পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মংলা বন্দর ক্রমেই পূর্ণতা পাচ্ছে। মংলা হবে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর এমন প্রত্যাশা নিয়েই সরকার বাস্তবমুখী রোডম্যাপে অগ্রসর হচ্ছে। উন্নয়নের পথে এখন এই বন্দর। তারই ফসল আমদানি পণ্য খালাসে রেকর্ড গড়েছে মংলা সমুদ্রবন্দর। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় ২৪ ঘণ্টায় খালাস হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিক টন আমদানি পণ্য। ক্ষেত্রবিশেষ একই পরিমাণ পণ্য খালাসে কিং বন্দর চট্টগ্রামে সময় লাগছে এক থেকে দুই সপ্তাহ। ফলে একসময়কার মৃত মংলা বন্দরে এখন জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এ অঞ্চলের অর্থনীতির স্বর্ণ দুয়ার খুলতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখবে।
সূত্রমতে, মংলা বন্দর ব্যবহারে যে সুযোগ রয়েছে তা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। বন্দর এখন প্রস্তুত ভারত নেপাল ও ভুটানের ব্যবহারের অপেক্ষায়। সে লক্ষ্যে অতীতের দৈন্যদশা ঝেড়ে ফেলে ফের চাঙ্গা হচ্ছে মংলা বন্দর। আর তাই সরকার খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত তিন হাজার ৮০১ কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন স্থাপনের প্রকল্পে কাজ জোরেশোরে শুরু করেছে। এ ছাড়া বন্দরের জন্য ড্রেজিং প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকার কাজ অব্যাহত রয়েছে। শিপিং এজেন্ট ও আমদানিকারকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস কাজে ধীরগতি ও নানা বিড়ম্বনার কারণে তারা এখন মংলা বন্দরমুখী হচ্ছেন। আর এ বন্দর ব্যবহারের ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি কমে যাচ্ছে, অর্থের সাশ্রয়ও হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, আমদানি পণ্য খালাস কাজের বর্তমান গতি ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে মংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া পদ্মাসেতু প্রকল্প গ্রহণের অন্যতম যৌক্তিকতা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলার কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মংলা বন্দরের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। সেইক্ষেত্রে মংলা বন্দরকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কারণ, নিশ্চিতভাবেই পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের সাথে সাথেই মংলা বন্দর ব্যবহারে দেশি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী বা ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়বে।
মংলা বন্দরের অর্থ ও হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, এ বন্দরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশি জাহাজের আগমন, পণ্য হ্যান্ডলিং ও বন্দরের আয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মংলা বন্দরে ৬২৩টি বিদেশি জাহাজের আগমন ঘটে। পণ্য হ্যান্ডেলিং হয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। আর অর্জিত মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৭২ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মংলা বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে প্রথম শ্রেণীর পোর্টে উন্নীত হতে হলে বন্দরের চ্যানেলের বছরব্যাপী নাব্যতার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে হবে। জেটির ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরের সার্ভিস দুর্নীতিমুক্ত, আধুনিক ও ডিজিটাল হতে হবে। পোর্টে ক্ষেত্রবিশেষে ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালু করতে হবে। বন্দর অভ্যন্তরেসহ বহির্নোঙ্গরে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বন্দরের সাথে অভ্যন্তরীণ সড়ক, নৌ এবং আকাশপথ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আরো সহজ ও মসৃণ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে খুলনা-মংলা রেললাইন এবং খুলনায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প দু’টি বন্দরের সাথে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দ্রুত এই প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নসহ বন্দরের অবকাঠামো ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা যুগের চাহিদা এবং সামর্থ্যরে সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় তাহলে পদ্মাসেতু এবং মংলা বন্দরের সুফল যুগপৎ বা সমান্তরালভাবে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের ভিত রচনায় কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে শুরু করবে যা’ পদ্মাসেতুর সম্ভাব্যতা জরিপের প্রধান বিষয় ছিল।
সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চল ও বৃহত্তর খুলনার উপক‚লীয় অঞ্চল এখন অনেকটা মংলা বন্দরের উন্নয়নের দিকে চেয়ে আছে। মংলা বন্দরকে ব্যবহারের জন্য নেপাল, ভারত, ভুটান অপেক্ষায় রয়েছে। তারা যাতে বন্দর ব্যবহার করতে পারে তার জন্য কাজ চলছে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে মংলা বন্দরের জৌলুস ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ অঞ্চলের বাণিজ্যের প্রসার ছাড়া অর্থনীতির মেরুদন্ড সোজা রাখা অত্যন্ত দূরূহ মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। উল্লেখ্য, বিগত দিনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, শ্রমিক অসন্তোষ, ঘন ঘন ধর্মঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব, সরকারগুলোর বিমাতাসুলভ আচরণে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাইলফলক ডুবতে বসে। স্বাধীনতার পর খুলনা বাগেরহাটে যে রেল চালু ছিল, তা গত একযুগ আগে বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে খুলনা মংলা রেলের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলায় বন্দরের ভবিষ্যত সকালকে আলোকিত করার ইঙ্গিত বহন করে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের আগমন, পণ্য হ্যান্ডেলিং ও আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মংলা বন্দরকে ঘিরে বর্তমানে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে তাতে আগামীতে এ বন্দর দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি ভ‚মিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের চেয়ে মংলা বন্দরের দূরত্ব কম হওয়া সত্তে¡ও শুধুমাত্র পরিকল্পনা গ্রহণ ও বিগত সরকারগুলোর সদিচ্ছার অভাবে বন্দরটি নানামুখী সঙ্কটে পড়ে। এখনই সময় দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করা। আমাদের লক্ষ্য মংলা বন্দরের উন্নয়ন এবং খুলনাঞ্চলের অর্থনীতির ভাগ্যের পরিবর্তন।
এ ব্যাপারে ‘এমভি মেডিসার্জ স্টা’ জাহাজের খুলনাস্থ লোকাল এজেন্ট ‘ট্রাস্ট শিপিং কোম্পানি’র ফৌরদৌস কবির জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে আসা বাণিজ্যিক জাহাজকে খালাস প্রক্রিয়া শেষ করতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। আর পণ্য খালাস কাজের ধীরগতির কারণে জাহাজ মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিদিন প্রায় ১৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। যার প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে আমদানিকারকরা দ্রুত পণ্য খালাস করতে মংলা বন্দরমুখী হচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।