নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতিয়ে এসেছিলেন পাদপ্রদীপের আলোয়। সেই হাসান আলীকে বিপিএলে এবার দলে ভিড়িয়েই রোমাঞ্চিত ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তার আসার প্রতীক্ষায় ছিল তামিম ইকবালের দল। দেশে ঘরোয়া লিগে ব্যস্ত থাকায় শুরুতে তাকে পায়নি কুমিল্লা। রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচে নেমেছিলেন, ছিলেন সাদামাটা। গতকাল ঢাকার বিপক্ষে পরের ম্যাচেই করলেন বাজিমাত। দেখিয়ে দিলেন, কেন তার ওপর এত ভরসা দলের। এবারের বিপিএলে প্রথম ৫ উইকেট শিকারি বোলার পাকিস্তানি পেসার হাসান আলী। ২০ রানেই পেয়েছেন ৫ উইকেট। যার সবগুলোই বোল্ড! সদ্যই ৫০ ওভারের খেলায় আইসিসি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠেছেন তিনি। একজন ফাস্ট বোলারের জন্য এর চেয়ে ভালো ম্যাচ কী হতে পারত?
অথচ সুনীল নারাইন আর কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাটে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে গিয়েছিল কুমিল্লা। সাঙ্গাকারা আউট হওয়ার পরও পোলার্ড, সাকিব, মোসাদ্দেকের মতো ব্যাটসম্যানরা তো ছিলেনই। কিন্তু স্টাম্প উপড়ে ফেলার নেশায় পেয়ে বসল হাসানকে। একের পর এক স্টাম্প ভেঙেছেন, আর প্রতিবারই দুহাত উঁচিয়ে চিরাচরিত উদ্যাপন। শেষ উইকেট পাওয়ার পর মাঠেই সেজদা করলেন। টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংয়ে কুমিল্লার হাতের মুঠোয় ম্যাচ পৌঁছে দিয়েছেন। শোয়েব মালিকের হাফ সেঞ্চুরিতে কুমিল্লার রান তাড়াটা খুব একটা কঠিন হয়নি। কিন্তু জয়ের ভিত্তি তো গড়ে দিয়েছেন হাসানই। তাই ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড় বাছতে ভাবতে হয়নি নির্বাচকদের।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার আর নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসেই দুই উইকেট। এভিন লুইস আর মেহেদী মারুফ। দুজনেই আউট করেছেন একই ধরনের ডেলিভারিতে। ফুললেন্থে ইয়র্কার দিয়েছিলেন, তাতে ছিল ইন সুইং। বাঁহাতি লুইসের গেছে লেগ স্ট্যাম্প, ডানহাতি মেহেদী উড়ে যেতে দেখেছেন অফ স্ট্যাম্প। হাসান আলীর পরের ওভারে বেশ চড়াও হয়েছিলেন সুনিল নারাইন। ওই ওভার থেকে দুই চার আর এক ছক্কা মেরে হাসানকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে যখন ফেরেন হাসান, ততক্ষণে নারাইন আউট। স্ট্রাইকে ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আবার ফুললেন্থের বল। এবার ছিলো আরও বেশি গতি, ফ্লিক করতে গিয়ে বোল্ড সৈকত।
নিজের শেষ ওভারে ফের জোড়া আঘাত। টপ অর্ডাররাই সামলাতে পারেননি। লোয়ার অর্ডার আর কি করবে। হাসানের বল সামলাতে পারেননি সাদ্দাম ও রনি। স্ট্যাম্প ভেঙেছে তাদেরও। ৩.৩ ওভার বল করে ২০ রানে পাঁচ উইকেট নেওয়া হাসানকে ঘিরে তখন কুমিল্লার উল্লাস। ৪৫টি টি-টোয়েন্টি খেলে হাসানের ক্যারিয়ারে এটিই প্রথম ৫ উইকেট। হাসানের দারুণ বোলিংয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস অলআউট হয় ১২৮ রানে। জয়ের বন্দরে তরীও হয়ত দেখে ফেলেছিলেন তখনই।
তারপরও বাকি ছিল উত্তেজনা। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুশ্চিন্তা- সেটাও ছিল। লো স্কোরিং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সবটুকু বিনোদনই হাজির হয়েছিল গতকাল মিরপুরে। জয়ের জন্য ৮ ওভারে দরকার ৫৪ রান। উইকেটে ডোয়াইন ব্রাভো ও শোয়েব মালিক। এরপর নামবেন জস বাটলার। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান তো রয়েছেনই। এমন ম্যাচে হেসেখেলেই জেতার কথা কুমিল্লার। কিন্তু সুনীল নারাইনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে একটু উত্তেজনা আনলেন ব্রাভো। মালিক ও বাটলারের ‘ধীর-স্থির’ ব্যাটও অবদান রাখল কিছুটা। মোহাম্মদ আমিরকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড বাটলার। ১১ বলে কোনো বাউন্ডারি নেই বাটলারের- ভাবা যায়!
সাইফউদ্দিন নামলেন, চার মারলেন, আউট হলেন! হঠাৎ করেই বিপাকে কুমিল্লা। ২০ বলে ২৬ রান দরকার, হাতে ৪ উইকেট। ম্যাচের চিত্র অনুযায়ী এটাকেই অনেক কঠিন মনে হচ্ছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকা মালিকই দায়িত্ব বুঝে নিলেন। অপরাজিত এক ফিফটিতে ম্যাচ যখন শেষ করে এলেন, তখনো ২ বল বাকি। এ ম্যাচ শেষ বলে না গড়ানোটা যেন মানাচ্ছে না। এমন নাটকীয়তার ম্যাচ শেষ বলেই মীমাংসা হওয়া দরকার ছিল।
কেমন ‘নাটকীয়তা’, একটু খুলে বলা যাক। টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন সাকিব আল হাসান। এবারের বিপিএলে এ কাজ শেষ কবে কে করেছেন মনে করা যাচ্ছে না। ফর্মের চূড়ান্তে থাকা শহীদ আফ্রিদিকে বসিয়েই রাখাই হলো। এর মধ্যে হাসান আলী দ্বিতীয় ওভারে দুই উইকেট ফেলে দিলেন। তারপরও ১৩ ওভারের মধ্যেই ১০০ পেরিয়ে গেল ঢাকা। এর কারণ সুনীল নারাইন। তিনি ৪৫ বলে ৭৬ রানের এক ঝড় তুলেছিলেন। তার সঙ্গী কুমার সাঙ্গাকারা। তবে সাঙ্গাকারার ইনিংসকে ঝড়টড় উপাধি দেওয়া যাচ্ছে না। ৩০ বলে ২৮ রান করে সাঙ্গা আউট হতেই ঝামেলার শুরু। ১৩তম ওভারে ২ উইকেটে ১০৪ রান করা দলটিই কিনা ১৯তম ওভারের মধ্যেই অলআউট! ১৪ রানে শেষ ৭ উইকেট পড়েছে ঢাকার। দলের অন্য কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
বিপিএল ইতিহাসে অষ্টম বোলার হিসেবে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব অর্জন করলেন। যার সবকয়টি উইকেটই তার ঝুলিতে যুক্ত হয় কোন ফিল্ডারেরে সহযোগিতা ছাড়া অর্থাৎ সরাসরি বোল্ড থেকে। যা বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম। শুধু বিপিএলেই নয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন ঘটনা দেখেছে দ্বিতীয়বার। এর আগে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পথে ব্যাটসম্যানদের বোল্ড করার গৌরব অর্জন করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেন। কাকতালীয়ভাবে রুবেল হোসেন ও হাসান আলীর গড়া এই দুটি অর্জনই রচিত হয়েছে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-এ-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
তবে বিপিএলে এক ইনিংসে ৫ উইকেটের মাইলফলক এটাই প্রথম নয়। হাসান আলীর আগে আরো সাতজন বোলার গড়েছিলেন এমন কীর্তি। তারা হলেন মোহাম্মদ সামি, কেভন কুপার, আল-আমিন হোসেন, থিসারা পেরেরা, আবুল হাসান, তাসকিন আহমেদ এবং আফিফ হোসেন ধ্রæব। ঘটনাক্রম ২০১২ সালে একবার এবং ২০১৫ ও ১৬ সালে ৩ ম্যাচে ঘটেছে পাঁচ উইকেট নেওয়ার ঘটনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।