Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিএনপি-খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয় গয়েশ্বর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিএনপি-খালেদা জিয়াকে ছাড়া এই সরকারের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এই সরকার বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ছাড়াও নির্বাচন করতে পারবেন। আবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন কিংবা নিরপেক্ষ নির্বাচন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব না। এজন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এখন অসম্ভবের তালিকায় আছেন। গতকাল (রোববার) বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
জনগণের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, খালেদা জিয়া আদালত চত্তরে আপনাকে মাফ করেছেন। নেত্রীর কথায় আমরাও হয়তো আপনাকে মাফ করে দেবো। কিন্তু জনগণ আপনাকে মাফ করবে কিনা জানিনা। তবে জনগণ মাফ করতে পারে এজন্য তাদের শর্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া এবং সেই নির্বাচনে আপনি অংশগ্রহণ করে সহযোগিতা করবেন। একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে সহযোগিতা করলে জনগণ আপনাকে ক্ষমা করবে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বয়কট করবে এবং ৩০-৪০টা আসনও পাবেনা এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণের যদি ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করবে। সেজন্য সরকার ও শেখ হাসিনা, সরকারের পৃষ্টপোষক দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিগত দিনে বিএনপির যারা নির্বাচন করেছে সবকয়টাকে জেলে দিয়ে দেন। শুধু নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। বিএনপির ২য় ও ৩য় গ্রেডের প্রার্থীদের সাথে মোকাবেলা করে যদি আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে আপনাদের ফুলের মালা দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনা দেয়া হবে। প্রয়োজনে তালিকা ধরে বলেন কারা কারা নির্বাচন করতে পারবেনা, আমরা করবো না। তবে শুধু তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে আসেন দেখেন কয়টা সিট পান। ৩০-৪০ টা সিট পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। গোপালগঞ্জেও আসন পাওয়া নিয়ে টানাটানি আছে। কারণ আমাদের লড়াই ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়, এ লড়াই জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই। আর এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান।
গয়েশ্বর বলেন, বিএনপি এমন একটি নির্বাচন চায়, যেখানে জনগণ ভোট দেবে। আর সেই ভোটাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নাই, অতীতে তা প্রমাণ হয়েছে। তার অধীনে ভোট হলে ভোটারকে জোর করেও ভোট কেন্দ্রে নেয়া যাবে না। কারণ তারা জানে ভোট দিতে পারবে না। যে ভোটে জনগণ ভোট দিতে পারবে না সেই ভোটে বিএনপি কেন যাবে।
স্বাধীনতার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সবচেয়ে বড় সমাবেশ গত ১২ নভেম্বর বিএনপি করেছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সরকারের বিভিন্ন উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে জনসভা হয়েছে স্বাধীনতার পর ইতোপূর্বে আর কখনও হয়নি। কোন দলই এতো বড় জনসভা করতে পারেনি। যেখানে সরকারি হিসেবেই ৫ লাখ লোক হয়েছে বলে বলা হয়েছে। অন্যদিকে এর পাল্টা সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ মাত্র ৫০ হাজার লোক জমায়েত করেছে। এর মধ্যে পুলিশই ছিল ২০ হাজার। এধরনের একটা সমাবেশ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চীন-মৈত্রীতেই (বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) করতে পারতেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের যতই বলুক যে আমরা কারো সাথে প্রতিযোগিতা করছিনা। জনগণ কিন্তু সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই প্রতিযোগিতার দৃষ্টিতে নিয়ে নিয়েছে। তখন থেকেই জনগণ বলছে আওয়ামী লীগ বিএনপির সমাবেশের চেয়ে বেশি শোডাউন করতে চায়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের শত বাধা-প্রতিবন্ধকতা, গাড়িবন্ধ করে দেয়া পরও বিএনপির জনসভায় মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বত:স্ফূর্ত, আর আওয়ামী লীগ জবরদস্তি নানা কলাকৌশলে মানুষ আনতে পারেনি। গরুজবাই করে খাওয়া দাওয়া করায়ে গাড়িতে তুলছে কিন্তু পথিমধ্যেই গাড়ি খালি হয়ে গেছে। ওইদিন পিজি থেকে মৎসভবন পর্যন্ত সড়ক বন্ধ ছিল, রমনার গেইট বন্ধ ছিল। বন্ধ করে দিয়েছিল কারণ খোলা রাখলে তো আরও বেইজ্জতি যদি লোক না আসে। এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে সরকারের গণধ্বস নেমেছে, তাদের দাঁড়ানোর মতো পায়ের তলায় মাটি নাই।
বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপির জনসভায় শুধু নেতাকর্মীরা যায়নি। ঢাকা শহরে যদি ৫ লাখ বিএনপির নেতাকর্মী থাকতো তাহলে শেখ হাসিনা এতোদিন কিভাবে ক্ষমতায় থাকে। সাধারণ মানুষ উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনাকে না বলেছে। তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা পালাবার জায়গা পাবেন না মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, গোটা দেশটাই এখন একটা কারাগারে পরিণত হয়েছে। সেখানে ছোট একটা কারাগারে যেতে এতো ভয় কিসের। সেখানে তো আরও ভালো, গুলির ভয় নেই, অপমান অপদস্ত হওয়ার ভয় নেই, যানজটে পড়া, দুর্ঘটনায় পড়ার ভয় থাকে না। সুতরাং জেলের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নাই। জেলের ভাত আমরা আগেও খেয়েছি প্রয়োজনে আবারও খাবো। কিন্তু ভবিষ্যতে আপনাদের ভাগ্যে জেলখানা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ হবে কিনা এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। জেলখানা যাওয়ার সৌভাগ্য লাগে সেটা আছে কিনা ভেবে দেখেন। দেশ ত্যাগ করার চিন্তা করছেন, সেটা করতে পারেন কিনা। যাতে দেশে থাকতে পারেন, জেলখানা পর্যন্ত যেতে পারেন, বিচারের মুখোমুখী হতে পারেন সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি রাখেন।
সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে ও সভাপতি সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির নেতা আহসান হাবীব লিংকন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবু নাসের রহমতুল্লাহ প্রমুখ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গয়েশ্বর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ