পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির বহুল আলোচিত জনসভা ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হয়েছে। এটা সন্দেহাতীতভাবে একটা স্বস্তির ব্যাপার। আদৌ এই জনসভা অনুষ্ঠিত হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পূর্বানুমতি ছাড়া জনসভা অনুষ্ঠান সম্ভব ছিল না। বিএনপি অবশ্য জনসভা অনুষ্ঠানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে মৌখিক অনুমতি প্রধান করা হয়। পরে ২৩টি শর্তে লিখিত অনুমতি দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস থাকার কারণেই সরকার বিএনপির জনসভা করার অনুমতি দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনসভা অনুষ্ঠানে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন এইসঙ্গে এও বলেছিলেন, জনসভা হবে শান্তিপূর্ণ। জনসভা শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। সরকারও অনুমতি দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তবে ওই দিন জনসভা অভিমুখে আসা লোকজনদের যেভাবে পথে পথে বাধা দান করা হয়েছে, অঘোষিত ‘পরিবহন ধর্মঘটের’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেয়নি। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লাসহ রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকে কোনো বাস ঢাকায় আসেনি। ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। লঞ্চ-স্টিমারও চলেনি। ফলে যাত্রীদের মহাদুর্ভোগে পড়তে হয়। রাজধানীতে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাজধানীবাসীরও চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ অবস্থার জন্য সরকারকেই মানুষ দোষারোপ করেছে। এটা না হলে সরকারের ‘সহযোগিতা’ পূর্ণাঙ্গ হতে পারতো, সরকার প্রশংসিত হতো। ভবিষতে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে বলে সবাই আশা করে। নানামুখী বাধা-প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও জনসভায় লোকসমাগম কিন্তু কম হয়নি। পত্রপত্রিকার খবর মোতাবেক, ২টার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লোকে পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সামনে থেকে একদিকে শাহবাগ, আরেকদিকে মৎস্যভবনের আশেপাশের রাস্তা পর্যন্ত ছিল মানুষের ভীড়। অনেকে রমনা পার্কের ভেতরও অবস্থান নেয়। বস্তুত, জনসভা হয়েছে বিশাল। কারো কারো মতে, গোটা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
বিএনপির এ জনসভা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসমর্থন প্রদর্শনের এটা ছিল একটা উপায়। বলা যায়, সে জনসমর্থন দলটি প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছে। ১৯ মাসের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটা ছিল দ্বিতীয় জনসভা। দলের চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর এরকম একটা জনসভা দলটির জন্য প্রয়োজনীয়ও ছিল। সামনে নির্বাচন। সে উপলক্ষে বেগম জিয়া দিকনির্দেশক বক্তব্য রাখবেন, এমন প্রত্যাশা দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের এবং ব্যাপক অর্থে জনগণের মধ্যে সঙ্গতকারণেই ছিল। বেগম জিয়া জনসভায় যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে তিনি সকলের জন্যই একটি বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। বেগম জিয়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। তিনি নির্বাচনের সময় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। ইভিএম চলবে না, সাফ বলে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সঙ্গে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের কথা বলেছেন, তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন। ‘আমাদের রাজনীতি হলো জাতীয় ঐক্যের। সেজন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। আসুন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে বহুমত ও বহুপথ থাকবে। কিন্তুু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এক হতে হবে।’ তিনি ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক দিন জোর করে ক্ষমতায় আছেন। এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে যাচাই করুন দেশের মানুষ কী চায়।’
একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা, গণতন্ত্রের স্বার্থে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হোক, দেশের মানুষ এটাই কামনা করে। জাতিসংঘসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বও সেটা চায়। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন কীভাবে হয়েছে কারোই তা অজানা নেই। দেশে-বিদেশে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ক্ষমতাসীন দলও মনে করে, নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, তিনি কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আগামীতে দেখতে চান না। সরকারও সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। দেখা যাচ্ছে, সরকার ও বিরোধীদলের নির্বাচন প্রসঙ্গে অভিমতের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই, কিন্তু কীভাবে ওইরকম নির্বাচন সম্ভবপর হতে পারে, তা নিয়ে উভয়পক্ষের অবস্থান আলাদা এবং পরস্পরবিরোধীও। দেশের নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠ,ু অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এর নিকৃষ্ঠতম নজির স্থাপিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কীভাবে প্রত্যাশিত নির্বাচন সম্ভবপর হতে পারে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া একান্তভাবেই আবশ্যক। এই সংলাপ-সমঝোতার দুয়ার এখনই খুলতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আয়োজন করবে। আলাপ-আলোচনার বাইরে অন্য কোনো পথে শান্তিপূর্ণভাবে ভিন্নমত ও বিরোধ মীমাংসার কোনো পথ নেই। আমরা বিশ্বাস করি, লক্ষ্য অর্জনের প্রশ্নে দৃঢ় অঙ্গীকার থাকলে কোনো ভিন্নমত ও বিরোধই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমরা সরকার ও বিরোধীদলের আন্তরিক সদিচ্ছা কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।