Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঠিক সময়ে ছাত্রলীগকে সম্মেলনের নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের

আ’লীগে কিছু সমস্যা আছে, সমাধানে কাজ চলছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ট্রাফিক জ্যাম কমাতে সঠিক সময়ে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রলীগের সম্মেলন দু’বছর পরপর। দুই বছর পর সম্মেলন হলে আজকের নেতৃত্বে যে ট্রাফিক জ্যাম এটা হতো না। আরো এক সেট লিডারশিপ বেরিয়ে আসত। আমি আজকে একটাই নির্দেশনা দেবো যেন সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল বুধবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর নির্ধারিত থাকলেও গত কয়েকটি সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে চার থেকে পাঁচ বছর পর। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে মেয়াদ পূর্ণ হয়ে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি।
ছাত্রলীগের নতুন সাংগঠনিক জেলা ঘোষণার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ অনেক বড় জেলা শাখা। এটার কোথায় কেরানীগঞ্জ আবার কোথায় ধামরাই। এটা একার পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া যায় না। তাই এটাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ঢাকা জেলা উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত কমিটি দেয়া হবে। সে জন্যই ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত সঠিক।
বঙ্গবন্ধুর সংগঠনে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর সংগঠন। ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার সংগঠন। এই ছাত্রলীগে ভাগাভাগি চলবে না। যোগ্যরাই হবে এই সংগঠনের নেতা।
অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নেতাদের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গুটিকয়েক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বদনামের কারণে গোটা ছাত্রলীগের বদনাম হতে পারে না। গুটিকয়েকের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ সরকার নিতে পারে না। তারা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী।
তিনি বলেন, সরকারের বিশাল উন্নয়ন অর্জনকে আমরা কি ঢেকে দিতে পারি? ইলেকশনের মাত্র এক বছর বাকি। অনুপ্রবেশকারীদের দলে থাকার দরকার নেই। চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক শক্তির ছাত্রলীগে কোনো প্রয়োজন নেই।
ছাত্রলীগের এই ঢাকা জেলা শাখার সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, আজকাল একটা জিনিস ফ্যাশনেবল হয়ে গেছে, সুশীলসমাজকে বলতে শুনি, টকশোতে বলতে শুনি এবং আমাদের নিজেদের মধ্যে অনেক লোকজনও কথাটা বলে। কথাটি হচ্ছে যদি ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হয়, নিরপক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ জিততে পারবে না। এ কথাটার প্রতিবাদ করতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনে সব সময় আওয়ামী লীগ জিতবে, জিতে এসেছে, কারচুপির মাধ্যমে জিতে বিএনপি। আমি ২০০১ সালে নির্বাচন করেছি, আমার ব্যালটপেপার রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছে। যদি নির্বাচনটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হয় হানড্রেট পারসেন্ট ( ১০০%) আওয়ামী লীগ জিতে যাবে। এ কথাগুলো বলা হচ্ছে এ জন্য যে, তারাই একটা ষড়ষন্ত্র করছে, সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে যেন ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হয়।
শিল্পপতি সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, তাহলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে আসবে। শুধু ছাত্রলীগের বেলায় নয়, আওয়ামী লীগের মধ্যেও ঐক্য খুবই দরকার।
ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকরামুল নবী ইমুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুল মান্নান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন রাজিব প্রমুখ।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ব্ল্যাকমেলিং বক্তব্য দিচ্ছে
এদিকে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আরেক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ব্ল্যাকমেইলিং বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি বলেন, বিএনপি জানে সরকার বা শেখ হাসিনার অধীনে নয়, ইসির অধীনে নির্বাচন হবে। এ বিষয়টি তারা অবগত। তারপরও ব্ল্যাকমেইলিং বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে তারা। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং বক্তব্য দেয় বিএনপিও একই ধরনের বক্তব্য দেয়। তারা একেকবার একেক রকম বক্তব্য দেয়।
৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নেতা শামসুজ্জামান দুদু। এ বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জানে শেখ হাসিনা বা সরকারের অধীনে নয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারপরও তারা ব্ল্যাকমেইলিং বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এখানে তারা কেন ভনিতা করে? ইচ্ছা করে তারা ভনিতা করছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেভাবেই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, স্বাধীন হয় সে ব্যাপারে সহায়তা করবে শুধু নির্বাচনকালীন সরকার। কোনো মেজর কাজ করবে না ঐ সময়। সবকিছু থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের অধীনে কোনো কিছু থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনও থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, এক সময় তাদের দাবি ছিল তত্ত¡াবধায়ক। এখন আবার বলে সহায়ক সরকার। তারা কার কাছে এই দাবি জানায়? তারা ইসিকে বলে সহায়ক সরকারের কথা। ইসি এখানে কি করবে? পরে আবার বলে ইসি নাকি সরকারকে বুঝাবে। যেনতেন প্রকারে তাদের ক্ষমতায় বসাতে হবে। তা না হলে তারা শান্তি পাবে না।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে সৌজন্যতাবোধ নেই উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা এত কিছুর পরও খালেদা জিয়াকে বেগম জিয়া বলি। আর তারা বলে হাসিনা হাসিনা। এটা আমাদের কষ্ট দেয়। কষ্ট লাগে। কারণ বর্তমানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। যখন তার ছেলে মারা গেলেন প্রধানমন্ত্রী ছুটে গেছেন তাকে সান্ত¦না দিতে। কিন্তু তিনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি এখন সংলাপের কথা বলেন। সংলাপের দরজা তো ঐ দিনই বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের দরজা বন্ধ করে। কিন্তু এখন তারা সংলাপের কথা বলে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ বছর আমরা অনৈক্য বহন করতে পারব না। আওয়ামী লীগের জন্য সমর্থনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু দলের ভেতরে কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধান করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয় হবে।
সাংবাদিকদের একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারাও একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য থাকলে দাবি আদায়ে সহায়তা হবে। আর দুর্বলতা থাকলে অন্য কেউ আঘাত করতে পারবে।
সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড দাবি বিষয়ে কাদের বলেন, তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী সপ্তাহে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেবেন। আগামীকাল তথ্যমন্ত্রী মালিক ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ