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা
২৭৮ চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) নির্বাচনী আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এবারও আগে বারের প্রার্থীর নামটিই বহাল থাকবে যা বলতে গেলে প্রায় নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশী তেমন না থাকায় এখানে দল ও জোটগত মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন দলের প্রবীন নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। অন্যদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম উঠে আসছে শিল্পপতি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমীনের। তবে বিএনপির এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। মিরসরাই আসনটি ফেনী জেলার সন্নিকটে। ভোটের অঙ্কের বিভিন্ন আঙ্গিকে হিসাব-নিকাশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিরসরাইতেও প্রার্থী হওয়ার জন্য সম্মত করাতে শীর্ষ নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়। অতীতে বেগম জিয়া এই আসনে প্রার্থী হয়ে বিজয় লাভ করেছিলেন। মিরসরাইতে বিএনপি ও জোটের জনসমর্থন উপেক্ষার করার মতো নয় এমনটি জানান এলাকাবাসী। তবে নেতৃত্বের দুর্বলতা এখানে প্রকট।
২৭৯ চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান এমপি হলেন তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি ফের আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে সরকার দলীয় এমপি না থাকায় বিশাল আয়তনের উপজেলা ফটিকছড়িতে বিগত সময়ে বিশেষ করে বর্তমান মেয়াদে সার্বিক উন্নয়নে চরম অবহেলা-বঞ্চনার কারণে জনমনে তীব্র অসন্তোষ আর হতাশা বিরাজ করছে। এবার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা উন্নয়নের জন্য ‘নৌকা’ মার্কাটি ভিন্ন কোন দল বা জোটকে ছেড়ে না দিয়ে নিজ দলের নেতাকে চান। আওয়ামী লীগের যারা জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা হলেন, দলের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত নুরুল আলম চৌধুরী, একদা ফটিকছড়িতে দানবীর হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মরহুম রফিকুল আনোয়ারের (সোনা রফিক) কন্যা খাদিজা আখতার সনি। তাছাড়া আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরে বিরোধ কাটেনি। অন্যদিকে ফটিকছড়িতে বিএনপি ও জোটের তরফে আগামী নির্বাচনে ‘মজবুত’ প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। এ উপজেলার ব্যাপক অংশে বিএনপির জোরালো জনসমর্থন রয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী অথবা তার পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং পেশাজীবী নেতা ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী। তবে জনসমর্থন থাকলেও এখানে বিএনপি অগোছালো। সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নড়বড়ে। তাছাড়া রয়েছে আন্তঃকোন্দল। ফটিকছড়িতে আলেম-মাশায়েখদের সমর্থনের বিষয়টিও সমগ্র ভোটের রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করেন প্রবীণ ও নবীন স্থানীয় এলাকাবাসী।
২৮০ চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) নির্বাচনী আসনে বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা। তবে এবার তার মনোনয়ন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কেননা সেখানে দলীয় পুরনো কলহ-কোন্দলের ক্ষত আরও প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে। গত ৪ বছরে পাল্টাপাল্টি দলীয় শক্তি প্রদর্শন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী, রক্তারক্তির বেশ কয়েকটি ঘটনাবলীতে নিরীহ মানুষসহ স›দ্বীপে অন্তত ১০ জন নিহত ও আহত হয় অনেকেই। মিতার বিপরীতে দলের পাল্টা অবস্থানে থেকে মনোনয়ন পেতে চান আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান। অন্যদিকে বিএনপি ও জোটের জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা, আমেরিকায় প্রবাসী মোস্তফা কামাল এবং কাতার প্রবাসী নুরুল মোস্তফা খোকন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়েই সেখানে প্রার্থীতা বাছাইয়ের বিষয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব রয়েছে।
২৮৩ চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) নির্বাচনী আসনে বর্তমান এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর আওয়ামী লীগ ও জোটের মনোনয়ন প্রায় চ্যালেঞ্জ-বিহীন। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বা সম্ভাব্য প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে আরও আছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার ও আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী। রাউজানে বিএনপি ও জোটের নীরব জনসমর্থন অতীতের হিসাব-নিকাশ থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তবে দল ও জোট অগোছালো, অসংগঠিত। আবার ফজলে করিমের মেয়াদকালে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নও নজরকাড়া। তবে দলীয় চরম একাধিপত্য নিয়ে জনমনে গুঞ্জনও কম নয়।
২৮৪ চট্টগ্রাম-৭ (উত্তর জেলার রাঙ্গুনিয়া) নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। তিনি বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত হলেও তার আপাতত বিকল্প শক্ত প্রার্থী দেখছে না দল ও মহাজোট। স্থানীয় বিএনপিরও উপযুক্ত প্রার্থীর সঙ্কট রয়েছে। সেখানে দল ও জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী মরহুম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তবে হুম্মাম যদি ফটিকছড়িতে মনোনয়ন পান তাহলে মায়ের (ফারহাত কাদের চৌধুরী) রাঙ্গুনিয়ায় মনোনয়ন লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসনে বিএনপির জনসমর্থনের পাল্লা ভারী হলেও দল ও জোটের সাংগঠনিক নাজুক দশায় রয়েছে।



 

Show all comments
  • সাইফুল ইসলাম ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ২:০২ এএম says : 0
    বিএনপি আওয়ামীলীগ উভয়কেই এবার বুঝে শুনে প্রার্থী দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আযলান মীর্জা ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০২ পিএম says : 0
    ভয় লাগছে,আসলে সরকারী দলের ভাষ্য অনুযায়ী যে কোন মুল্যে তারা আবারো ক্ষমতায় যেতে চায়, আর সাধারণ ৯০%জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না,আর আমার মতো মানুষ ভাবে কাকে সরিয়ে কাকে আনবো, সবই তো এক, মুদ্রার এপাশ ওপাশ...... আসলে আমরা বাংলাদেশীরা এখন সত্যি অনেক দুর্ভগা
    Total Reply(0) Reply
  • ফাতেমা ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫০ পিএম says : 0
    ব্যাপারটা তো সোজা। সুষ্ঠ হলে আওয়ামীলীগের আর জনগণ ভোট না দিতে পারলে বিএনপি জামায়াতের কপাল পুড়বে
    Total Reply(0) Reply
  • কমল ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫২ পিএম says : 0
    চট্টগ্রাম-৭ (উত্তর জেলার রাঙ্গুনিয়া) নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ সাহেবকে প্রার্থী করলে আওয়ামীলীগ নিশ্চিত হারবে।
    Total Reply(0) Reply
  • এমি ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    বিএনপির জনসমার্থণ আছে তবে তাদেরকে সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • রবিউল ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৬ পিএম says : 0
    চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিএনপি জামায়াতকে নির্বাচনের জন্য সংগঠিত হতে হবে, না হলে কী হবে তা তারাও ভালো জানে
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৮ পিএম says : 0
    কপাল খোলা আর পোড়া নির্ভর করবে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের উপরে। দেখা যাক কী হয় ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ