পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ১২ মাস। বর্তমান দশম সংসদের মেয়াদকাল হিসাবে ধরলে আগামী বছর ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে ৯০ দিনের ক্ষণগণনা। আগাম তথা অন্তবর্তী নির্বাচনের জন্য বিএনপি জোটের পুরনো দাবিটি তামাদি হয়ে গেছে আগেই। তবুও এখন মনে হয় যেন নির্বাচন খুব কাছেই। শীতের হিমেল আবহাওয়া শুরু হলে সবসময়ই এদেশে রাজনীতির মাঠ সজীব ও সরগরম হয়ে উঠে। এবার প্রায় সর্বত্র তা আরও বেশিমাত্রায় চোখে পড়ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বর্তমান এবং সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, প্রথম ও মাঝারি সারির নেতা এমনকি উঠতি কিংবা ‘নব্য’ নেতাদের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকাওয়ারি নজরকাড়া গণমুখী তৎপরতা চলে আসছে। তা এখন দিন দিন জোর কদমে বৃদ্ধির দিকেই। যা দেখে ভুলে কারও মনে হতে পারে জাতীয় নির্বাচন এই বুঝি দরজায় কড়া নাড়ছে! সবখানে ‘নির্বাচন’ ‘নির্বাচন’ আবহ। ভোট রাজনীতির গরম হাওয়া বয়ে চলেছে উত্তরের শীতল বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে। এরফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের রাজনীতি বলতে গেলে নাটকীয়ভাবে নির্বাচনমুখী মোড় ঘুরিয়ে নিয়েছে। প্রকাশ্যে মাঠ রাজনীতিতে তৃণমূলে এবং পর্দার আড়ালে-আবডালে ভোট রাজনীতির অঙ্কের এপিঠ-ওপিঠ নানামুখী হিসাব-নিকাশও চলছে।
এসব কিছু মিলিয়ে চট্টগ্রামে নির্বাচনমুখী রাজনীতি নতুন উদ্যমে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজনীতির মাঠ দীর্ঘদিন যাবত কার্যত ঝিমিয়ে পড়া অবস্থায় ছিল। সেই ব্রিটিশ শাসনামল, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি চাটগাঁবাসী যথেষ্টমাত্রায় রাজনীতি সচেতন। এই প্রেক্ষাপটে এখানকার সাধারণ জনগণের মাঝে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঁড়ঝাঁপ, তাদের ক্রমেই তৎপর হয়ে উঠা, তাদের গ্রহণযোগ্যতা, ভাল-মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে গরম চায়ের কাপের আড্ডায় আলোচনা জমে উঠেেছ।
শীর্ষ নেতারা জানান, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক পক্ষ সরকারি দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ নিজ এলাকাবাসীর সাথে থাকার জন্য আগেই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার যার এলাকায় গিয়ে নিয়মিত সময় দেয়ার জন্য একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন ক্ষমতার বাইরে থাকা তথা মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
এদিকে একই নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিতে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী, মনোনয়ন প্রত্যাশী তৎপর রয়েছেন বেশিরভাগ জায়গায়। শুধু গুটিকয়েক নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য একক প্রার্থিতা ভাগ্যে জুটতে পারে। তাছাড়া উভয় প্রধান দলের জোট বা মহাজোটেরও সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে আছেন। তারাও বড় দুই দলে জোটগত শরিকদার হিসেবে মনোনয়নে ভাগ বসানোর পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছেন। এছাড়া অরাজনৈতিক দল হিসেবে দাবিদার হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থিতা মনোনয়ন অথবা সমর্থন দেবে না মর্মে দলের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী গত ২৪ ও ২৫ শনিবার চট্টগ্রামে এক মাহফিলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শেষতক ভোট রাজনীতিতে হেফাজতের ভূমিকা কোন দিকে ঝুঁকবে তা নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা-কল্পনা চলছে। কেননা চট্টগ্রামে দলটির অবস্থান পোক্ত রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত আগামী নির্বাচনে দশ-বিশেক আসনের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের প্রতি হেফাজতের সমর্থন প্রদানের খবরেও চলছে তোলপাড়। এসব কিছু ছাপিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়নের ভাগ্যের শিকেয় ছিঁড়বে প্রত্যেক এলাকায় শুধুই একজনের জন্য। কে সেই কাক্সিক্ষত মনোনয়নটি পাবেন? কীভাবে পাবেন? এখন সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার পালা। যদিও নিজের পাল্লা ভারী দেখানোর জন্য কেউ কেউ মাঠের বক্তব্যে জানান দিচ্ছেন, তার মনোনয়ন ‘সুনিশ্চিত’ হয়েই আছে।
এ অবস্থায় নির্বাচনের আগেভাগেই জনসমর্থন প্রমাণের মাধ্যমে দুই প্রধান দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ভোটের টার্গেট নিয়ে জোরালো তৎপরতার ভিন্ন এক প্রতিযোগিতা চলছে ভোটের মাঠে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় হাইকমান্ডের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। সেই সাথে নিজ নিজ এলাকায় প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রী, মেয়র-চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধি এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে তদ্বির চালাচ্ছেন মনোনয়নের ভাগ্য নিজেদের পক্ষে আনতে। এক্ষেত্রে নিজ দলে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রতিপক্ষকে ছলে বলে কৌশলে ‘ম্যানেজ’ করা অথবা মোকাবিলা করে উৎরে যাওয়ার লক্ষ্যে কৌশলী খেলার যেন শেষ নেই। মনোয়ন প্রত্যাশী বা সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন নিশ্চিত করার দৌঁড়-ঝাপে প্রতিনিয়তই কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছেন এমনটি কথাবার্তা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এখানে-সেখানে। এরফলে সমগ্র চট্টগ্রামজুড়ে নির্বাচনমুখী রাজনীতি এখন নিয়েছে নতুন মাত্রায় নতুন মোড়।
বিগত পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে চট্টগ্রামে নির্বাচনী রাজনীতির হাওয়া বইতে শুরু করে। এরপর থেকে তা ক্রমেই জোরদার হতে থাকে। তবে গত মে ও জুন মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ধস, বন্যাসহ টানা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে নিপীড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান শরণার্থীর বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির কারণে ওই সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে রাজননৈতিক তৎপরতা থমকে যায়। তবে গত অক্টোবর মাস থেকে ভোট রাজনীতির মাঠ ফের চাঙ্গা হয়ে উঠে। গত ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ফের কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়কপথে ভ্রমণ করেন। কোনো সভা-সমাবেশে তার বক্তব্য রাখার কর্মসূচি না থাকলেও পথে পথে দলীয় কর্মী-সমর্থক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় করেন। ফলে তা পরিণত হয় অঘোষিত শো-ডাউনে।
দীর্ঘদিন পর বিএনপির রাজনীতিতে তেজিভাব সঞ্চার করে খালেদা জিয়ার এই কর্মসূচি। যা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কর্মীদের মনোবলকে চাঙ্গা করে তোলে। ওই কর্মসূচির সফলতার কারণে বিএনপিকে ছাপিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তোলে আওয়ামী লীগসহ অপরাপর দল ও জোটকে। সেই নীরব বা অঘোষিত রাজনৈতিক শো-ডাউন দলের জন্য ‘টনিক’ হিসেবে কাজ দিয়েছে বলে মনে করেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। এর সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের অনুসরণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ‘রোড মার্চ’ ধরনের কর্মসূচি প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (হাই কমান্ড) তাগিদ দিয়ে আসছেন। এর পাশাপাশি চলছে সাংগঠনিক অবস্থানকে এলাকাওয়ারি সুসংহত করা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস। শীর্ষ নেতারা আশ্বাস দিচ্ছেন দলের দুর্দিনে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হবে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ভোট রাজনীতির মাঠে আগের তুলনায় তৎপর। কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা ঘন ঘন চট্টগ্রাম সফর করছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। সরকারের সাফল্যগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামীতেও জনসমর্থন কামনা করছেন। ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশ কয়েকবার সফরে আসেন, সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও আসছেন ‘উন্নয়ন সফরসূচি’ নিয়ে। নেতা-মন্ত্রী ও এমপিরা দলীয় ঐক্য মজবুত রাখার জন্য তৃণমূলের কাছে বার্তা দিচ্ছেন। নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে সরকারের মাঝে একাকার দলকে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৈরি করতে চান। ক্ষমতা আস্বাদনের সুবাদে দলের ভেতরে ঢুকে পড়া নব্যনেতা এবং চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীসহ ‘আপদ’ সামলানোর উপায় নিয়েও বিপাকে রয়েছেন মহানগর ও জেলার সিনিয়র নেতারা। ওদের কারণে জনসমর্থনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন শঙ্কার কথাগুলো সামনে নিয়ে এসে এখন প্রকাশ্যেই মুখ খুলছেন নেতা-কর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।