চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
\ দুই \
ইজ্জত-আবরু নিয়ে জীবন-যাপনের অধিকার ঃ ইসলাম বিধবা নারীকে ইজ্জত-আবরু নিয়ে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরন করলে স্বাভাবিকভাবে সে অসহা বোধ করেও নিরাপত্তাহীন দিন কাটায়। এ সুযোকে অনেকেই তাদেরকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, তাদেরকে বিয়ের প্রলোবন দেখায় ও অশোভনীয় আচরন করে থাকে। ইসলাম এহেন আচরন করতে নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘‘আর যদি তোমরা আকারে-ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে কোন আকাঙ্খা লুকিয়ে রাখ, তবে তাতে ও কোন পাপ নেই, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীর কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছে কর না। আর এ কথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্যশীল। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস রা. বলেন: যদি কোন ব্যক্তি ইদ্দত পালনকারী কোন মহিলাকে বলে যে, আমার বিবাহ করার ইচ্ছা আছে। আমি কোন সতী মহিলাকে পেতে ইচ্ছা পোষন করি। কাসিম র. বলেন, এই আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যেন কোন ব্যক্তি বলল, তুমি আমার কাছে খুবই সম্মানিত এবং আমি তোমাকে পছন্দ করি। আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণ বর্ষণ করুন। অথবা এই ধরনের উক্তি। আতা র. বলেন, বিবাহের ইচ্ছা ইশারায় ব্যক্ত করা উচিত, খোলাখুলি এই ধরনের কোন কথা বলা ঠিক নয়। কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারে যে, আমার এ সকল গুনের প্রয়েজন আছে। আর আপনার জন্য সুখবর, সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর জন্য আপনি পুনঃবিবাহর উপযুক্ত। সে মহিলা ও বলতে পারে, আপনি যা বলেছেন, তা আমি শুনেছি কিন্তু এর বেশি ওয়াদা করা ঠিক নয়। তার অভিভাবকদের ও অজ্ঞাতে কোন প্রকার ওয়াদা দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু যদি কেউ ইদ্দতের মাঝে কাউকে বিবাহের কোন প্রকার ওয়াদা করে এবং ইদ্দত শেষে সে ব্যক্তি যদি তাকে বিবাহ করে তবে সেই বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হবে না। ইসলাম বিধবাদের সম্ভ্রমের নিরাপত্তা প্রদান করেছে। জাহিলী যুগের ন্যায় পিতার মৃত্যুর পর তার পুত্র কর্তৃক বিধবা স্ত্রীদের বিবাহ নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত. তিনি বলেন, আমার মামা আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। (রাবী হুশাইম তার বর্ণিত রিওয়ায়েতে বারা ইবনু আযিব রা.-এর মামার নাম হারিছ ইবনু আমর উল্লেখ করেছেন।) রাসূলুল্লাহ স. তার জন্য একটি ঝাগুা তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন রাসূলুল্লাহ স. আমাকে এক ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছেন, যে তার পিতার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তাকে হত্যা করি।
অর্থনৈতিক অধিকার ঃ ইসলামী আইন বিধবা নারীদের যে সকল অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক অধিকার অন্যতম। ইসলাম প্রত্যেক বিবাহিতা নারীর মোহরের অধিকার দিয়েছে। “ম্হোর আরবী শব্দ, অর্থ-স্বেচ্ছাকৃত দান। মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহের চুক্তিকালে বর কর্তৃক কন্যাকে যে অর্থ দেয়া হয় তাউ মোহর এবং তা স্ত্রঅর নিজস্ব সম্পত্তিরূপে গন্য হয়। ইসলাম পূর্বকলে মোহর ওয়ালীর হাতে অর্থাৎ পিতা,ভাই বা যে আত্মীয়ের অভিভাবকত্বে কন্যা থাকত তার হাতে প্রদান করা হত। মোহরের পরিমাণ স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতার ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে। ইসলামে মোহর দু ভাবে নির্ধারণ করা হয়। ইসলামী আইনে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বিবাহের সময়ই সন্তষ্টচিত্তে মোহর পরিশোধের নির্দেশনা প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর তেমরা স্ত্রীদের কে তাদের মোহর খুশিমনে দিয়ে দাও।
এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারি রহ. উল্লেখ করেন, ‘‘আর অধিক মোহর এবং সর্বনিম্ন মোহর কত?- এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “এবং তোমাদের যদি তাদের একজনকে অগাধ অর্থ দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছু গ্রহন করো না ” এবং আল্লাহ তাআলা আরো বলেন “অথবা তোমরা তাদের মোহরের পরিমান নিদিষ্ট করে দাও”। সাহল রা. বলেছেন নবী সা এক ব্যক্তিকে বললেন, যদি একটি লোহার আংটিও হয় তবে মোহর হিসাবে যোগাড় করে দাও। “বুখারী, আস-সহীহ,অধ্যায়: আন-নিকাহ, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বাণী:- আর যদি বিবাহে মোহর নির্ধারন না হয়ে থাকে এবং স্বামী মৃত্যুবরন করে, তাহলে ঐ বিধবাকে মহরের মিছল “মোহরে মিছিল হচ্ছে যে বিয়েতে মোহরের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ করা হয় না; বরং স্ত্রী আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক মর্যাদা, স্ত্রী বোন অথবা পিতার পরিবারের অন্যান্য কন্যা যথা: ফুফুর মোহরের অনুপাত এবং গুণাগুণ অনুসারে যে মোহর প্রদান করা হয়। যে সব ক্ষেত্রে বিয়েতে লেনদেন নির্দিষ্ট করা হয় না, সে সব ক্ষেত্রে এই মোহর মিছলই নির্ধারণ হবে। মোহর পরিশোধ সম্পর্কে হাফিয ইবনে কাসীর রা. উল্লেখ করেছেন, “স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে স্বামীগণ মোহর বিবাহের পরও পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু মোহর পরিশোধের পূর্বেই যদি স্বামী মৃত্যুবরন করে, তবে স্ত্রীর স্বামীর নিকট মোহর বাবদ ঋনী হয়ে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।