Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নদী দখল করে বানানো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরাতে জমি দেবে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নদী দখল করে গড়ে তোলা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে অন্য জায়গায় সেসব প্রতিষ্ঠানকে জমি দেবে সরকার। এছাড়া দখল ঠেকাতে জরিপ চালিয়ে সারা দেশে নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স।
গতকাল সচিবালয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে নদীর দূষণ রোধ ও নাব্যতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩৬তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভা শেষে নৌমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির এমনকি একটি দরবার শরীফও নদীর মধ্যে জায়গা দখল করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেইসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারা বসেছেন, আলোচনা করেছেন। সকলেই একমত হয়েছেন যে স্থানান্তরের জন্য তাদের একটা জায়গা দরকার। আমরা যদি তাদের জায়গা দিতে পারি তাহলে তারা মসজিদ, মাদ্রাসা এবং মন্দির যেগুলো নদীর মধ্যে স্থাপন করেছে, সেগুলো স্থানান্তর করে নেবেন। জেলা পর্যায়ে নদী দখল করে স্থাপন করা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরতে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারি বা খাস জমি বরাদ্দ দিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার চারপাশে চারটি নদীতে জরিপ চালিয়ে সরকার সীমানা পিলার স্থাপন করেছে। স্থাপিত পিলারের অর্ধেক নিয়ে আপত্তি ওঠায় সেগুলো আবার যাচাই করা হচ্ছে। শাজাহান খান বলেন, ঢাকায় মোট নয় হাজার ৪৭৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে, যার অর্ধেক নিয়ে আপত্তি এসেছে। ইতোমধ্যে যাচাই করে ২০ শতাংশ আপত্তির নিষ্পত্তি করা হয়েছে, বাকিগুলোর কাজও অব্যাহত রয়েছে। সীমানা নির্ধারণে নদী জরিপের কাজ অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রী বলেন, জরিপ না থাকায় নদীর অনেক জায়গা অনেকে দখল করেছে, জরিপ শেষ হলে সারা দেশে পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। নদীরক্ষা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রধান শাজাহান খান বলেন, নদী দখলকারীদের মধ্যে অনেক প্রভাবশালী থাকায় দখলদারদের উচ্ছেদে সরকারি কর্মকর্তাদের বেগ পেতে হয়। আমাদের চেয়ারম্যান বা কর্মকর্তারা যখন মাঠে যান, তাদের ওপর নানা ধরনের প্রভাব সৃষ্টি হয়, এজন্য একটু বিলম্ব হয়। তবে আমরা সকল ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে সীমানা পিলার স্থাপন এবং যেখানে আপত্তি আছে সেখানে পুনঃস্থাপন করব। এ ব্যাপারে কারও সঙ্গে আপস করব না। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ স্থাপনগুলো অপসারণ করব- এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।
নৌমন্ত্রী বলেন, নদীতে স্থাপন করা বেশ কিছু পিলার উপড়ে ফেলায় আরও শক্তিশালী পিলার স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা পিলার নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর যেসব জমি উদ্ধার হচ্ছে, তা সংরক্ষণের কাজও অব্যাহত থাকবে। শাজাহান খান জানান, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে ২০ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা (ওয়াকওয়ে) নির্মাণ করা করা হয়েছে। আরও ১৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ঢাকার চারটি নদীর উভয় তীরে ২৮০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে করতে হবে। এটা করতে পারলে কেউ নদী দখল করতে পারবে না। উদ্ধার হওয়া জায়গা যেন পুনরায় দখল না হয় তা তদারকি করতে বিআইডবিøউটিএ এবং ওয়াসাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রামচন্দ্রপুর খাল এবং কল্যাণপুর চ খাল উদ্ধার করে এর উভয় পাশে ওয়াকওয়ে করার হবে। ঢাকার আরও ১১টি খাল উদ্ধারের জন্য কার্যক্রম নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সারা দেশে নদীর তীরে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান হয়েছে ওসব প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও তারা চালু রাখে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোক গেলে তখন তারা চালু করে, লোকজন চলে গেলে আবার বন্ধ করে দেয়। অনেক নদী দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নৌমন্ত্রী বলেন, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণ করছে তাদের তালিকা পাঠাতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্থায়ী সদস্যের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কমিশনে নতুন কর্মকর্তা পাওয়ার পর ইছামতী নদী উদ্ধারের কার্যক্রম নেয়া হবে। সাভারের ট্যানারি থেকেও নদী দূষণ হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, এই ট্যানারি থেকে যেন নদী দূষণ না হয় সেই ব্যবস্থা তারা নেবেন। নৌমন্ত্রী জানান, সাভারের ট্যানারি থেকে নদী দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ