পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
এ টি এম রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : ‘সাদা সোনা’-খ্যাত হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আগামী মাসের শুরুতেই বন্ধের আশঙ্কায় ভুগছেন রপ্তানিকারকরা। আগামী মাসের শুরু থেকেই খুলনাঞ্চলের হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে মোড়কীকরণ সামগ্রী সরবরাহ করা সম্ভব নয়। গত ৪ মে খুলনার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিবদ্ধ রপ্তানিকারকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে এ বার্তা। ফলে প্যাকেজিংয়ের অভাবে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতায় প্রয়োজনী কাঁচামাল আমদানি ও কার্টন সামগ্রী প্রচ্ছন্ন রপ্তানির অনুমতি না পাওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বাগদা ও গলদা মৌসুম শুরুতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট তথা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের রপ্তানিকারক ও মাঠপর্যায়ের মৎস্য চাষীরা বিপাকে পড়বে। আর এতো সব বেকায়দায় পড়ার পিছনে খুলনা কাস্টমস্ কমিশনারকে দায়ী করছেন রপ্তানিকারকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খুলনায় উৎপাদনশীল মাত্র ৮টি প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর খুলনাঞ্চলের ৬০টি হিমায়িত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানার মধ্যে সচল ৪০টি প্রতিষ্ঠানে মোড়কীকরণ সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। জাতীয় হিমায়িত চিংড়ির মধ্যে ৭০ শতাংশ খুলনাঞ্চল থেকেই রপ্তানি হয়। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল ৫০৯মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ৩ হাজার ৯০৫টি প্রিন্টিং প্যাকেজিং কোম্পানী রয়েছে। খুলনার ৮টি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিখাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর সে সুযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামাঞ্চলের প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানগুলো অতি মুনাফায় খুলনায় ব্যবসা করতে আসবে।
এনবিআর’র আওতাধীন খুলনা শুল্ক বিভাগ হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে ব্যবহৃত প্যাকেজিং সামগ্রী (কার্টুন ও একসেসরিজ) সংগ্রহে স্থানীয় মুদ্রা (টাকার) পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলারে) আইএলসি (ইনল্যান্ড লেটার অব ক্রেডিট) খোলা এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র শর্তারোপ করে। ফলে গত বছরের অক্টোবরের শেষদিক থেকে খুলনাঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়। এতে শতাধিক কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) বিএফএফইএ’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোঃ গোলাম মোস্তফার।
তিনি জানান, খুলনা কাস্টমস কমিশনার পোশাক শিল্পের ‘ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র শর্তগুলো হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করা শর্ত দিয়েছে। অথচ হিমায়িত মৎস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানীতে কাঁচামাল না থাকায় এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। হিমায়িত চিংড়ির উপর থেকে খড়গ উঠলেও প্যাকেজিং সামগ্রীর উপর থেকে শনির দশা কাটেনি। ফলে একই তো কথা; খুলনাঞ্চলের হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি-ই তো বাধাগ্রস্ত হবে!
বিএফএফইএ সূত্রমতে, গত ২৩ এপ্রিল খুলনার সিটি ইন হোটেলে খুলনা চেম্বার, বিএফএফইএ যৌথভাবে প্রাক-বাজেট আলোচনায় হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট সকল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন এনবিআর’র চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। এরআগে, ৯ এপ্রিল বিএফএফইএ’র ৩১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিখাতের আওতাবহির্ভুত সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সদস্যরা (রপ্তানিকারক) প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) পরিচালক এবং মর্ডাণ সী ফুড ও ব্রাইট সী ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রেজাউল হক বলেন, প্যাকেজিং সামগ্রী সরবরাহ না থাকলে খুলনাঞ্চলের হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি চরম হুমকির মুখে পড়বে। অনেক কোম্পানী অগ্রিম অর্ডার নিয়েছে। তাদের কি হবে? সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বেঙ্গল প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আজিজুল আলম বলেন, আমদানীকৃত মালামাল বন্দর থেকে ছাড়াতে নানান হয়রানীর শিকার, ইউপি ছাড় না দেয়াসহ খুলনা কাস্টমস্ কমিশনারের তালবাহানার কারণে খুলনাঞ্চলের প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, ২০১২ সালের ২১ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অফিস আদেশে বলে ‘পন্য সরবরাহ মাস্টার এলসি’র বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র মাধ্যমে হতে হবে।’ কিন্তু হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক টু ব্যাক এলসি করা বাস্তব সম্মত নয়। এনবিআর’র গঠিত কমিটিও তদন্ত করে দেখেছেন, শর্তটি হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারকদেও জন্য প্রযোজ্য নয়। পরে গত ২০ মার্চ পূনঃঅফিস আদেশে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করেন। কিন্তু উক্ত এলসি স্থানীয় মুদ্রায় স্থাপিত হওয়ার কারণে তা রপ্তানি কাজে ব্যবহৃত হয়নি বলে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ মনে করছে। এ অবস্থায় প্যাকেজিং কোম্পানীগুলোর বন্ড লাইসেন্স নবায়ন করছে না কাস্টমস্।
মৌলি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, স্থানীয় মুদ্রায় সাইট এলসি’র বিপরীতে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন অর্থাৎ ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) না দেয়ায় প্যাকেজিংয়ের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। গত গত ৪ মে আমরা অফিসিয়াল পত্রে জানালেও অন্তত এক মাস আগে থেকে প্যাকেজিং সংকটের পূর্বাভাস দিয়েছি আমরা। কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এ খাতটি কি আমলাতান্ত্রিক জঠিলতা ধ্বংসের মুখে পড়বে?
বিএফএফইএ’র পরিচালক এবং আসিয়া সী ফুডস্’র মোঃ তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, প্যাকেজিং সামগ্রী বন্ধ হয়ে গেলে খুলনাঞ্চল থেকে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের স্বার্থে, জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে, খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বার্থে অবিলম্বে প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের বন্ড নবায়ন ও কাঁচামাল আমদানীতে শর্ত শিথিল করা উচিত এনবিআর’র। না হলে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।
কাস্টমস্ কমিশনার ড. আল আমিন প্রামানিক বলেন, খুলনায় অনুষ্ঠিত গত ২৩ এপ্রিলের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর’র চেয়ারম্যান হিমায়িত চিংড়ি রফতানির সকল সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শর্ত শিথিল করলেই প্যাকেজিং কোম্পানিগুলো ইউপি পাবেন এবং বন্ড নবায়ন করতে পারবেন। আমাদের তো কিছুই করণীয় নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।