পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও বৈষম্যের অভিযোগে বঞ্চিতদের ক্ষোভ-অসন্তোষ চলছেই। সরকারি দলের লোকেরা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে। এর বিরুদ্ধে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ফলে টানা ১০ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু লস্কর পদেই ৮৫ জনের মধ্যে বেশিরভাগই নিয়োগ পেয়েছে মাদারীপুর থেকে। মন্ত্রী শাজাহান খান এমন অভিযোগ অস্বীকার করলেও থেমে নেই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ-অসন্তোষ। একটি সংগঠন লস্কর নিয়োগ বাতিল করতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্য একটি সংগঠন কার সুপারিশে কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং মস্ত্রীর জেলা মাদারীপুরের কতজন নিয়োগ পেয়েছে তার তালিকা প্রংঢ়কাশের দাবি জানিয়েছে।
জাতীয় সংসদেও বিষয়টি উত্থাপন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের দুই সংসদ সদস্য মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল। সংসদের ওই দুই সদস্যের অভিযোগের জবাব দিলেও নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান তার জেলার কতজনকে চাকরি দিয়েছেন সে সংখ্যা বলেননি। সংসদে দেওয়া বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের অনুরোধে একজনকে লস্কর পদে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরাও চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োগে অনিয়ম ও বৈষম্যের অভিযোগ এনে তা বাতিলের দাবিতে ঘেরাও, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা বন্দরে নিয়োগে অনিয়ম বৈষম্যে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনিয়মের বিরুদ্ধে যারা রাস্তায় নামছেন তাদের প্রায় সবাই ছাত্রলীগ যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সে মোতাবেক বন্দরের যাবতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া অধিভুক্ত এলাকা হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে তথা চট্টগ্রামে সম্পন্ন হওয়াই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু নিয়ম-বিধিকে পাশ কাটিয়ে শাজাহান খানের ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এ কারণেও চট্টগ্রামে অসন্তোষ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন পদে প্রায় ২ হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও অন্তত ৫শ’ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্প্রতি লস্কর পদে (৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী) ৮৫জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রী শাজাহান খানের এলাকা মাদারীপুরের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ নামে একটি সংগঠন এমন অভিযোগ করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এ সংগঠনের নেতা হাসান মনসুর বলেন, শুধু মাদারীপুরকে প্রাধান্য দেয়া গুরুতর অনিয়ম। দেশের সব জেলার বেকার যুবকদের চাকরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। তবে চট্টগ্রামের লোকদের আরও বেশি সুযোগ পাওয়া দরকার। তা না করে কেবল নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের জেলা মাদারীপুরের লোকজনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এদিকে অতীতের সকল রেওয়াজ ভেঙে চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। এ নিয়েও চট্টগ্রাম বিভাগের চাকরি প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নমান বহিঃ সহকারী পদসহ বেশ কয়েকটি পদে সম্প্রতি যে নিয়োগ পরীক্ষা হয় তা ঢাকায় হয়েছে। অথচ অতীতে প্রায় সব নিয়োগ পরীক্ষা চট্টগ্রামে হতো। নিয়োগ পরীক্ষায় এমন অনিয়মে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে তাদের পোষ্যদের মধ্যেও ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। রোববার নৌমন্ত্রী বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তখন অডিটোরিয়ামের সামনে মানবন্ধন করে চাকরি প্রার্থীরা। তারা নৌমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মাদারীপুর জেলার চাকরি প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়ার অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, ৮৫ জন লস্করের পদে বন্দর কর্তৃপক্ষ যাদের নিয়োগ দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই মাদারীপুর জেলার, এটা মেনে নেয়া যায় না। তারা আরও অভিযোগ করেন, লস্করের মতো চতুর্থ শ্রেণির একটি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়েছে। মানববন্ধন থেকে বন্দরে নিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের আলাদা কোটা এবং ঢাকার পরিবর্তে চট্টগ্রামে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।
নিয়োগে মাদারীপুরের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন মন্ত্রী শাজাহান খান। রোববার বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতেই মন্ত্রী এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৮৫ জনের মধ্যে মাদারীপুরের মাত্র ৬-৭ জন চাকরি পেয়েছে। আর চট্টগ্রাম থেকে পেয়েছে ২৮ জন। তিনি এ ধরনের গুজবে কান না দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভেঙে চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা এখানে হতে পারত। সরকারিভাবে বিধান আছে, আইবিএর মাধ্যমে পরীক্ষা হয় স্বচ্ছতার জন্য। সে জন্যই এ ব্যবস্থা।
এদিকে অনিয়ম, আঞ্চলিকতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদের নিয়োগ ১ সপ্তাহের মধ্যে বাতিলের দাবি জানিয়েছে আমরা চট্টগ্রামবাসী নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের নেতা কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনছুর বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে লস্কর নিয়োগ বাতিলের আলটিমেটাম দেয়া হলো। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন। তিনি বলেন, এ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় চট্টগ্রামসহ সারা দেশের লোকজনকে সুযোগ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে লস্কর নিয়োগ বাতিল করে সরকারি নিয়োগ মেনে পুনরায় নিয়োগ দিতে হবে। চট্টগ্রামের বেকার যুবকদের অবশ্যিই অগ্রাধিকার দিতে হবে। বন্দরের সকল পরীক্ষা চট্টগ্রামে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বন্দরের সব নিয়োগে বন্দরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ‘চট্টগ্রাম বন্দরে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার আদায় পরিষদ’ এক সংবাদ সম্মেলন করে কার অনুরোধে কতজনকে লস্কর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। সংগঠনের নেতারা বলেন সংসদে দাঁড়িয়ে নৌমন্ত্রী চট্টগ্রামের ৪৫ জনকে চাকরি দিয়েছেন বলে যে তথ্য দিয়েছেন তা অসত্য। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে ধোঁকা দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।