পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় নির্বাচনী আসন রয়েছে মোট ১৬টি। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন করায়ত্ত করা সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়েই এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ হলো সরকারি দল আওয়ামী লীগ আর মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের বলয়ভূক্ত জোট-মহাজোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূলের সবাই অনেকটা নিশ্চিত ধারণা করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির স্টাইলে অনুষ্ঠিত হবে না। ১৫৪টি আসনে ‘বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়’ লাভ এবং অন্যান্য আসনে নামেমাত্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার মধ্যদিয়ে খালি মাঠে এবার গোল দেয়ার সুযোগ আর থাকবে না। ২০১৪ সালের একতরফা ভোটে এমপি হয়েছেন এমন বেশিরভাগেরই নির্বাচনী রাজনীতির বাস্তব কঠিন অভিজ্ঞতা আদৌ নেই। সেই নির্বাচনী ফল নিয়ে রাজনীতি সচেতন সাধারণ জনগণের মাঝে মাথাব্যথাও দেখা যাচ্ছে না। বিএনপিসহ জোট এবং অপরাপর দল, নির্বাচনী মোর্চা ও জোটের অংশগ্রহণে এবার পরিস্থিতি হবে ভিন্ন রকম। খুব সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়া যাবে না।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকেই উপরোক্ত বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব (দলীয় হাই কমান্ড) এবং আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ও অন্যতম প্রধান দল বিএনপির অংশগ্রহণ-বিহীন নির্বাচনটিকে হিসাবেই ধরতে চাইবেন না। তাদের কাছে মনোনয়নে ভোটের অঙ্কের হিসাব-নিকাশ গুরুত্ব পাচ্ছে বিগত ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৯ সালের ফলাফলের নিরিখেই। এরই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় নেতা-এমপি ও সাবেক এমপিরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা এবং নিজ নিজ এলাকায় জনসমর্থনের ভিত ‘পাক্কা’ হিসেবে দেখাতে রীতিমতো ‘আদা-জল খেয়ে’ মাঠে নেমেছেন। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগের দল কিংবা জোটগত মনোনয়নের ক্ষেত্রে গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্য থেকে কমপক্ষে অর্ধেক আসনে ‘মুখ’ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে। আর তাকে কেন্দ্র করে ভোট রাজনীতির গুঞ্জন, মাঠ জরিপ কিংবা চুলছেঁড়া হিসাব-নিকাশের পালা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং উভয় দলের সমর্থিত জোট-মহাজোট অথবা এর বাইরে থাকা ছোট ছোট জোট-দল-সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী ফলাফলকে ফের সামনে নিয়ে আসছেন। আর সেভাবেই আগামীতে ভোটের হাওয়া কোন দিকে গড়াতে পারে সে সম্পর্কে কৌশলী হিসাব-নিকাশের অঙ্ক কষছেন। বিগত ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৯৯১ সাল ও ১৯৯৬ সালে বিএনপি চট্টগ্রামে দুই তৃতীয়াংশ, আওয়ামী লীগ এক তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে। আর বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের তখন ১৫টি আসনের মধ্যে বিএনপি ও চারদলীয় জোট ৯টি আসনে জয়ী হয়। আওয়ামী লীগ পায় বাদবাকি ৬টি আসন। তবে ২০০৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জোটের বাঘা বাঘা মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপিসহ বেশিরভাগ নেতারই ভরাডুবি ঘটে। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ চট্টগ্রাম জেলার ১৬ আসনের মধ্যে চারদলীয় জোট পরাজিত হয় ১২টিতেই। জয় পায় বিএনপি মাত্র ৩টিতে, জামায়াত ১টি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫টি জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) ২৩ আসনের মধ্যে তখন বিএনপি পায় মাত্র ৫টি। অথচ ২০০১ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২২ আসনের মধ্যে বিএনপি বিজয়ী হয় ১৯টিতে।
এদিকে ভোটের রাজনীতিতে তৎপর দুই প্রধান দলই জনগণের কাছাকাছি গিয়ে জনসমর্থন জোরদার করার জন্য অবিরত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে নেতারা এগুচ্ছেন ভোটের অঙ্কের হিসাব মাথায় রেখেই। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা সরকারের বিভিন্নমুখী সাফল্য, উন্নয়ন ও জনকল্যাণে গৃহীত কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। অন্যদিকে বিএনপি তাদের ভিশন ২০৩০ উন্নয়ন রূপকল্প এবং আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারে’র গুরুত্ব তুলে ধরছে সাধারণ মানুষের কাছে। সেই সাথে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। এ মুহূর্তে প্রধান দুই রাজনৈতিক পক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং গত এক দশক যাবত (২০০৬ সাল থেকে) ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির কাছে মুখ্য কর্মকান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন-পূর্ব চারটি ‘চ্যালেঞ্জ’। অর্থাৎ নির্বাচনী কৌশল সামাল দিয়ে অগ্রসরমান থাকা। এক. ভোটের হিসাবের নিরিখে ‘ফসল’ নিজেদের ঘরে তোলার প্রস্তুতির দলকে নগর, জেলা, উপজেলা-থানা-ওয়ার্ড-ইউপি পর্যায়ে গোছানো। এরজন্য মূলত নেতৃত্বের কলহ-কোন্দল-গ্রুপিং মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিন মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকার পর এখন বৈরী নেতারা এক টেবিলে বসে খোশগল্প ও ভোট রাজনীতির কৌশল নিয়ে শলা-পরামর্শ করতে দেখা যাচ্ছে।
দুই. জাতীয় পার্টি, জাসদ (উভয় অংশ), এলডিপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, কল্যাণ পার্টি, তরিকত ফেডারেশনসহ ছোট দলগুলোকে জোট বা মহাজোটের স্বপক্ষে ধরে রাখা। জোটের বাইরে থাকা অরাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলামের মতো আরো যারা ধর্মভিত্তিক নিয়ামক শক্তি তাদের জনসমর্থনকে বাগে রাখা অথবা আনার প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী তাদের চরম বিপর্যস্ত ও সঙ্কটময় অবস্থার মধ্যেও প্রধানত দক্ষিণ চট্টগ্রামে তুলনামূলক জোরালো অবস্থান বজায় রেখেছে। নেপথ্যে সাংগঠনিক কমকান্ডে সতর্কভাবে সক্রিয় আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নীরব সমর্থন পেতে প্রধান দুই দল টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছে। তিন. নির্বাচনী এলাকাওয়ারি মাঠের হালচাল সম্পর্কে জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘লং লিস্ট’ তৈরি করে রাখা হয়েছে। যেখান থেকে ‘শর্ট লিস্ট’, এরপর একক নাম তালিকা তৈরি করা হবে কেন্দ্রের নির্দেশনায়।
চার. আওয়ামী লীগ আর বিএনপি চট্টগ্রামের বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের দিকে মনোযোগী হয়েছে। সাথে তৎপর রয়েছে অঙ্গ ও সহযোগী, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগ চাইছে সরকারের গত প্রায় চার বছরের উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী সকল কর্মকান্ডের ফিরিস্তি জনগণের কাছাকাছি গিয়ে তুলে ধরতে। কোথায় কোথায় উন্নয়নে ঘাটতি, দুর্বলতা ও বঞ্চনা আছে সেসব চিহ্নিত করা হচ্ছে। এলাকাওয়ারি উন্নয়নের বিষয়ে নেতা-এমপিদের ঐক্যবদ্ধ থেকে এবং কাজেকর্মে সমন্বয় রেখে তৎপর থাকার জন্য স্থানীয় এমপি-নেতা-মন্ত্রীদের কাছে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সফলতা অনেক। তবে কোন এলাকায় উন্নয়নে ব্যর্থতা, বৈষম্য কিংবা জনগণের সাথে বিচ্ছিন্নতার কারণে জনমনে হতাশা থাকলে সেখানে আগামীতে নতুন প্রার্থী দেয়া হবে। কেননা ব্যক্তির ব্যর্থতার দায়ভার দল বা সরকার বহন করবে না।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে যাতে নিশ্চিত হতে পারে এরজন্য ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের’ গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সর্বস্তরের জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। এরজন্য জনমত প্রবল হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের রক্ষাকবচ চাই। যাতে ভোটারগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোন ধরনের বাধা-প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হন।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের অন্তত অর্ধেক আসনে প্রার্থী পরিবর্তন ও নতুন মুখ মনোনয়ন দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলের মধ্যেই পৃথক পৃথক হিসাব-নিকাশ, পর্যালোচনা চলছে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বর্তমান সংসদ সদস্যদের চলমান মেয়াদে সাফল্য-ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দক্ষতা, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপি আগামীতে প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে নিজ এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা, দলের কার্যক্রমে অতীত দুঃসময়ে সক্রিয় ভূমিকা ও ত্যাগের বিষয়ে প্রাধান্য দেবে। আবার উভয় বড় দলের উপরই কোন কোন এলাকায় চাপ রয়েছে জোট-মহাজোটের ছোট শরিকদের জন্য মনোনয়ন ‘ছাড়’ দেয়ার প্রশ্নে। ছোট শরিকরা ভোটারদের কাছে অজানা-অচেনা ও দুর্বল প্রতীকের পরিবর্তে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ এবং বিএনপির ‘ধানের শীষ’ তথা শক্তিশালী মার্কায় বলীয়ান হয়ে ভোটের মাঠে যেতে আগ্রহী। তবে তৃণমূলে যতই আলোচনা হোক না কেন, কোথায় কোন আসন জোট-মহাজোটের ছোট দলের শরিক নেতারা পাবেন তা নির্ভর করছে প্রধান দুই শরিক দলের হাইকমান্ডের বিবেচনার উপরই। আর তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে ২০১৪ সাল বাদে অতীত (১৯৯১-২০০৯) নির্বাচনী ফলাফলের হিসাব-নিকাশের সেই পুরনো খাতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।