পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারেননি। কোটি টাকা ব্যয়ে এবার যাচ্ছেন কানাডা। মন্ত্রণালয়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কেউই জানেন না সচিব মো: মাকসুদুল হাসান খানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল শিক্ষা সফরে যাচ্ছেন। অতি গোপনে জিও জারি করে ভিসাও সম্পন্ন করার কথা শুনা যাচ্ছে। মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা এবং আইন বহির্ভূতভাবে তারা আবারো শিক্ষা সফরের প্রস্তুতি নিয়েছেন। মনোনীত কর্মকর্তাগণ কেউই এ সফর সংশ্লিষ্ট নন এবং এটি ভ্রমণবিলাস মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ভ্রমণবিলাসে ব্যয় হবে প্রায় এক কোটি টাকা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সচিবের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য জিও জারি করা হয়েছিল ওই সফরের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৬ লাখ টাকা। গত বছর ২০ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাবকে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির নজরে পড়লে ১৭তম কার্যবিবরণী সভায় সফরের কার্যক্রম স্থগিত করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পাবনা-২ আসনের এমপি খন্দকার আজিজুল আরজুকে আহŸায়ক, স্থায়ী কমিটির সদস্য বগুড়া-৭ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলতাফ আলী এবং অ্যাডভোকেট বেগম শামছুন নাহার এমপিকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গত বছরের ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্ত কমিটির পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে বলা হয়েছে- ডিপিপি মোতাবেক ভেটেরিনারি শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে উন্নতমানের পাঠ্যক্রম প্রস্তুতের জন্য শিক্ষা সফরের বিধান রয়েছে। ওই সফরের পাঁচজন কর্মকর্তা এক বছরের মধ্যে অবসর গ্রহণ করবেন। শিক্ষা সফর টিমের ৯ সদস্যের অধিকাংশ সদস্য নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই বদলি অথবা অবসরজনিত কারণে বর্তমান কর্মস্থলে থাকবেন না। তা ছাড়া এই টিমের ৯ সদস্যের মধ্যে প্রত্যেকের ভেটেরিনারি শিক্ষা সম্পর্কে পেশাগত জ্ঞান নেই। তবে মহা-পরিচালক অজয় কুমার রায়ের ভেটেরিনারি শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেও তিনি নভেম্বর-২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করবেন। এ ক্ষেত্রে পেশাগত জ্ঞানসম্পন্ন ও চাকরিতে আরো দীর্ঘ সময় কর্মরত থেকে ভেটেরিনারি শিক্ষার কার্যক্রমে সহায়তা করতে সক্ষম এমন যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের শিক্ষা সফরে মনোনয়ন করা উচিত। শিক্ষা সফরের প্রতিনিধি মনোনয়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় আনা উচিত। এ অবস্থার বাস্তবায়নের নিরিখে প্রস্তাবিত শিক্ষা সফরে উল্লিখিত সদস্যদের নিয়োগ/মনোনয়ন সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন প্রকল্পের অর্থায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা সফরে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে যে সব সদস্য জুন-২০১৭ এর মধ্যে অবসর গ্রহণ করবেন তাদের প্রত্যেককে অব্যাহতি দিয়ে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে (যথাসম্ভব ভেটেরিনারি বিষয় অভিজ্ঞ) নুতন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা সফর টিম গঠন করার সুপারিশ করা হলো। গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৮তম সভায় ১৭তম সভার ১১(ঙ) সিদ্ধান্ত মতে তদন্ত প্রতিবেদন সুপারিশসমূহ মন্ত্রণালয়ের যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা এবং জুন-২০১৭ এর মধ্যে যে সব কর্মকর্তা অবসর গ্রহণ করবেন তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন শিক্ষা সফর টিম গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-১৬.৬১০ ২৩-১০-২০১৭ ইং তারিখে অতি গোপনে আবারো সচিবের নেতৃত্বে এবার কানাডা সফরের জন্য ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নামে জিও জারি করা হয়। এই প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাকসুদুল হাসান খান, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম সচিব শেখ নজরুল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিশনের (আইএমইডি) যুগ্ম সচিব মো: মাকসুদুল হক, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম চিফ বেগম দিলরুবা ইয়াসমিন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: এমডি আইনুল হক, প্রকল্প কর্মকর্তা ডা: এমদাদুল হক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের একান্ত সচিব ফকির মোহাম্মদ মুনওয়ার হোসাইন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ১ থেকে ১২ নভেম্বর সচিবের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে মাত্র একজন ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ ছিলেন, বাকি আট জনের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। আগামী ডিসেম্বরে ১ জন এবং পরের বছর জানুয়ারিতে সচিব নিজেই অবসরে যাবেন। চলতি নভেম্বর মাসে সচিবের নেতৃত্বে শিক্ষা সফরে ৯ সদস্যের টিমের মধ্যে সচিবসহ তিনজন কর্মকর্তা জানুয়ারি-২০১৮ এর মধ্যে অবসরে যাবেন। এইবারও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে পাশ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। কৌশলগত কারণে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও জিওটি দেয়া হয়নি। তা ছাড়া এই টিমের মধ্যে একজনও ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ নেই। প্রশাসনিক ও প্রকল্পের কার্যক্রম গ্রহণ করছে এমন কর্মকর্তাগণকেই মনোনীত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ- সচিব মো: শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, এবার শিক্ষা সফরের কানাডা যাওয়ার জিওটা আমি জারি করেছি, যা হয়েছে উপরের নির্দেশে হয়েছে; তবে এ ব্যাপারে আমি বেশি কিছু জানি না।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাকসুদুল হাসান খানের সাথে সাক্ষাতের জন্য তার একান্ত সচিবের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাক্ষাত দিতে অস্বীকৃতি জানান।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে জনপ্রতিনিধিরা অসহায়।
এ ব্যাপারে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পাবনা-২ আসনের এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ইনকিলাবকে বলেন, কারো বিলাস ভ্রমণের জন্য সরকারি অর্থ ব্যয় হবে; এটা মেনে নেয়া যায় না। যারা শিক্ষা অর্জন করে দেশের জন্য ভ‚মিকা রাখতে পারবে না তাদের মনোনীত করা অর্থ অপচয়। যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা এসব অনিয়ম সমর্থন করি না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ইনকিলাবকে জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কোনো অনিয়ম হলে ক্ষতিয়ে দেখা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এ শিক্ষা সফরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের মনোনীত করা উচিত। যারা মনোনীত হয়ে শিক্ষা সফরে যাচ্ছেন তাদের দিয়ে সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের কোনো কাজে আসবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।